shono
Advertisement
RSS

বঙ্গ বিজেপিতে ক্ষুব্ধ সংঘ, 'শিকড়' মনে করিয়ে প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি! তৃণমূল বলছে, 'শুভেন্দুকে লালকার্ড'

ভোটের আগে প্রবল হচ্ছে বিজেপি-সংঘের অন্দরের লড়াই।
Published By: Subhajit MandalPosted: 04:05 PM Nov 29, 2025Updated: 07:42 PM Nov 29, 2025

ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ও রমেন দাস: বঙ্গ বিজেপিতে 'তৎকাল' নেতাদের বাড়বাড়ন্তে কি বিরক্ত আরএসএস? শিকড় উপেক্ষা করে ইদানিং বিজেপির রাশ যেভাবে নব্য নেতাদের হাতে চলে যাওয়া, এবং পুরনো কর্মীদের উপেক্ষা করার যে অভিযোগ উঠছে, তাতে কি ক্ষুব্ধ সংঘ? অন্তত আরএসএসের ইংরাজি মুখপাত্র 'অর্গানাইজার'-এর সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। ওই নিবন্ধে নাম না করে শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদারদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, যে বঙ্গ বিজেপির আজকের যে সাংগঠনিক শক্তি সেটার কৃতিত্ব একেবারেই শুধু নব্য বিজেপি নেতাদের নয়। এটার ভিত স্থাপন হয়েছে সেই জনসংঘের আমলে এবং আরএসএসের হাত ধরেই।

Advertisement

এ কথা সত্যি যে ২০১৪ সালে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গে বিজেপির অঙ্কুরিত চারাগাছ ফুলে-ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে। একসময়ের জনপ্রতিনিধিহীন দল এখন রাজ্যের প্রধান বিরোধী শক্তি। কিন্তু সেটার মানে একেবারেই এমন নয় যে, বিজেপির এই বাড়বাড়ন্তের কৃতিত্ব শুধু নব্য নেতাদের। সেটাই মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে অর্গানাইজারের নিবন্ধে। বলা হয়েছে, "আজকের বাংলায় রাজনৈতিক মেরুকরণ তীব্র আকার নিয়েছে। তৃণমূল ও বিজেপির রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ছে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, বঙ্গে বিজেপির শিকড় কিন্তু যতটা মনে করা হয়, তার চেয়ে অনেক গভীর এবং অনেক প্রাচীন।"

ওই নিবন্ধে বঙ্গ বিজেপির কিছু মহীরুহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কীভাবে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এই কলকাতায় দাঁড়িয়ে গোটা দেশে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বীজ বপন করেছিলেন। যে মেদিনীপুরকে আজ শুভেন্দু অধিকারী নিজের 'গড়' হিসাবে পরিচয় দেন, সেখানেও সেই পাঁচের দশকে দাপিয়ে জনসংঘের সংগঠন করে গিয়েছেন দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝাড়গ্রামের মতো আসন থেকে সাংসদও হয়েছেন তিনি। আচার্য দেবপ্রসাদ ঘোষের মতো নেতা, যিনি কিনা জনসংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি হয়েছিলেন, তাঁর সংগঠনের ভিত্তিও ছিল বাংলা। হরিপদ ভারতী, তপন শিকদার, বিজয় কুমার মণ্ডলের মতো নেতাদের অবদানের কথাও তুলে ধরা হয়েছে সংঘের ওই নিবন্ধে। যার সারমর্ম একটাই, "বাংলায় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠার বহু আগে থেকেই বিজেপির বহু নেতা আদর্শের ভিত্তিতে বঙ্গে দলের ভিত স্থাপন করেছেন।"

প্রশ্ন হল, হঠাৎ আরএসএস মুখপত্রের নিবন্ধে বঙ্গে দলের অতীত ইতিহাস মনে করানোর দরকারটা হল কেন? এটা কি প্রচ্ছন্নে রাজ্যের অধুনা নেতাদের বার্তা? নাকি 'স্বনির্ভরতা'র দাবি করা বিজেপিকে সার্বিকভাবেই বুঝিয়ে দেওয়া যে আরএসএসের সাহায্য ছাড়া বঙ্গে শক্তিবৃদ্ধি সম্ভব নয়? মনে রাখা দরকার, বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা লোকসভা নির্বাচনের আগেই দাবি করেছিলেন, "যে বিজেপি এখন অনেকাংশে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দলের দৈনন্দিন কার্যকলাপে সংঘের হস্তক্ষেপ অপ্রয়োজনীয়।" কিন্তু লোকসভার ফলে বোঝা গিয়েছে, বাংলা তথা গোটা দেশেই আরএসএসের গুরুত্ব কতটা। রাজনৈতিক মহলের মতে, যে সব নেতারা রাজ্যে বিজেপির শক্তিবৃদ্ধির যাবতীয় কৃতিত্ব নিজেদের বলে দাবি করেন, তাঁদের সংঘ বুঝিয়ে দিল যে দলটার শিকড় অনেক গভীরে। প্রশ্ন উঠছে, সংঘের এই বার্তা কি সরাসরি নব্য নেতাদের উদ্দেশে, নাকি তাঁদের রাশ যাঁদের হাতে, সেই সব নেতাদেরও? অন্তত তৃণমূল এটাকে সরাসরি শুভেন্দু অধিকারীদের উদ্দেশে কড়া বার্তা বলেই মনে করছে। দলের অন্যতম মুখপাত্র অরূপ চক্রবর্তী বলছেন, "এটা শুভেন্দু অধিকারীকে কার্যত রেড কার্ড দেখানো। শুভেন্দুর দলের মধ্যে ছড়ি ঘোরানোটা দলের পুরনো নেতারাও ভালোভাবে দেখছিলেন না। আজকে আরএসএসের এই মন্তব্য প্রমাণ করে দিল, বিজেপিতে শুভেন্দু অধিকারী আরও কোণঠাসা। আসলে এই মুহূর্তে 'তৎকাল' বিজেপির নেতারা ক্রমশ গুরুত্বহীন হচ্ছেন। তাতেই সিলমোহর দিল আরএসএসের এই বক্তব্য।" আরএসএস যে বিজেপিকে কোথাও একটা প্রচ্ছন্ন শাসানি দিচ্ছে, সেটা মনে করেন সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীও। তিনি বলছেন, "গোটা দেশে আরএসএসের মনোভাব নিয়েই বিজেপি চলে। সেকারণেই ওরা মৌলবাদী। সেকারণেই ওরা সংখ্যালঘু, নমঃশূদ্র-দলিত বিরোধী। তবে বাংলার বিজেপি কতটা বিজেপি আর কতটা তৃণমূল, সেটা বলতে পারব না। তৃণমূলে যাঁদের দমবন্ধ হচ্ছে, তাঁরাই বিজেপিতে যাচ্ছেন। সেজন্য বাংলার বিজেপি আরএসএসের মনোভাবের সঙ্গে ধান্দাবাজির এবং পয়সার রাজনীতি যোগ করেছে। তাই এখানকার বিজেপির মানসিকতা একটু আলাদা।" সুজনের প্রশ্ন, "বিজেপি কি বিজেপির চেয়ে বেশি তৃণমূল হয়ে যাচ্ছে, সেকারণেই কি আরএসএসের সঙ্গে এই ঠান্ডা লড়াই? বা শাসানি?"

কংগ্রেস অবশ্য আরএসএস এবং বিজেপিকে আলাদা করে দেখতে নারাজ। প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক ভট্টাচার্য বলছেন, "RSS- এর রাজনৈতিক শাখা হল BJP। আমাদের কাছে ফর্সা বিজেপি ভালো, কালো বিজেপি খারাপ, বাজপেয়ীর বিজেপি ভালো, মোদির বিজেপি খারাপ কিংবা দিলীপ ঘোষের বিজেপি ভালো, শুভেন্দুর বিজেপি খারাপ - বিষয়টা এমন নয়। আমাদের লড়াই RSS - BJP 'র বিভাজন ও ঘৃণার রাজনীতির বিরুদ্ধে।" বিজেপির আদি নেতারাও অবশ্য দলের অন্দরে কোনওরকম আদি-নব্য বিবাদের তত্ত্ব বা আরএসএস এবং বিজেপির সংগঠনের মধ্যে মতানৈক্যের তত্ত্ব প্রকাশ্যে স্বীকার করছেন না। বিজেপির আদি নেতা হিসাবে পরিচিত বঙ্গে দলের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল সিনহা বলছেন, "দেখুন বিষয়টা হচ্ছে বাড়ির ছাদ তো ভিত থেকেই শুরু হয়। ভিত ছাড়া বাড়ির দেওয়ালও হয় না। ছাদও হয় না। আবার ভিতের যেমন গুরুত্ব আছে, ছাদেরও গুরুত্ব আছে। এখানে সকলের যোগদানেই দল এই স্থানে এসে দাঁড়িয়েছে।"

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • এ কথা সত্যি যে ২০১৪ সালে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গে বিজেপির অঙ্কুরিত চারাগাছ ফুলে-ফলে বৃদ্ধি পেয়েছে।
  • কিন্তু সেটার মানে একেবারেই এমন নয় যে, বিজেপির এই বাড়বাড়ন্তের কৃতিত্ব শুধু নব্য নেতাদের।
  • সেটাই মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে অর্গানাইজারের নিবন্ধে।
Advertisement