দেব গোস্বামী, বোলপুর: একদিকে জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়। অন্যদিকে হাজার হাজার হস্তশিল্পীদের জীবিকার টানাপোড়েন। আইনি জটলায় প্রশ্নের মুখে শান্তিনিকেতনে সোনাঝুরি হাটের ভবিষ্যৎ। হাট কি ওই এলাকা থেকে সরে যাবে? সেই প্রশ্ন উঠেছে। যদিও হাট ব্যবসায়ীদের একটা অংশ এলাকা থেকে সরে যেতে নারাজ বলে খবর। হাট যেন কোনওভাবেই বন্ধ না হয়, সেই জোরালো দাবি তোলা হচ্ছে।
হাট ব্যবসায়ী ইনসান মল্লিক ও তন্ময় মিত্র দাবি বলেন, "এই হাটকে ঘিরেই বহু স্থানীয় পরিবার জীবিকা পেয়েছে। দেশ-বিদেশের পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ এখন সোনাঝুরি হাট। বনদপ্তরের নিয়ম মেনেই হাট পরিচালনা হয়ে আসছে। কোনওভাবেই হস্তশিল্পীদের এই হাট বন্ধ হতে দেব না।" শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা সুব্রত সেন মজুমদার ও অহনা বিশ্বাস বলেন, "২০০০ সালে স্থানীয় কয়েকজন আদিবাসী শিল্পী আশ্রমকন্যা শ্যামলী খাস্তগীরের উদ্যোগে শনিবারে সপ্তাহে একদিন হাট শুরু করেছিলেন। পরে তা বিশাল আকার নিয়েছে। এখন অনেক বহিরাগত ব্যবসায়ী যুক্ত হয়েছেন। স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি কলকাতা, বর্ধমান, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ থেকে ব্যবসায়ীরা পণ্য এনে বিক্রি করেন।"
আগামী ১৪ নভেম্বর পরিবেশ আদালত এই মামলার রায় দেবে। হস্তশিল্পী ও হাট ব্যবসায়ীদের একরাশ উদ্বেগ মামলার রায় নিয়েই। জঞ্জাল প্লাস্টিকের বেপরোয়া ব্যবহার, অপরিশোধিত তরল বর্জ্য ফেলে রাখা, গাছ কেটে ফেলা-সহ শান্তিনিকেতনের সোনাঝুরি হাট নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই হইচই, উপচে পড়া ভিড় আর দূষণের বিরুদ্ধেই সম্প্রতি পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত একাধিক অভিযোগ তুলে জাতীয় পরিবেশ আদালতের দ্বারস্থ হন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর অভিযোগগুলিকেই কার্যত স্বীকৃতি দিয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও বনদপ্তর আদালতে হলফনামা দাখিল করে।
গত ৭ নভেম্বর, বোলপুরে সিনার্জি বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে রাজ্যের মন্ত্রী তথা বোলপুরের বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিংহ জানান, "পরিবেশ আদালতে ইতিমধ্যেই মামলা চলছে। রাজ্য সরকার বোলপুর সংলগ্ন শিবপুরে বিশ্বক্ষুদ্র বাজারে হস্তশিল্পীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা করছে। সোনাঝুরি হাটের আদলে বিকল্প হাটের পরিকল্পনা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ মতো ভবিষ্যতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।" পরিবেশকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই আপত্তি জানিয়ে আসছেন এই হাট নিয়ে। ২০১৬-১৭ সাল থেকে এই হাট বড় আকার নেয়। অভিযোগ, খাতায়কলমে ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১৮০০। কিন্তু বাস্তবে প্রায় চার হাজারের বেশি ব্যবসায়ী বুধবার বাদ দিয়ে সপ্তাহে ছয় দিন হাটে বসেন বলে অভিযোগ। পাশাপাশি জঞ্জাল, প্লাস্টিকের বেপরোয়া ব্যবহার, অপরিশোধিত তরল বর্জ্য ফেলে রাখা, গাছ কেটে ফেলার ফলেই দূষণ বাড়ছে বলেই অভিযোগ। বোলপুরের বনদপ্তবের কর্মীরা অভিযান চালান মাঝেমধ্যেই। ফের বেনিয়ম শুরু হয় বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানান, "দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ হলফনামায় উল্লেখ করেছে, বনদপ্তরের জমি দখল করে একাধিক রিসর্ট ও হোটেল গড়ে উঠেছে। এগুলোর কোনও দূষণ নিয়ন্ত্রণ ছাড়পত্র নেই।"
