স্টাফ রিপোর্টার: লম্বা গ্রীষ্মের শেষে বৃষ্টি নামতেই বাজারে আচমকাই আগুন। প্যাচপেচে গরমে হাঁসফাঁসের পর বৃষ্টি নামতেই যে এভাবে মধ্যবিত্তের হেঁশেলে তার প্রভাব পড়বে, তা কে জানত!
বর্ষায় বঙ্গধরণী সিক্ত। কিন্তু বাজারে (Vegetable Market) তার জেরে স্বস্তির বদলে সবজি কিনতে কার্যত চোখের জল বেরোচ্ছে আমজনতার। সংশ্লিষ্ট মহলের খবর, বৃষ্টিতে আমদানি খানিক মার খাচ্ছে। আর তারই জেরে মধ্যবিত্তের পকেটে ছ্যাঁকা। হবে নাই বা কেন! রোজকার রান্নায় দরকার পড়ে, এমন অধিকাংশ সবজির দাম যে একশো ছুঁইছুঁই। বেগুন থেকে ঢেঁড়শ, টম্যাটো থেকে কাঁচালঙ্কা– সেঞ্চুরি পার। যার জেরে নিত্যদিন গেরস্তকে বাজারে গিয়ে হাতে রীতিমতো ছ্যাঁকা খেয়ে ফিরতে হচ্ছে। নোট খরচ করে পকেটে ঠেকেছে স্রেফ খুচরো। বাজারের ব্যাগ তার পরও ফাঁকা।
তবে দাম কবে কমবে সে আশার বাণী শোনাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরাও। ‘‘দিন দশেকের মধে্য হু-হু করে সবজির দাম বেড়েছে। আমরাও বুঝছি, খদ্দেরের পকেটে টান পড়ছে। কিন্তু কী করব! জোগান কোথায়!’’ – মঙ্গলবার আক্ষেপ করলেন গড়িয়াহাট বাজারের সবজি ব্যবসায়ী কার্তিক সাহা।
[আরও পড়ুন: বেআইনি অর্থ লেনদেনের অভিযোগ, নয়ডার ভেঙে ফেলা জোড়া বহুতলের প্রোমোটার গ্রেপ্তার]
প্রতি বছরই বর্ষা এলে দামে কিছুটা হেরফের হয় কাঁচা চা আনাজ থেকে মাছ-মাংসের। কিন্তু এবার যেন দামের ঊর্ধ্বগতি দু-সপ্তাহের মধ্যেই করোনার গতিকেও হার মানিয়েছে। চাষি, আড়তদার, মহাজন থেকে খুচরো সবজি বিক্রেতা, দিনভর এই চক্রে ঘুরে যেটুকু মালুম হল, তা এককথায় বলা যায়, রোদে পুড়ে প্রথমে ফসল নষ্ট, তারপর হঠাৎ ঝড়বৃষ্টিতে জোগান মার খাওয়ায় কফিনে শেষ পেরেক মারা হয়ে গিয়েছে।
দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ক্যানিংয়ের চাষি মাধাই সামন্ত বলছিলেন, ‘‘কয়েক মাস আগের কথা, প্রচণ্ড গরম পড়েছিল। মাঠ শুকিয়ে অর্ধেক সবজি তো তখনই নষ্ট হয়ে গিয়েছে মাঠে। কিন্তু, বর্ষা আসতেই যে বিপত্তি আরও বাড়বে কে ভেবেছিল! বৃষ্টির দাপটে ফসল মজুত ও জোগান দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধাক্কা এসেছে।’’ সেই কথারই সমর্থন শোনা গেল কোলে মার্কেটের পাইকারী সবজি ব্যবসায়ী তুষার সামন্তের গলায়। তাঁর কথায়, ‘‘সবজি গাছ মাঠেই নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং কোথাও কোথাও বৃষ্টির প্রভাব তো একটু হলেও পড়বে মধ্যবিত্তের পকেটে।’’ ফলে ঝিঙে, ঢেঁড়শ, শসা, বেগুন, লাউ, করলা, বরবটি, কাঁচালঙ্কা, ধনেপাতা, লাউ, কুমড়ো, বাঁধাকপি-সহ বিভিন্ন সবজির দাম বেড়ে গিয়েছে একধাক্কায় অনেকটাই।
[আরও পড়ুন: সকাল থেকেই একটানা বৃষ্টি, কেমন কাটবে আগামী ২৪ ঘণ্টা, জানাল আবহাওয়া দপ্তর]
আদার জোগানদার মণিপুরে অশান্তির জেরে প্রায় মাসখানেক ধরেই তার দাম ট্রিপল সেঞ্চুরি পার করে গিয়েছে। ৩৫০। দাম চড়েছে রসুনেরও। এখনই এই দাম কমারও তেমন কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না ব্যবসায়ীরা। কারণ আবার পঞ্চায়েত ভোট। তঁাদের কথায়, নির্বাচনের কাজে ব্যস্ত চাষি থেকে মুটে, ব্যবসায়ী প্রত্যেকেই। এই সময়টা একেবারে উৎসবের মতো তাঁদের। খেত থেকে ফসল তোলার লোকে ঘাটতি, হাটে মাল বেচা-কেনাও কমে গিয়েছে। আর স্বাভাবিক চাহিদার তুলনায় জোগান কমে যাওয়ার কারণেই সবজি বাজার চড়েছে।
সবজি বাজার নিয়ন্ত্রণে তৈরি রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে বলেন, “গরমে প্রচুর সবজি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলেই মূলত এই দাম বেড়েছে। তবে পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরো বাজারের দামের ফারাক অনেকটা বেড়ে না যায়, তা দেখতে আমরা নজরদারি চালাচ্ছি।”