দীপঙ্কর মণ্ডল: বাড়ি থেকে দোকান বেশ কিছুটা দূরে। বেরোতে পারছেন না অসুস্থ বৃদ্ধা। হাঁটতে না পারা ছেলেটিও গৃহবন্দি। এদিকে হেঁশেল যে ফাঁকা! অনেক ভেবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে প্রতিকার চাইলেন ছেলেটি। এগিয়ে এলেন এক শিক্ষক। ব্যাগ ভরতি সবজি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে গেল। আপ্লুত মা ও ছেলে। আর সেই শিক্ষক বলছেন, “আমরা দু’বেলা পেট ভরে খাব আর কেউ না খেয়ে থাকবে এটা চলতে পারে না। ফেসবুকে জানতে পেরে সামান্য কিছু দিয়ে এলাম। বিশ্বাস করুন, এক অদ্ভুত আনন্দ পাচ্ছি।”
শিক্ষকের নাম রত্নদীপ সামন্ত। পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির একটি স্কুলে ইংরেজি পড়ান তিনি। করোনা সংক্রমণ রুখতে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি। গোটা রাজ্য লকডাউন। অবসরে ফেসবুক আর বই পড়ে সময় কাটে। মঙ্গলবার তাঁর চোখে পড়ে, এক যুবক তাঁর ওয়ালে লিখেছেন, “আমি জ্বরে ভুগছি। সিনিয়র সিটিজেন মা-ও অসুস্থ। দোকানে যেতে পারছি না। কিছুটা নুন-তেল-আলু পেলেই আমরা বেঁচে যাব।” পোস্টটি দেখেই ব্যাগ নিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রত্নদীপ। কাছাকাছি দোকান থেকে পরিমাণ মতো আলু, বাঁধাকপি, গাজর, সজনে ডাটা, কাঁচালঙ্কা, এঁচোড়, টম্যাটো, বিট, উচ্ছে, কাঁচকলা, শাক, কুমড়ো, শসা, ছোলা, মটর, মুগ এবং মসুর ডাল কিনে ফেলেন। ফেসবুকেই ওই যুবককে জানিয়ে দেন, তিনি আসছেন। বাইকে চেপে পৌঁছেও যান নির্দিষ্ট ঠিকানায়।
[ আরও পড়ুন: প্রশাসনের নির্দেশকে উপেক্ষা, লকডাউনের মধ্যেই উদ্দাম পার্টি খেজুরিতে ]
খেজুরির জাহানাবাদ গ্রামে তখন দরজায় খিল দিয়ে বসেছিলেন যুবক শুভঙ্কর মণ্ডল ও তাঁর মা। ব্যাগ ভরতি সবজি নিয়ে হাসিমুখে কড়া নাড়লেন রত্নদীপ। মা ও ছেলে প্রথমে হকচকিয়ে যান। তাঁদের জন্য কেউ থলে ভরে বাজার এনেছে জেনে বিহ্বল হয়ে যান শুভঙ্কর ও তাঁর মা। করোনা সতর্কতার জন্য কেউ কাউকে জড়িয়ে ধরেননি। কিন্তু কৃতজ্ঞতায় চোখে জল ছেলেটির। তিনি জানিয়েছেন, “নিজের সমস্যার কথা ফেসবুক ওয়ালে লিখেছিলাম ঠিকই। কিন্তু তা পড়ে যে কেউ বাড়িতে ব্যাগ ভরতি বাজার পৌঁছে দেবে স্বপ্নেও ভাবিনি।” আর শিক্ষক রত্নদীপ বলছেন, “আমার তো এখন ছুটি। খুব একটা কাজ নেই। এই বিপদের সময়ে কারও পাশে থাকতে পারলাম। এটাই বড় কথা।”
শহর হোক বা গ্রাম, বহু বাড়িতেই থাকেন বয়স্ক দম্পতি। রেশন হোক বা ওষুধ, অনেক সময় তাঁরা জোগাড় করে উঠতে পারেন না। আর এখন লকডাউনের সময়ে এই সমস্যা আরও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কেউ জানেন না করোনার ভয়াল আক্রমণ কবে থামবে। সবকিছু আবার কবে স্বাভাবিক হবে। বলাই বাহুল্য, রত্নদীপের এই নজির বহু মানুষকে পথ দেখাবে। পাড়ার নিঃসঙ্গ বয়স্ক মানুষ হোক বা অন্যভাবে সক্ষম, পাশে দাঁড়াবেন সবাই।
[ আরও পড়ুন: রাজ্যের সব মসজিদের দরজা বন্ধের আরজি, করোনা মোকাবিলায় চিঠি ইমামদের ]
The post বাড়িতে বন্দি অসুস্থ যুবক ও বৃদ্ধা, ফেসবুকে খবর পেয়ে সবজি পৌঁছে দিলেন শিক্ষক appeared first on Sangbad Pratidin.
