সৈকত মাইতি, মহিষাদল: ধারে-ভারে বরাবরই ভারী দশভুজা। কিন্তু তাই বলে ১০০০ কেজি! হ্যাঁ, ঠিকই পড়লেন। পিতলের তৈরি দুর্গা মূর্তির ওজন এটাই। এবারই প্রথম এত ভারী ধাতুকে গড়েপিটে চিন্ময়ী মায়ের রূপদান করা হল। এর নেপথ্যে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের (Mahishadal) রানা পরিবার। পিতল দিয়ে দেবদেবীর মূর্তি গড়া তাদের পারিবারিক ব্যবসা। তবে দুর্গা মূর্তি এবারই প্রথম নির্মিত হল রানা পরিবারের মহিলা, পুরুষদের হাত ধরে। উত্তর কলকাতার মণ্ডপে পূজিতা হবেন পিতলের দেবী।
পূর্বপুরুষরা গড়তেন পিতলের (Brass) জগ মূর্তি। ছোটখাটো মূর্তি কিংবা বাসনপত্র - এসবও তৈরি হত। রানা পরিবারের ছেলে প্রফুল্লর কাছে শোনা গেল তাঁদের অতীতের কথা। প্রফুল্ল নিজেও প্রায় ৩০ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। এবছর কলকাতার (Kolkata) কারিগর রিন্টু পাল তাঁকে পিতলের দুর্গামূর্তি গড়ার কথা বলেন। সেই থেকেই কাজ শুরু। প্রায় আড়াই মাসের চেষ্টায় ঝকঝকে পিতলে রূপ পেলেন দুর্গতিনাশিনী।
[আরও পড়ুন: ‘আমাকে বাঁচতে দিন, দয়া করে জামিন দিন’, আদালতে কেঁদে ফেললেন পার্থ]
রানা পরিবারের বানানো পিতলের দুর্গামূর্তিটি ৮ ফুট লম্বা, ওজন প্রায় এক টন বা ১০০০ কিলোর কাছাকাছি। মূর্তি বানানোর কারিগর বিদ্যাবতী রানা বলছেন, ''আমি অনেকদিন ধরে এই কাজ শিখেছি।আড়াই মাস লেগেছে এই মূর্তি গড়তে। বাড়ির মেয়ের মতো তাকে সাজিয়েছি। এবার বিদায়ের পালা।'' আরেক শিল্পী প্রফুল্ল রানা তো কেঁদেই ফেললেন। মূর্তি তৈরির কথা যত না তাঁর মুখে শোনা গেল, তার চেয়ে বেশি বিদায় বেদনায় কাতরতা প্রকাশ্য়ে এল। বললেন, ''এতদিন ধরে গড়েছি বাড়ির মেয়ের মতো, এখন তাকে বিদায় দিতে মন চায় না।''
[আরও পড়ুন: পার্থর জন্য দলের ক্ষতি হয়েছে, পরিষদীয় বৈঠকে বললেন ফিরহাদ, ভাবমূর্তি নিয়ে সচেতন শাসকদল]
এতদিন ধরে নিজের মেয়ের মতোই এই দুর্গামূর্তিটি গড়েছেন প্রফুল্লরা। শুধু তো নির্মাণ নয়, তাকে সাজিয়ে গুছিয়ে দেবী করে তোলাও শিল্পীদেরই কাজ। আর সেই কাজ শেষে বিদায়ের পালা। রানা পরিবারের এই দুর্গামূর্তি এবার কলকাতায় আসছে। শোভাবাজারের বেনিয়াটোলার একটি পুজোমণ্ডপে পূজিতা হবেন। বিয়ের পর নিজের মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানোর সময় যেমন অভিভাবকরা বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তেমনই চোখে জল নিয়ে কন্যা বিদায়ের প্রহর গুনছেন প্রফুল্ল, বিদ্যাবতীরা।
দেখুন ভিডিও।