shono
Advertisement

মাত্র ৪০০ টাকা ভাড়ায় মিলছে নাইন এমএম পিস্তল

লোকসভা ভোটের আগে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসার বাড়বাড়ন্তে চিন্তা বেড়েছে প্রশাসনের। The post মাত্র ৪০০ টাকা ভাড়ায় মিলছে নাইন এমএম পিস্তল appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 09:10 AM Apr 06, 2019Updated: 08:31 AM May 21, 2020

কলহার মুখোপাধ্যায়, কোচবিহার :নাইন এম এম মিলবে?” “মিলবে। কিনবেন, না ভাড়ায়?” “ভাড়া কত?” “নিয়ে যান, চারশো দেবেন।” “টোটা?” “পাঁচটা নিলে ১৫ টাকা করে পার পিস। ফেরত দিলে টাকা রিটার্ন পাবেন। ‘বাজলে’ ১৫০ টাকা দেবেন। মাল ঠিকঠাক রিটার্ন চাই। ড্যামেজ করবেন না। দাদা বললেন তাই, না হলে যাকে তাকে মাল দিই না।”

Advertisement

কোচবিহারের ওখলাবাড়ির সীমান্ত ঘেঁষা একটি গ্রাম। সন্ধ্যাবেলার বাজার বসেছে। একটি লটারির দোকান। তার সামনে খয়েরি রংয়ের প্যান্ট ও হলুদ গেঞ্জি পরা একজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি প্লাস্টিকের টুলে বসে। তার সঙ্গে কথোপকথন চলছে এক প্রৌঢ়ের। সেই কথাবার্তারই হুবহু চিত্রটা তুলে দেওয়া হল এখানে।

[আরও পড়ুন-মিমির হুঁশিয়ারিতে ক্ষোভ, আরাবুলের গাড়িতে হামলা জমি আন্দোলন কমিটির সদস্যদের]

সম্প্রতি কোচবিহারের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে আগ্নেয়াস্ত্রের রমরমা কারবার ঘুম ছুটিয়েছে পুলিশের। কোথা থেকে আসছে এই অস্ত্র? কেনই বা কোচবিহারে এর রমরমা বাড়ছে তা জানতে জেলার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাণ হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। সে চিত্র দেখানোর আগে পুলিশ সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, অস্ত্র উদ্ধার ও এই চোরাকারবারে জড়িত দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তারির পরিসংখ্যানে নজর রাখা যাক।

[আরও পড়ুন- ‘আমি এখনও গায়ক,পুরোপুরি নেতা হতে পারিনি’, স্বীকারোক্তি বাবুল সুপ্রিয়র]

সূত্র মারফত পাওয়া খবরে জানা গিয়েছে, গত একবছরে কোচবিহার জেলা থেকে বেআইনি অস্ত্র চোরাকারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৬৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নাইন এম এম-এর মতো আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র-সহ দেশি পিস্তল ও কার্বাইন উদ্ধার হয়েছে ৩৭৬টি। তবে পুলিশেরই একাংশের অভিমত, এই সংখ্যাটা স্রেফ ‘টিপ অফ দি আইসবার্গ’। অস্ত্র উদ্ধারের এই সংখ্যাটা হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এর কয়েকশো গুণ অস্ত্র অপেক্ষা করছে জেলায়, ঠিক সময়ে আত্মপ্রকাশ করবে। গত কয়েকমাসে ১৯টি গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে জেলায়। ডিসেম্বর মাসে ভাওয়াগুড়িতে এক ব্যবসায়ীকে এবং ফেব্রুয়ারিতে টাকাগছ এলাকায় এক মাংস কারবারিকে গুলি চালিয়ে খুন করা হয়েছে ভাড়ার বন্দুক দিয়েই। আবার ফেব্রুয়ারিতেই এই চক্রের এক কিং পিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে মালদহ থেকে চোরাপথে অস্ত্র নিয়ে এসে এখানে সাপ্লাই দিত বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।

[আরও পড়ুন- সতীপীঠের প্রসাদী ফুল নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন শতাব্দী রায়]

এই প্রসঙ্গে কোচবিহারের কয়েকটি ঘটনায় চোখ রাখা যাক। ঘটনা এক, সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপুরপ্রধানের স্বামীর একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শোরগোল ফেলে দেয়। জনপ্রতিনিধির স্বামী একটি কার্বাইন হাতে দাঁড়িয়ে ক্যামেরার সামনে পোস্ট দিয়েছিলেন। ঘটনা দুই, তার কিছুদিন পরে সিতাইয়ের কাছে ছাপা মেরে এলাকার এক তাবড় নেতার গাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ বোমা বানানোর উপকরণ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনা তিন, এক জনপ্রতিনিধি স্বয়ং বন্দুক হাতে আকাশের দিকে তাক করা ছবি পোস্ট করেন। যা নিয়ে তুমুল বিতর্ক দানা বাঁধে। পরে প্রতিনিধির অনুগামীরা বলেন, আসলে ওটি ছিল একটি এয়ারগান। জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা কথা প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন, জেলার বিভিন্ন পকেটে একে ৪৭ জাতীয় আগ্নেয়াস্ত্র মজুত আছে। তদন্তকারীদের অনুমান, উত্তর-পূর্বের জঙ্গি সংগঠনগুলির কাছ থেকে এই অস্ত্র আমদানি করা হচ্ছে।

[আরও পড়ুন- কটূক্তি বাদ দিয়ে উন্নয়নের নিরিখে হোক ভোট, প্রচারে ফের সৌজন্য বার্তা দেবের]

তবে জেলা ঘুরতে ঘুরতে এটা স্পষ্ট যে, জঙ্গি সংগঠন শুধু নয়, অস্ত্র কারবারিদের হাতে বন্দুক আসার আরও কয়েকটি পথ আছে। স্থানীয় সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, মূলত বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা এলাকাগুলিতে অস্ত্রের রমরমা কারবার ফুলে ফেঁপে উঠেছে। গীতালদহ, ওখড়াবাড়ি, সিতাই ও ভেটাগুড়ি, দিনহাটা ও মাথাভাঙা মহকুমা অঞ্চলে এই কারবার ঘাপটি মেরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। মূলত ‘মুঙ্গের মেড‘ এই অস্ত্র বিহার থেকে রায়গঞ্জ-হিলি সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে ঢোকে। তারপর কোচবিহারের দিনহাটা, মাথাভাঙা ও মেখলিগঞ্জ বর্ডার দিয়ে ফের পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করছে। যা ছড়িয়ে পড়ছে জেলার সর্বত্র। কোচবিহারে প্রধানত মাল বোঝাই ট্রাকে, বিশেষ করে সবজির গাড়িতে নিয়ে আসা হচ্ছে অস্ত্র। এমনকী যাত্রীবাহী গাড়িতেও চোরাচালান করা হচ্ছে নাইন এমএম। এইসব যাত্রীবাহী গাড়ি ঘুঘুমারি চেকপোস্ট হয়ে ঢুকছে অস্ত্র সমেত। চমকে দেওয়ার মতো আরও একটি খবর রয়েছে।

[আরও পড়ুন-ভোটের মুখে রদবদল, সরানো হল কলকাতা এবং বিধাননগরের পুলিশ কমিশনারকে]

পুলিশের একাংশের অনুমান, এত সংখ্যক অস্ত্র শুধু চোরাচালানের মাধ্যমে আসতে পারে না। এই জেলারই কোথাও কোথাও কাঁচামাল এনে বন্দুক তৈরি হচ্ছে। মুঙ্গের থেকে প্রশিক্ষিত কর্মীদের তত্ত্বাবধানে এই জেলাতেই চলছে বন্দুক তৈরির কারখানা। তবে এখনও পর্যন্ত সেরকম কারখানার খোঁজ পায়নি পুলিশ। তবে জোর তল্লাশি চলছে। কিছুদিন আগে জেলার পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন, শক্ত হাতে বেআইনি অস্ত্র কারবার রুখবে পুলিশ। এর জন্য একটি টাস্ক ফোর্স গঠনেরও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সুপার। পুলিশ সূত্রে খবর, কোতোয়ালি ও পুন্ডিবাড়ি থানা যৌথভাবে একটি টিম তৈরি করে অস্ত্র কারখানার খোঁজ চালাচ্ছে। নির্বাচনের আগে বেআইনি ভাড়ার বন্দুকের উদ্যত নল চিন্তায় ফেলেছে পুলিশকে। নির্বিঘ্নে ভোট প্রক্রিয়া সুসম্পন্ন করাটাও প্রশাসনের কাছে তাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

The post মাত্র ৪০০ টাকা ভাড়ায় মিলছে নাইন এমএম পিস্তল appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement