রঞ্জন মহাপাত্র ও অংশুপ্রতীম পাল: বিরোধী দলনেতার ভাই সৌমেন্দু অধিকারীকে (Soumendu Adhikari) সম্পাদক পদে বসানোয় পূর্ব মেদিনীপুরে দলের অন্দরে ক্ষোভের ঢেউ টের পেয়েই অবশেষে ব্যাকফুটে বিজেপি। ফলে, নিজেদের তথাকথিত ‘গড়’ কাঁথিতেই পুরভোটের ময়দানে এবার ব্রাত্য ‘অধিকারী পরিবার’। বিদায়ী পুরবোর্ডের চেয়ারম্যান সৌমেন্দু তো ননই, ‘শান্তিকুঞ্জে’র আর কাউকেই ভরসা করে পুরভোটের ময়দানে নামাতে সাহস পেল না বিজেপি। অধিকারী পরিবারের কেউ এবার ভোটে দাঁড়ালে জিততে পারত না ধরে নিয়েই বিজেপি পিছু হঠেছে বলে গুঞ্জন কাঁথিতে।
অন্যদিকে, বিজেপির (BJP) প্রার্থীতালিকা প্রকাশের পর থেকেই নেতা ও কর্মীদের ক্ষোভে তেতে উঠেছে খড়গপুর শহর। কোথাও দলের রাজ্য স্তরের নেতার বাড়ি ভাঙচুর, কোথাও আবার দলীয় কার্যালয়ে হামলা, এমনকী প্রার্থীর ছবি লাগানো হোর্ডিং ছিঁড়ে দেওয়াও চলছে লাগাতার। টিকিট না পেয়ে দলের নেত্রী বেবী কোলে শা তো প্রকাশ্যেই ‘বিজেপিকে ভোট দিলে এলাকায় অগ্নিকাণ্ড ঘটানোর’ শাসানি দিয়েছেন পুরবাসীদের। কাঁথি ও খড়গপুরের তোলপাড় নিয়ে “তেমন কোনও খবর নেই” বলে আসানসোলে দায় এড়ান বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তবে পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে যে ঘটনার মোকাবিলায় অভিযুক্তদের শোকজ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন স্থানীয় নেতৃত্ব। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তালিকা-দ্বন্দ্বে খড়গপুর সরগরম।
[আরও পড়ুন: লক্ষ্য গ্রামীণ অর্থনীতি ও পরিকাঠামোর উন্নয়ন, ৯ দপ্তরের জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাজ্যের]
বাম জমানায় ৯ বছর ছাড়া কাঁথি পুরসভার (Contai Municipality) রাশ এ পর্যন্ত বরাবর অধিকারী পরিবারের হাতেই থেকে এসেছে। শিশির অধিকারীর পর শুভেন্দু অধিকারী এবং সবশেষে সৌমেন্দু অধিকারী দফায় দফায় পুরপ্রধান হয়েছেন। পরিবারের আরেক ছেলে দিব্যেন্দুও কাউন্সিলর ছিলেন। কাঁথি দখলের পোড় খাওয়া সেই পরিবারের কাউকেই গেরুয়া শিবির টিকিট না দেওয়ায় প্রশ্ন উঠছে। কিন্তু সৌমেন্দুর নাম কেন রইল না প্রার্থী তালিকায়? তাহলে কি বিজেপি বুঝে গিয়েছে অধিকারী পরিবারকে দিয়ে আর হালে পানি পাওয়া যাবে না?
সম্প্রতি অধিকারীদের আমলে কাঁথি পুরসভায় দুর্নীতি নিয়ে শোরগোল চরমে। সেক্ষেত্রে সেই অধিকারীরা সামনে থাকলে কাঁথিতে বিজেপির ভরাডুবি নিশ্চিত মনে করেই বিজেপি এই পদক্ষেপ করেছে বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তবে রাজ্য সভাপতির সাফাই, “সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই তালিকা করা হয়েছে।” আর সৌমেন্দু বলেছেন, “বিজেপি সর্বভারতীয় দল। তার নীতিগত বৈশিষ্ট্যই আলাদা। সেখানে দল যাকে মনোনীত করেছে আমরা তাকে জেতানোর জন্যে সর্বতোভাবে চেষ্টা করব। মান অভিমানের কোনও বিষয় নেই।”
এদিকে খড়গপুর প্রার্থী নিয়ে বিক্ষোভে যখন তপ্ত, তখনই কার্যত ঘৃতাহুতি দিয়েছেন এলাকার তারকা বিধায়ক হিরণ। টিকিট না পেয়ে বিক্ষুব্ধদের আন্দোলনের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে তাঁর মন্তব্য, “আমি কোনও ধরনের হিংসা বা অশান্তি পছন্দ করি না। তবে সারা বছর ধরে যে সব কার্যকর্তারা কাজ করেন তাঁরা যদি টিকিট না পান তাহলে খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক। সারা বছর কাজ করার পর যাঁরা টিকিট না পান তাঁদের মর্মাহত হওয়ার ব্যাপারটা বুঝি।” প্রশ্ন উঠছে ঘর সামলানোর বদলে এমন মন্তব্য করে তাহলে কি দলেই বিদ্রোহ উসকে দিতে চাইছেন বিধায়ক?
সোমবার গভীর রাতে শহরের ইন্দা এলাকার রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। অভিযোগের তীর বিজেপির ১ নম্বর ওয়ার্ডের শক্তি প্রমুখ সৌমেন দাস ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে। যদিও সৌমেনবাবু জানিয়েছেন তিনি তখন ঘুমোচ্ছিলেন। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই মঙ্গলবার সকালে গোলবাজার এলাকায় একদল বিক্ষুব্ধ কর্মী টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করেন। তাঁদের বক্তব্য, তুষার মুখোপাধ্যায়ের অঙ্গুলি হেলনেই প্রার্থী করা হয়েছে। পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপির মণ্ডল কার্যালয়ে ভাঙচুরও চালান বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা কর্মীরা।
এই ব্যাপারে বিজেপির রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “যাঁরা এই সব কাজ করছেন আমরা মনে করি না তাঁরা বিজেপির কেউ বলে। দলের রাজ্য কমিটির সঙ্গে কথা হয়েছে। রাজ্য জানিয়ে দিয়েছে কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে। এঁদের সকলকেই শোকজ করা হবে।” প্রার্থী নিয়ে বিজেপির বিক্ষোভ দানা বেঁধেছে হুগলি ও নদিয়াতেও।