সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: যেখানেই শাসকদলের ভরাডুবি, সেখানেই তৃণমূলের মন্ত্রী-বিধায়কদের রাত কাটানোর দাওয়াই দিচ্ছেন প্রশান্ত কিশোরের টিম। একেবারে ওই এলাকার প্রদত্ত ভোট-সহ তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের তালিকা পাঠিয়ে সেখানে গণপ্রচার কর্মসূচিতে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সেই কর্মসূচি শেষ হলে তার সমস্ত তথ্য-ছবি সময়মতো পিকে’র একাধিক হোয়াটসগ্রুপে পাঠাতে হচ্ছে। না হলেই সরাসরি ফোন আসছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-বিধায়কের কাছে। ওই কর্মসূচি শেষে এলাকায় ফলো আপও করছে পিকে’র দল। সেই ফলো আপে কোনওরকম চুন থেকে পান খসলেই দিতে হচ্ছে নানা জবাব। লোকসভা ভোটে পুরুলিয়া আসন হারিয়ে পিকে’র টিমের কাছে এখন নিত্যদিন এভাবেই ‘রাজনৈতিক পাঠ’ নিতে হচ্ছে মন্ত্রী-বিধায়ক থেকে সকল স্তরের জনপ্রতিনিধিদের।
[আরও পড়ুন: মৃত ব্যক্তির সই জাল করে জমি হাতানোর চেষ্টা, হাতেনাতে ধরা পড়ল প্রতারক]
বৃহস্পতিবার সকালে পুরুলিয়ার মানবাজার বিধানসভার পুঞ্চায় ‘দিদিকে বলো’ এবং গণপ্রচার কর্মসূচি সেরে একান্ত আলাপচারিতায় রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু বলছিলেন, “এই গণপ্রচার কর্মসূচি যেন একেবারে স্কুলের মতো ক্লাসের পড়া ধরা। একেবারে সময় মতো এই কর্মসূচি সেরে তার তথ্য না দিলেই প্রশান্ত কিশোরের টিমের ফোন আসছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দিদিকে বলো’ প্রকল্পের সঙ্গে যে গণপ্রচার কর্মসূচি নিয়েছেন তা সত্যিই অভিনব। আর এই কর্মসূচিতে পিকে’র টিমের যেভাবে তদারকি চলছে তাতে মনে হচ্ছে আমাদের একেবারে পড়ুয়া-শিক্ষকের সম্পর্ক। সবমিলিয়ে এই কর্মসূচিকে ঘিরে রাজনৈতিক দিক থেকে জেলায় আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। যেখানেই যাচ্ছি এই কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।’’
[আরও পড়ুন: ভারতমাতা পুজোর জেরে হাওড়ায় আটক বিজেপি নেতা! লিলুয়ায় হামলা মণ্ডপে]
পিকে’র টিমের দেওয়া তথ্য সম্বলিত কাগজ নিয়েই পুঞ্চায় যেতে হয় মানবাজার ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুকে। তাঁদের নির্দেশ মোতাবেক পুঞ্চার বাসিন্দা রামকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে রাত কাটাতে হয় মন্ত্রীকে। সেখানেই রুটি, সবজি দিয়ে সারতে হয় রাতের আহার। পিকে’র টিমের নির্দেশ মতো ওই এলাকার সম্মানীয় ব্যক্তি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সত্যনারায়ণ মুখোপাধ্যায়, শিক্ষক নারায়ণ বন্দ্যেপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে হয় মন্ত্রীকে। তারপর বাড়ি-বাড়ি ঘুরে সমস্ত অভাব, অভিযোগ, সুবিধা, অসুবিধার কথা শোনেন মন্ত্রী। পিকে’র টিম তথ্য দিয়ে মন্ত্রীকে জানিয়ে দিয়েছিল, এই এলাকায় প্রদত্ত ভোট ছিল ৩৬০৭টি। তার মধ্যে বিজেপি পায় ২০৫৫, তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ১২১৫। এলাকার জনসংখ্যা কত, পুরুষ-মহিলা-সহ তফসিলি জাতি-উপজাতির মানুষজন কত রয়েছেন সেই সব সংখ্যাও হোয়াটসঅ্যাপে মন্ত্রীকে পাঠায় পিকে’র টিম। প্রত্যন্ত এলাকার এমন চুলচেরা তথ্য হাতে পেয়ে অবাক হয়ে যাচ্ছেন পুরুলিয়ার শাসকদলের জনপ্রতিনিধিরা।
The post বিজেপির দাপটে হাতছাড়া পুরুলিয়া, হারানো জমি ফিরে পেতে ‘গণপ্রচার’ই হাতিয়ার তৃণমূলের appeared first on Sangbad Pratidin.
