shono
Advertisement
Purulia

'সে এক গাঁয়ের বধূর কথা...' কার্তিক সেজে ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান পুরস্কার পুরুলিয়ার সুনীতার

পায়ের তালে দিব্যি ডানা মেলেছিল পৌরুষদীপ্ত বীররসের নাচ।
Published By: Amit Kumar DasPosted: 08:29 PM Nov 24, 2024Updated: 08:29 PM Nov 24, 2024

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: "ছৌ নাচছিস তোর আর বিয়ে হবে না!" এমন অপবাদ- গঞ্জনা নিয়েও কার্তিক সেজে আয়নার সামনে ধামসার আওয়াজে তাল মেলাতেন। ঝুমুর গান করেন ছোট থেকেই। তাই সেই গানে কিভাবে ছৌ বিভঙ্গ তুলে ধরতে হবে তার একটা আলাদা ধারণা ছিল-ই। ছৌ শিল্পীদের দেখে সেইসঙ্গে ইউটিউব চালিয়ে পায়ের তালে দিব্যি ডানা মেলেছিল পৌরুষদীপ্ত বীররসের নাচ। এভাবেই 'ব্যাটা ছেলেদের' নাচ রপ্ত করে ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান যুব পুরস্কার জিতে নিলেন পুরুলিয়ার অজপাড়া গাঁয়ের বধূ সুনীতা মাহাতো। সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমির এই জাতীয় পুরস্কারে তিনি বাংলার নামই উজ্জ্বল করলেন।

Advertisement

২০১৭ সাল থেকে সুনীতা রাজ্যের লোকপ্রসার প্রকল্পের আওতাভুক্ত একজন লোক শিল্পী। যিনি ফি মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা ছাড়াও প্রত্যেকটি সরকারি অনুষ্ঠান হাজার টাকা করে পান। তাঁর জাতীয় সম্মানে খুশি রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ। পুরুলিয়া তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের আধিকারিক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, "ওই মহিলা ছৌ শিল্পীর জাতীয় সম্মানে রাজ্যের ফ্ল্যাগশিপ লোকপ্রসার প্রকল্পকেই কেন্দ্র স্বীকৃতি দিল। এটা আমাদের কাছে গর্বের, সম্মানের।"

শুক্রবার দিল্লিতে ড.ভীমরাও আম্বেদকর ভবনে বছর ৩০-র ওই মহিলা ছৌ শিল্পীকে এই সম্মাননা প্রদান করে সংস্কৃতি মন্ত্রকের অধীনে থাকা সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি। এই জাতীয় সম্মানে তিনি ২৫ হাজার টাকা পুরস্কার পান। কোনও মহিলা ছৌ শিল্পী হিসেবে এই পুরস্কার প্রথম। তাঁর পরিবারে সেভাবে কোনওদিন আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল না। বাবা মুরুলীধর মাহাতো ছৌ নাচতেন। এখন বয়স হওয়ায় আর সেভাবে নাচেন না। সুনীতার মাতঙ্গিনী হাজরা মহিলা ছৌ দলের তিনি ম্যানেজার। তবে এই দলের ওস্তাদ সুনীতা নিজেই। সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে বড় হয়ে ওঠা সুনীতা ষষ্ঠ শ্রেণী থেকেই ঝুমুর গাইতেন। এই সময়ই তাঁর বাবার তত্ত্বাবধানে মানভূম ঝুমুর মহিলা দল গড়ে ওঠে। সেখানকার বাদ্যযন্ত্র শিল্পীদের হাত ধরেই এই শিল্পে উত্তরণ সুনীতার। তাঁর কথায়, "ধামসার আওয়াজ শুনলেই পাটা যেন কেঁপে উঠতো। দূর থেকে ছৌ নাচ দেখে নাচতে মন চাইত। তারপর একদিন আয়নার সামনে নাচ শুরু করি। এই নাচের জন্য পাড়া-পড়শিরা কম অপবাদ দেননি। বলতেন, ছৌ নাচলে আর বিয়ে হবে না! পুরুষের নাচ তোরা কি আদৌ পারবি, এমন কত কি!"

কিন্তু দমে যাননি সুনীতা। ২০১৭ সালে বাবার তত্ত্বাবধানে মহিলা ছৌ দল গড়ে তোলেন। ২০১৯-এ টামনা থানার পুড়রু গ্রামে তাঁর বিয়ে হলেও এই শিল্পকলাকে ছাড়তে পারেননি। পুরুলিয়া মফস্বল থানার বোঙ্গাবাড়িতে বাপের বাড়ি থেকে যেমন সাহায্য পেয়েছেন। তেমনই চাষাবাদের কাজে যুক্ত থাকা স্বামী রঞ্জিত মাহাতো সব সময় তাঁকে উৎসাহ দিয়ে গিয়েছেন। স্বামীর হাত ধরেই তিনি এখন দিল্লিতে। ২১ নভেম্বর দিল্লি পৌঁছে ২২ তারিখ শুক্রবার এই পুরস্কার নেন। আজ রবিবার রাতে সঙ্গীত নাটক আকাদেমির অনুষ্ঠানে তাঁর মহিলা ছৌ দল 'মহিষাসুরমর্দিনী' পালা পরিবেশন করবে। তাই ৮ মাসের কোলের মেয়েকে নিয়েই ওই অনুষ্ঠানের মহড়া চলছে তাঁর। সুনীতা তাঁর দলের ওস্তাদ হওয়ায় ওই পালা যেমন তাঁকে সামলাতে হচ্ছে, তেমনি সুদূর পুরুলিয়ার গ্রামের ঘরেও খোঁজ রাখতে হচ্ছে। সেখানে যে তার ৩ বছরের আরেক মেয়ে রয়েছে। এভাবেই সংসার সামলে বীররসের ছৌ-কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সুনীতা। জাতীয় পুরস্কার পেয়েও থামেনি তাঁর লড়াই।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • কার্তিক সেজে ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খান পুরস্কার জিতলেন পুরুলিয়ার ছৌ শিল্পী সুনীতা।
  • রাজ্যের লোকপ্রসার প্রকল্পের শিল্পী সুনীতা মাহাতো।
  • সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমির এই জাতীয় পুরস্কারে বাংলার নাম উজ্জ্বল করলেন পুরুলিয়ার গাঁয়ের বধূ।
Advertisement