সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়,দুর্গাপুর: হাজিরার প্রমাণে প্রযুক্তির ব্যবহার মোটেই মানছে না দুর্গাপুরের শ্রমিক মহল৷ জোর করে চাপিয়ে দেওয়া পদ্ধতির বিরোধিতা করে খাতায় সই করা হাজিরাতেই সম্মতি শ্রমিকদের। সেইলের সমস্ত ইউনিটের হাজিরায় বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হলেও, দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানায় প্রয়োগমূলক ব্যবহারে যথেষ্টই বেগ পেতে হচ্ছে কতৃর্পক্ষকে।
[আরও পড়ুন: বিজেপি কর্মীর মৃত্যু ঘিরে ধুন্ধুমার, অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে থানায় বিক্ষোভ]
আগেও ‘বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স রেকর্ডিং সিস্টেম’ নিয়ে নির্দেশিকা জারি করেছিল ইস্পাত কতৃর্পক্ষ। কিন্তু শ্রমিকদের কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। কারখানার নন–ওয়ার্কস জোনের এক্সিকিউটিভরা বায়োমেট্রিক হাজিরা শুরু করলেও নন–এক্সিকিউটিভরা এই পদ্ধতিতে সাড়া দেননি। গত ২৮ মে ফের নির্দেশিকা জারি করে দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষ। এবার একটু কড়া ধাঁচেরই নির্দেশ দেয় কতৃর্পক্ষ। তা অনুযায়ী প্রথাগত হাজিরা বন্ধ করে শনিবার, জুনের প্রথম দিন থেকে কারখানার নন–ওয়ার্কস জোনের নন–এক্সিকিউটিভদের বায়োমেট্রিক হাজিরা বাধ্যতামূলক করা হল। শুধু তাই নয়, শনিবার থেকেই বায়োমেট্রিক হাজিরা সরাসরি বেতন পদ্ধতির সঙ্গেও লিংক করে দেওয়া হল। আর এতেই সর্বনাশ দেখছে শ্রমিক সংগঠন।
এতদিন বিকল্প হাজিরা পদ্ধতি বহাল থাকায় পাশাপাশি বায়োমেট্রিক হাজিরা নিয়েও আন্দোলন করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু এবার শ্রমিকরা তাঁদের আবেদন আদৌও শুনবে কি না, তা নিয়েই সন্দিহান শ্রমিক সংগঠনগুলি। যদিও এরপরও আশাবাদী তারা। ডিএসপি সিটুর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সৌরভ দত্ত জানান, ‘পুরোটাই বেআইনি নির্দেশিকা। বেতন শ্রমিকের অধিকার। বায়োমেট্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে শ্রমিকের সেই অধিকার জোর করে কাড়তে চাইছে কর্তৃপক্ষ, যা বেআইনি। আমরা সব শ্রমিককে বলেছি, নির্দিষ্ট সময়ে কারখানায় আসতে। নির্দিষ্ট সময়ে বের হতে। এবং কাজও নির্দিষ্ট সময়ে করতে হবে৷ এরপর বেতনের দায়িত্ব কতৃর্পক্ষের। আমরা জানি, কীভাবে সেই বেতন আদায় করে নিতে হয়।’
[আরও পড়ুন: ক্যানসার কাড়ল প্রাণ, প্রয়াত কালিয়াগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক প্রমথনাথ রায়]
শুক্রবারই এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে দুর্গাপুর ইস্পাত কর্তৃপক্ষকে স্মারকলিপি দিয়েছে বিএমএস। সংগঠনের রাজ্য কমিটির এক্সিকিউটিভ সদস্য অরূপ রায় জানান, ‘ন্যাশানাল জয়েন্ট কমিটি অফ স্টিলের বৈঠকের চুক্তি অনুযায়ী এই বায়োমেট্রিক পদ্ধতি লাগু করছে ইস্পাত কতৃর্পক্ষ। আমরা তাতে সই করিনি। আমাদের এই নয়া পদ্ধতিতে হাজিরায় কোনও আপত্তি নেই। ফের এনজিসিএসের বৈঠকে এই নিয়ে ফয়সালা না হওয়া র্পযন্ত এই পদ্ধতি চালু করা যাবে না।’ একই দাবি আইএনটিটিইউসিরও। ডিএসপি আইএনটিটিইউসির সহকারী সাধারণ সম্পাদক স্নেহাশিস ঘোষের কথায়, ‘আগের মতন খাতায় হাজিরা পদ্ধতিই চালু থাকুক। ফাঁকি রোখার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। তবে সেটা বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নয়। এই পদ্ধতির অনেক সমস্যা আছে। আগের সঙ্গে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি চালু হলে তবেই শ্রমিকের সমস্যা বোঝা যাবে। এনজিসিএসের অন্যান্য শর্ত আগে লাগু করতে হবে।’ তবে শ্রমিক সংগঠনগুলির আবেদনে বেতনে ধাক্কা খেতে পারে দেখলেই বায়োমেট্রিক হাজিরা দিতে শুরু করবে শ্রমিকরা। তা আটকানো যাবে কীভাবে? সদুত্তর নেই শ্রমিক সংগঠনগুলির।
ছবি: উদয়ন গুহরায়৷
The post বায়োমেট্রিক হাজিরায় আপত্তি শ্রমিকদের, বিক্ষোভ দুর্গাপুরের ইস্পাত কারখানায় appeared first on Sangbad Pratidin.
