অর্ণব দাস, বারাকপুর: রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় খুন ও তৃণমূল নেতাদের উপর হামলার পিছনে বিহার যোগসূত্র উঠে আসছে। এবার বিহারের ভাড়া করা দুষ্কৃতীদের হাতে জগদ্দলের বিধায়ক সোমনাথ শ্যাম খুন হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন খোদ বারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক। আরও খোলসা করে বলেন, অজুর্ন সিং এই ছক করছেন। যখন পার্থ একথা বলছেন পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বিধায়ক। তিনি সম্মতি জানিয়ে বলেন, "অর্জুন সিং ছাড়া আমার কোনও শত্রু নেই। আমাকে নিয়ে প্রাক্তন সাংসদের অসুবিধা হচ্ছে। তাই পথের কাঁটা সরিয়ে দিতে চাইছেন। তবে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি না। পিছুও হটব না।" জবাবে পালটা সরব হয়ে অর্জুন সিং জানিয়েছেন, "মুখ্যমন্ত্রী ওদের, পুলিশ ওদের, তাহলে বিহারের গ্যাং ধরছে না কেন?"
উত্তর বারাকপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সত্যজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর মঙ্গলবার তাঁর বাড়িতে যান পার্থ ও সোমনাথ। পরিবারের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে সাংসদ পার্থ বলেন, "আমার কাছে খবর আছে, সোমনাথ শ্যামকে খুন করার জন্য বিহার থেকে একটি বড় গ্রুপ ভাড়া করা হয়েছে। যদি সোমনাথের মৃত্যু হয় বা কোনও ঘটনা ঘটে তার জন্য অর্জুন সিং দায়ী থাকবে। পরাজিত হওয়ার আক্রোশেই ও (অর্জুন সিং) সোমনাথকে খুন করতে চাইছে। আমি নিজে পুলিশ কমিশনারকে একথা জানিয়েছি। নিরাপত্তার বিষয়টি পুলিশ দেখছে।"
প্রসঙ্গত, ভাটপাড়ায় তৃণমূল নেতা অশোক সাউ খুনের ঘটনার পর থেকেই ফের মাথাচাড়া দিয়েছে অর্জুন বনাম সোমনাথ দ্বন্দ্ব। যদিও, দাদার খুনের বদলা নিতে তৃণমূলের প্রাক্তন ওয়ার্ড সভাপতি খুনে মূল অভিযুক্ত সুজল প্রসাদকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার এ নিয়ে বারাকপুরের পুলিশ কমিশনার জানিয়েছিলেন, মূল অভিযুক্ত প্রথমে বিহারে পালিয়েছিল। সেখান থেকে বর্ধমান রেলস্টেশন হয়ে অন্যত্র পালানোর সময় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ধৃত সুজলের প্রথমে বিহারে গিয়ে আশ্রয় নেওয়া নিয়েও তোপ দাগেন পার্থ। সোমবার সন্ধ্যার পর পুলিশ কমিশনারেরের অফিস থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, "বিহারে কারও না কারওর শেল্টারে গিয়েছিল। আমি তো মনে করি যিনি বারাকপুরের সাংসদ ছিলেন, তিনিই একমাত্র বাইরে শেল্টার দিতে পারেন। কলকাতার কাউন্সিলরকেও বিহারের দুষ্কৃতীরা মারতে এসেছিল। পুলিশকে বলব এই বিহার কানেকশন যাতে কেটে দেওয়া যায়, তা দেখতে।" পাশাপাশি, অর্জুন সিং ঘনিষ্ঠ যাদের বিহার যোগ রয়েছে, তারাই এগুলো কন্ট্রোল করে বলেও দাবি করেন তিনি। একইসঙ্গে গুন্ডারাজ খতমের জন্য পুলিশ দ্রুত ক্রিমিনালদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করবে জানিয়ে সাংসদের সংযোজন, "পুরো ভাটপাড়াজুড়ে অলি-গলিতে যত দ্রুত সম্ভব সিসি ক্যামেরা লাগানো নিয়ে পুলিশ কমিশনাকে বললাম। এর জন্য সাংসদ তহবিল থেকে ইতিমধ্যেই ৮৩ লক্ষ টাকা দিয়েছি। কোথায় ক্যামেরা লাগানো হবে, কী ধরনের ক্যামেরা লাগাতে হবে, সেটা পুলিশ ঠিক করবে।"
অর্জুন সিংয়ের পালটা প্রশ্ন, "মুখ্যমন্ত্রী ওদের, পুলিশ ওদের, তাহলে বিহারের গ্যাংকে ধরছে না কেন?" তিনি আরও বলেন, "আসলে পার্থ ভৌমিক গুন্ডারাজ খতমের ডাক দিয়েছে, আর সোমনাথ শ্যাম ক্রিমিনাল নিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছে। এরাই তোলাবাজি, পুকুর ভরাট, জমি-বাড়ি দখল করেছে। সাধারণ মানুষ থেকে তৃণমূল কর্মীরাও এদের উপর ক্ষিপ্ত। তাই ভয়ে সিকিউরিটি নেওয়ার জন্য অবাস্তব অভিযোগ করছে।"