shono
Advertisement

হেঁশেলের ‘অধিকার’নিয়ে দীর্ঘ দ্বন্দ্ব, ঝালদার ৪ স্কুলে বন্ধ মিড-ডে মিল

পুজোর আগেই এই চার স্কুলে মিড-ডে মিল চালু করতে উদ্যোগী ব্লক প্রশাসন। The post হেঁশেলের ‘অধিকার’ নিয়ে দীর্ঘ দ্বন্দ্ব, ঝালদার ৪ স্কুলে বন্ধ মিড-ডে মিল appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 03:15 PM Sep 17, 2019Updated: 04:16 PM Sep 17, 2019

রাজ্যে একের পর এক বিভিন্ন স্কুলে মিড-ডে মিলের বেহাল দশার ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। কোথাও আবার দেখা গিয়েছে নিজেদের গাঁটের কড়ি খরচ করে খুদেদের পেটভরে খাওয়াচ্ছেন শিক্ষক,শিক্ষাকর্মীরা। কী অবস্থা রাজ্যের বাকি স্কুলগুলির? চালচিত্র দেখতে পৌঁছে গেল সংবাদ প্রতিদিন.ইন
সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: কাঠ-কয়লা,চাল–ডাল, তেল-নুন সবই আছে। অর্থেরও অভাব নেই। তবু হাঁড়ি চড়ছে না পুরুলিয়ার ঝালদা ১ নং ব্লকের চারটি স্কুলে। নিত্যদিন পেটে কিল মেরেই পড়াশোনা করতে হচ্ছে ছোট ছোট পড়ুয়াদের। কারণ একটাই। হেঁশেলের অধিকার কার, এনিয়ে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব চলছে তো চলছেই। ফলে রান্না বন্ধ। খিদে নিয়েই স্কুলে যাতায়াত করছে খুদেরা।
রাজ্যের মিড-ডে মিল মানচিত্রে এ ছবি সত্যিই হতাশাজনক। যেখানে হেঁশেলের ‘অধিকার’ পেতে মিড–ডে মিলের জল গড়িয়েছে হাই কোর্টেও। মাসখানেক আগে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন এনিয়ে সর্বদল বৈঠকও করে। কিন্তু স্বনির্ভর দলের খণ্ডযুদ্ধে ওই চার স্কুলে মিড–ডে মিলের রান্না শুরু করতে পারছে না প্রশাসন।

Advertisement

[আরও পড়ুন: প্রথমপক্ষের মেয়েকে মানতে নারাজ দ্বিতীয় স্বামী, সন্তান খুনে অভিযুক্ত মা]

বাস্তব চিত্র দেখতে পৌঁছে গেলাম ঝালদা ১ নং ব্লকেপর ইচাগ গ্রাম পঞ্চায়েতের জামলহর প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখানে প্রায় পাঁচ বছর ধরে মিড-ডে মিল বন্ধ। আজও তেমনই। রান্নাঘর আছে, রান্না নেই। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতেরই আরেক স্কুল চাতমঘুটু প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানেও একবার উঁকি মারলাম। জানা গেল, বছর খানেক ধরে মিড–ডে মিলের হাঁড়ি চড়ে না। আরেক গ্রাম পঞ্চায়েত মাঠারিখামার। সেখানকার রাম আশ্রম হাইস্কুলেও সম্প্রতি মিড–ডে মিল বন্ধের বর্ষপূর্তি হয়েছে। কলমা গ্রাম পঞ্চায়েতের কলমা–বান্দুলহর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও গত ৬ আগস্ট থেকে রান্না বন্ধ। চারটি স্কুলের এই একই ছবি দেখে বুঝলাম, প্রশাসনের সাধু উদ্যোগ বাস্তবায়নের পথে বাধা অনেক।
তবে এরই মধ্যে একটু আশার আলো দেখতে পেলাম। গত সপ্তাহে বহু কাঠ–খড় পুড়িয়ে ইচাগ হাই স্কুলে মিড–ডে মিল চালু করাতে পেরেছে ব্লক প্রশাসন। ঝালদা ১ নম্বর ব্লকের বিডিও রাজকুমার বিশ্বাস বেশ আত্মবিশ্বাসের সুরেই বললেন, “পুজোর আগে পর্যন্ত বন্ধ থাকা চার স্কুলে মিড–ডে মিল চালু করবই। সেই লক্ষ্যেই গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা কাজ করছি।” তাঁর এই আত্মবিশ্বাস কত দ্রুত বাস্তবায়িত হয়, তারই অপেক্ষায় খুদে পড়ুয়ারা। তাহলে পড়াশোনার পর আর অন্তত খালি পেটে ঘরে ফিরতে হবে না।

আসলে এই ঝালদায় মিড–ডে মিলের সমস্যাটা হয় ব্লকের একটি আদেশনামাতেই। ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর এই ব্লকের তৎকালীন বিডিও একটি আদেশনামায় জানান, এলাকায় ইচ্ছুক অন্যান্য স্বনির্ভর দলগুলিও মিড–ডে মিল রান্নার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছে আবেদন করতে পারবেন। তারপরেই দীর্ঘদিন ধরে রান্না করা স্বনির্ভর দলের সঙ্গে আবেদন করা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের গন্ডগোল বেঁধে যায়। স্কুল
কর্তৃপক্ষ রোটেশন পদ্ধতি চালু করলেও সমস্যা মেটাতে পারেনি। যদিও এই ব্লকের বহু স্কুলেই এখন রোটেশন ভিত্তিতে মিড–ডে মিল রান্না নির্বিঘ্নে চলছে। কিন্তু এই চার স্কুল ব্যতিক্রম।

সরকারি আদেশনামা

এমনকী প্রশাসনর কর্তারা নিজেরা স্কুলে গিয়ে রান্না চড়াতে উদ্যোগ নিলেও, স্বনির্ভর দলের কাজিয়ায় তাঁরাই বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন। ফলে কার্যত পিছু হঠতে হচ্ছে তাঁদের। জামলহর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মাধব মুখোপাধ্যায় বলছেন, “গ্রামের একাধিক দল রান্না করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেই সমস্যায় পড়ি। অতীতে রান্না করা দল হাই কোর্টে গিয়েছে। তাদের পক্ষে রায়ও হয়েছে। কিন্তু তবু স্বনির্ভর দলগুলির নিত্যদিনের ঝামেলায় পাঁচ বছর মিড-ডে মিল শুরুই করতে পারিনি।”

[আরও পড়ুন: চাকরি ছেড়ে ৬০টি কুকুর-বিড়াল নিয়ে শ্রীনাথের ‘অনাথ আশ্রম’]

অথচ জেলা প্রশাসন এই দলগুলিকে বারবারই আশ্বস্ত করেছে, শুধু মিড–ডে মিলের রান্নাই নয়। আয়ের নিশ্চয়তার জন্যেই একাধিক সরকারি প্রকল্পের তাঁদের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। কিন্তু তা কানে তুললে তো! তাঁদের এক ও একমাত্র লক্ষ্য যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে স্কুলের হেঁশেল দখল।
ছবি: সুনীতা সিং।

The post হেঁশেলের ‘অধিকার’ নিয়ে দীর্ঘ দ্বন্দ্ব, ঝালদার ৪ স্কুলে বন্ধ মিড-ডে মিল appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement