shono
Advertisement
SIR in Bengal

অভিমানে ঘরছাড়া, ৩৭ বছর পর বৃদ্ধকে পরিবারে ফেরাল SIR!

বাড়িজুড়ে সাজসাজ রব।
Published By: Tiyasha SarkarPosted: 09:39 AM Nov 21, 2025Updated: 01:14 PM Nov 21, 2025

স্টাফ রিপোর্টার, পুরুলিয়া: তিন দশক, ৩৭ বছর পর...! মান-অভিমানে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া, তারপর কোনও যোগাযোগ না রাখা বৃদ্ধকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে দিল এসআইআর (SIR in Bengal)। অনেকটা সিনেমার মতোই। ৩৭ বছর আগের সেই যুবক তথা পরিবারের বড় ছেলে বিবেক চক্রবর্তী আজ বৃদ্ধ। আগামী ২৬ নভেম্বর তাঁর বাস্তুবাড়িতে পা রাখবেন তিনি। সেই খবর পেয়ে পুরুলিয়ার (Purulia) রঘুনাথপুর দুই ব্লকের গোবরান্দা গ্রামের চক্রবর্তী পরিবারে একেবারে সাজ সাজ রব। তিন দশকের বেশি সময় পর বড় ছেলে বাড়ি আসছেন। তাই ঘর-দুয়ার সব সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। খুশি পড়শিরাও।

Advertisement

চক্রবর্তী পরিবার।

গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে ২৪৫/৭২ বুথের বিএলও তথা প্রাথমিক শিক্ষক প্রদীপ চক্রবর্তীর হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে 'স্যর' বলে। ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজে প্রদীপবাবু ভীষণ ব্যস্ত থাকায় ওই মেসেজ দেখে পাত্তাই দেননি। গত রবিবার ঠিক সকাল আটটা নাগাদ যখন এই এসআইআরের কাজে বিএলও বেরিয়েছেন সেই সময় তাঁর কাছে ফোন আসে সেই নম্বর থেকে। অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তি নিজের নাম, পরিচয় না দিয়েই ওই বিএলও-কে জিজ্ঞাসা করেন এটা কি গোবরান্দা গ্রাম? আপনি কি বিএলও? উনি সঙ্গে সঙ্গে সম্মতি প্রকাশ করেন। তারপর অন্য প্রান্ত থেকে আবার প্রশ্ন বিবেক চক্রবর্তীকে চেনেন? বিএলও বলেন, কেন? এখানে তো তিনটে বিবেক চক্রবর্তী আছেন। উলটোদিক থেকে ভেসে আসে, "দেবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ছেলে।" চুপ হয়ে যান বিএলও প্রদীপবাবু। কিছুক্ষণ পর বলেন, আপনি কে? উত্তর আসে, "আমি বিবেক চক্রবর্তীর ছেলে।" সঙ্গে সঙ্গে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন প্রদীপবাবু। বলেন, "আমাকে স্যর বলিস না, আমি তোর কাকু হই।" এরপর বেশ কিছুক্ষণ দু'জনই বাকরুদ্ধ। প্রদীপবাবু বলেন, দাদাকে ফোন দে। ৩৭ বছরে আর কোন মান-অভিমান নেই দাদা বিবেক চক্রবর্তী-র। পরিবারের বড় ছেলে ছিলেন যে তিনি। ছোট ভাই প্রদীপের সঙ্গে কথা বলতে বলতে দু'জনের চোখেই জল চলে আসে। ভাই প্রদীপ দাদাকে বলেন, "কবে বাড়ি আসবি? ও প্রান্ত থেকে বিবেক বলেন, শীঘ্রই যাব। কিন্তু ভাই যে নাছোড়বান্দা। বলেন, তারিখ বল। তখন তার বড়দা বিবেক জানিয়ে দেন ২৬ তারিখ। এরপর কাজ সেরে প্রদীপবাবু বাড়ি এসেই পরিবারের সকলকে এ কথা জানান। তারপর তার দাদার পরিবারের সঙ্গে প্রদীপবাবুর পরিবারের সকলের কথা হয়। খুশি যেন উপচে পড়ে ওই চক্রবর্তী পরিবারে।

চক্রবর্তী পরিবার।


সাড়ে তিন দশকেরও বেশি সময় আগে বিবেকবাবু যখন ঘর ছেড়েছিলেন তখন তার বাবা-মা সকলেই ছিলেন। বাবা অনেকদিন আগে মারা গেলেও গত তিন মাস হল মা-ও গত হয়েছেন। একথা শুনে মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায় ঘরছাড়া বড় ছেলের। একটি বেসরকারি সংস্থায় তিনি কাজ করতেন। এখন অবসর নিয়েছেন। দমদমে থাকেন তারা। প্রদীপবাবুর মেয়ে সঙ্গীতা চক্রবর্তী এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। তাঁর কথায়, "জেঠুর সঙ্গে কথা বলেছি। জেঠিমার সঙ্গে কথা হয়েছে। দাদার সঙ্গেও কথা বলেছি। দাদা এখন সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় পড়াশোনা করছে। আমাকে বলেছে ২৬ তারিখ জেঠু আসবে। আমাদের বাড়িতে খুব আনন্দ। ঘর দুয়ার রীতিমতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে সাজানো-গোছানো চলছে। প্রদীপ বাবুর কথায়, "নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে আমার নম্বর নিয়ে ভাইপো ফোন করেছিল। ভাগ্যিস আমি বিএলও হয়েছি। না হলে হয়তো দাদার সঙ্গে কোনওদিন যোগাযোগই হতো না। হয়তো দাদার পরিবার ফোন করতো বিএলওকে। কিন্তু তারপরে যে যোগাযোগ হতো তার তো কোনও নিশ্চয়তা নেই। এসআইআর আমাদেরকে মিলিয়ে দিল।"

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • মান-অভিমানে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া, তারপর কোনও যোগাযোগ না রাখা বৃদ্ধকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে মিলিয়ে দিল এসআইআর।
  • আগামী ২৬ নভেম্বর তাঁর বাস্তুবাড়িতে পা রাখবেন তিনি।
  • সেই খবর পেয়ে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর দুই ব্লকের গোবরান্দা গ্রামের চক্রবর্তী পরিবারে একেবারে সাজ সাজ রব।
Advertisement