সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: চল্লিশ ডিগ্রির চোখরাঙানি। তাই জলকেলির জন্য ওয়ালো পুল। প্রখর দাবদাহে খাঁচায় অবাধ বিচরণে মাথার উপর এগ্রো নেট। সেই সঙ্গে রঙবাহারি ছাতা। যাতে বৈশাখের প্রখর রোদেও বন্যপ্রাণীদের মন থাকে চাঙ্গা। রাতে স্বস্তির ঘুম হয়, প্যাচপ্যাচে গরমে নিদ্রা ভঙ্গ না হয়ে যায় তাই নাইট শেল্টারে থাকছে পাখা। আর সেই সঙ্গে ডায়েটে বিস্তর বদল করা হয়েছে। পুরুলিয়ার গরমের মোকাবিলায় এমনই ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে সুরুলিয়া মিনি চিড়িয়াখানার।
ছবি: অমিতlলাল সিং দেও।
পুরুলিয়া শহরের উপকণ্ঠে কংসাবতী উত্তর বনবিভাগের সুরুলিয়া মিনি জু-র বন্যপ্রাণদের সবল ও সুস্থ রাখতে ফি বছর গ্রীষ্ম এবং শীতে বিধি মেনে ডায়েট চার্টে বদল হয়। নাইট শেল্টার থেকে খাঁচাতেও থাকে নানান ব্যবস্থা। তবে এবার ৪০ ডিগ্রির চোখরাঙানির মোকাবিলায় বন্যপ্রাণদের জলকেলির জন্য ওয়ালো পুল তৈরি করে দিয়েছে চিড়িয়াখানার দায়িত্বে থাকা কংসাবতী উত্তর বনবিভাগ। যা অভিনব।
ছবি: অমিত লাল সিং দেও।
[আরও পড়ুন: মমতার রাজনৈতিক উত্থানকেন্দ্র যুবনেত্রীর লড়াই, শক্তিশালী CPM প্রার্থীও, যাদবপুরে জিতছে কে?]
সেই সঙ্গে মাথার উপর সবুজ আচ্ছাদনে রঙবাহারি ছাতায় তৈরি হয়েছে একেবারে শীতল আবহ। এনিয়ে পুরুলিয়া ও কংসাবতী উত্তর বনবিভাগের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, "চিড়িয়াখানায় থাকা বন্যপ্রাণদের যাতে কোনওরকম সমস্যা না হয় এটা আমরা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেখছি। এই চিড়িয়াখানা পর্যটনের অন্যতম বিনোদনের অঙ্গ। তাই সমস্ত কিছুকে মাথায় রেখেই এই গরম মোকাবিলায় একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছি।"
ছবি: অমিতলাল সিং দেও।
চলতি বছরে এপ্রিলের শুরুতেই এই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গিয়েছিল। মাঝখানে বৃষ্টিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কিছুটা নেমে গেলেও বৈশাখ থেকে যেন তাপ আরও বাড়ছে। সোমবার পুরুলিয়ার সর্বোচ্চ ছিল ৩৮.৭ ডিগ্রি । চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শরীরে যাতে তাপ না বেড়ে যায় তার জন্য সম্বর, চিতল হরিণ-র জন্য তৈরি করা হয়েছে ওয়ালো পুল। হরিণ যাতে খাঁচার মধ্যে এই প্রখর দাবদাহেও অবাধে বিচরণ করতে পারে তার জন্য মাথার উপরে দেওয়া হয়েছে এগ্রো নেট। ওই আচ্ছাদন সবুজ হওয়ায় যেন একটা আলাদা সতেজের আবহ তৈরি হয়েছে। একইভাবে মাংসাশী ফিশিং ক্যাট, হায়নার মতো বন্যপ্রাণীরা যাতে নিজেদের মন চাঙ্গা রেখে খাঁচার মধ্যে এই রোদেও ঘোরাফেরা করতে পারে তাই আমব্রেলা শেডে শীতল রাখা হয়েছে। বন্যপ্রাণীরা আসলে 'কালার ব্লাইন্ড'। তারা সবকিছুতেই ধূসর দেখে। তবে উজ্জ্বল কোন রং দেখলে তাদের যেন একটা আলাদা উত্তেজনা তৈরি হয়। তাই মন চাঙ্গা রাখতেই রংবাহারি ছাতার শেড দিয়েছে কংসাবতী উত্তর বনবিভাগ।
[আরও পড়ুন: ‘ব্যালটের সময় কী হত আমরা জানি’, ইভিএম-ভিভিপ্যাট মিলিয়ে দেখার দাবিতে জানাল সুপ্রিম কোর্ট]
এছাড়া আগে থেকেই সম্বর ও চিতল হরিণের জন্য মাথার উপর খড়ের আচ্ছাদন তৈরি করা হয়েছে। আচ্ছাদন রয়েছে একটি টিনেরও। সঙ্গে আছে একটি পাকাপাকিভাবে স্থায়ী আচ্ছাদনও। চৌবাচ্চায় সব সময় ঠান্ডা জল রাখা হচ্ছে যাতে হরিণের দল এখানে মুখ দিয়ে তৃষ্ণা জুড়াতে পারে। সব প্রাণীরা তো আর জলকেলি করবে না। তাই বাঁদর ও পাখিদের মত প্রাণীকে স্প্রিংল্কারে স্নান করানোর কাজ চলছে। ডায়েটেও বেশকিছু বদল করা হয়েছে। প্রাণীরা সাধারণভাবে যা খাবার খায় তার ৭০ থেকে ৫০ শতাংশ কম খাবার দেওয়া হচ্ছে। যাতে পেট গরম না হয়। সেই সঙ্গে খাবার জলে থাকছে ওয়ারেস, গ্লুকোজ। হরিণকে বেশি করে খাওয়ানো হচ্ছে শসা, কচি পাতা। ভল্লুককে দেওয়া হচ্ছে লাল তরমুজ। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, খাবারে জলের পরিমাণ বেশি রয়েছে এমন কিছু খাদ্য তালিকায় রাখা হয়েছে। সবে মিলিয়ে প্রখর দাবদাহে একেবারে ভিআইপির মত যত্ন-আত্তি হচ্ছে সুরুলিয়ার বন্যপ্রাণীদের।