সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় উত্তাল মুর্শিদাবাদ। প্রাণ গিয়েছে তিনজনের। ভাঙচুর হয়েছে বহু বাড়িঘর-দোকান। জ্বলেছে পুলিশের গাড়ি। মালদহ, নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও সেই ক্ষোভের আঁচ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী চার জেলায় আফস্পা জারি বা সেনাবাহিনীকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হোক, এই মর্মে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি দিয়েছেন পুরুলিয়ার সাংসদ জ্যোর্তিময় সিং মাহাতো। সেই চিঠিতে বাংলায় হিন্দুদের পরিস্থিতির সঙ্গে ১৯৯০ সালে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের গণপলায়নের তুলনা টেনেছেন বিজেপি সাংসদ।

ওয়াকফ সংশোধনী আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অগ্নিগর্ভ মুর্শিদাবাদ। প্রতিবাদের নামে গুন্ডামিতে ভয়াবহ পরিস্থিতি নবাবের জেলায়। শান্তি ফিরিয়ে আনতে হাই কোর্টের নির্দেশে নেমেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। রাতারাতি বিভিন্ন জেলার বাছাই করা পুলিশকর্তা ও কর্মীদের মুর্শিদাবাদ ডেকে পাঠানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলায় ৩৫৫ ধারা, রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবিতে সরব বিজেপি নেতৃত্ব। এই দাবির মাঝেই এবার সীমান্তবর্তী চার জেলায় আফস্পা জারির দাবি তুললেন পুরুলিয়ার বিজেপি সাংসদ।
শাহকে দেওয়া চিঠিতে লেখা হয়েছে, 'গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদেই হিন্দুদের ৮৬টি বাড়ি ও দোকানে লুটপাট করে ধ্বংস করা হয়েছে। খুন হয়েছে দুই সাধারণ মানুষ। তাঁদের পানের বরজেও হামলা করা হয়।' বিজেপি সাংসদের দাবি, 'এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। মালদহ, নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনাতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। এটা তৃণমূলের তোষণ রাজনীতির ফল। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা যে ভেঙে পড়েছে তা ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদী আন্দোলনের ফলে আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। শেষ পর্যন্ত হাই কোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী নেমেছে। এই জেলাগুলিতে হিন্দুদের পরিস্থিতি ১৯৯০ সালের কাশ্মীরি হিন্দুদের গণপলায়নের ইতিহাস মনে করিয়ে দিচ্ছে।' এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে আফস্পা জারির আবেদন জানিয়েছেন জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। এনিয়ে এখনও তৃণমূলের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
আফস্পা কী?
সামরিক বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা বলতে সকল কর্তৃত্বের উপরে বোঝায়। এই আইন জারি হলে যে কোনও ধরনের দমনমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না। যা বাহিনীকে অনেক অবাঞ্ছিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষমতা দেয়। নাগা পাহাড় এবং সংলগ্ন অঞ্চলে বিদ্রোহ মোকাবিলা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুযায়ী অরুণাচল প্রদেশ, অসমম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা এবং জম্মু ও কাশ্মীরে এই আইন প্রয়োগ করা হয়।