দেব গোস্বামী, বোলপুর: রামনবমী ঘিরে চলতি বছর বীরভূমে শাসকদলে ভিন্ন ছবি। ছাব্বিশের আগে লাল মাটির জেলায় গেরুয়া শিবিরকে টেক্কা দিতে দফায় দফায় মিছিল করল শাসক শিবির। সকালে সিউড়িতে তারকা সাংসদ শতাব্দী রায়ের নেতৃত্বে মিছিল শুরু হয়েছিল। শেষ হল সন্ধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডলের মিছিল দিয়ে। মাঝে দুপুরে ত্রিশূল হাতে কসবা এলাকার এক মন্দিরের কাছে দেখা গেল জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূল নেতা কাজল শেখকে। তার কয়েকঘণ্টা পর বোলপুরে মিছিলে বেরিয়ে অনুব্রত বললেন, ''যে কৃষ্ণ সে-ই রাম। রাম আমাদের সবার। রামনবমীতে সবাই শান্তিতে থাকুন।'' এবছর বীরভূম জেলায় রামনবমীর অনেক মিছিল হয়েছে, তবে একটিতেও অশান্তি হয়নি, তা উল্লেখ করে পুলিশ প্রশাসন ও সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ জানালেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি।
বোলপুরে রামনবমীর মিছিলে অনুব্রত।
রবিবার রাজ্যজুড়ে ছোট, বড় মিছিল, শোভাযাত্রা, অস্ত্র নিয়ে কসরৎ, লাঠিখেলা - এসব ছবিই উঠে এসেছে। এসবই রামনবমী উদযাপনের অনুষঙ্গ। আশঙ্কা ছিল, এই উৎসব ঘিরে অশান্তি ছড়াতে পারে। তা রুখতে আগাম ব্যবস্থাও নিয়েছিল পুলিশ। তাতেই সাফল্য মিলেছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত কোথাও কোনও গোলমালের খবর মেলেনি। বিভিন্ন জেলাতেই অস্ত্র হাতে মিছিল করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। পালটা তৃণমূলের শোভাযাত্রাও হয়েছে। তবে শান্তিপূর্ণই হয়েছে। এর মাঝে বিশেষভাবে নজর কাড়ল বীরভূমের ছবি। রবিবার দুপুরে বোলপুরের কাছে কসবার এক মন্দিরে রামনবমীর মিছিলে যোগ দেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ। তাঁকে ত্রিশূল উপহার দেয় মন্দির কর্তৃপক্ষ। তা হাতে নিয়েই মিছিলে হাঁটেন তিনি। এনিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই কাজলের জবাব, ''উৎসব সবার, তাই আমিও রামনবমীতে যোগ দিলাম। মন্দির থেকে আমাকে এই ত্রিশূল উপহার দেওয়া হয়েছে। তাই আমি তা হাতে নিয়েছি।'' এদিন মন্দিরে ভোগ খাওয়ানো হয়। তা নিজে হাতে পরিবেশন করেন কাজল শেখ।
এসবের মাঝে কোথায় জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল? এই প্রশ্ন উঠতেই জানা যায়, তিনি নাকি ঘরবন্দি। কিন্তু দুপুর গড়াতেই তাঁকে দেখা গেল বোলপুরের পার্টি অফিসে। আরও পরে দেখা গেল, অনুব্রত নেতৃত্বে মিছিল হাঁটছে পার্টি অফিস থেকে বোলপুরের চৌরাস্তা পর্যন্ত। সঙ্গী বোলপুরের তৃণমূল সাংসদ অসিত মাল, মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, কোর কমিটির সদস্য সুদীপ্ত ঘোষ, বোলপুর পুরসভার চেয়ারপার্সন পর্ণা ঘোষ। অনুব্রতর বক্তব্য, 'যে কৃষ্ণ সে-ই রাম'। কাজল শেখের হাতে ত্রিশূল প্রসঙ্গ এড়িয়ে বললেন, ''আমি এসব জানি না। তবে সারা জেলায় খুব ভালোভাবে মিছিল হয়েছে। কোথাও অশান্তি হয়নি।'' আর শেষবেলায় জেলা তৃণমূল সভাপতির এই মিছিলেই স্পষ্ট, কোথাও অশান্তির আঁচ যাতে ছড়াতে না পারে, 'ঘরবন্দি' হয়েও সারাদিন সেদিকে নজর রেখেছিলেন তিনি।