সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা ছিল। পুলিশের সতর্কতা ছিল। আইন রক্ষার ঘোষণাও ছিল।
কিন্তু সব কিছুকে অগ্রাহ্য করে রবিবার রামনবমী উপলক্ষে অস্ত্র হাতে দেদার মিছিল বেরল রাজ্যে। বিজেপি বা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতেই। যাকে স্বাভাবিকভাবেই ভাল চোখে নিচ্ছে না রাজ্য প্রশাসন। আইন ভেঙে যারা অস্ত্র মিছিল করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। নবান্ন সূত্রে খবর, অস্ত্র মিছিলগুলির ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, সবকিছু আমরা নজরে রেখেছিলাম। যারা নিষেধ মানেনি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
[রাম নবমীতে অস্ত্রের ঝনঝনানি, সন্ধ্যা নামতেই ডিজের হুঙ্কার]
আদতে হিন্দি বলয়ের সংস্কৃতি হলেও রামনবমীকে সামনে রেখে এ রাজ্যে বছর দুই ধরেই কর্মসূচি করছে বিজেপি। রাম জন্মোৎসবের নামে অস্ত্র মিছিল করছে। এনিয়েই সংঘ পরিবার ও রাজ্য সরকারের মধ্যে অশান্তি বাধে। যার জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত। এবছর তাই আগে থেকেই সতর্ক ছিল প্রশাসন। সশস্ত্র মিছিলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, যারা বহুদিন ধরে প্রথাগত ভাবে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে আসছে, তারা ছাড়া অন্য কাউকে সশস্ত্র মিছিল করার অনুমতি দেওয়া হবে না। আরএসএসের দক্ষিণবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক জিষ্ণু বসুও সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনেই মিছিল করার কথা জানিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরও রবিবার রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে রামনবমীর মিছিলে অস্ত্র প্রদর্শনের ঘনঘটা দেখা গেল। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের খড়গপুরের মিছিলে প্রচুর অস্ত্র ছিল। কোথা থেকে এই বিপুল সংখ্যক অস্ত্র এল, সে বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে প্রশাসন।
এবছর রাজ্যে রামনবমী পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শাসকদল তৃণমূলও। এদিন গোটা রাজ্য জুড়ে তৃণমূল সমর্থকরা রামের ছবি নিয়ে মিছিল করে। সরকারি নির্দেশ মেনেই তারা অস্ত্র ছাড়াই মিছিল করেছে সর্বত্র। মিছিলের নেতৃত্বে দেখা যায় মন্ত্রীদেরও। দিনের শেষে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, বিক্ষিপ্তভাবে কোথাও কোথাও অস্ত্র নিয়ে মিছিল করতে দেখা গিয়েছে। পুলিশ প্রশাসন তার মতো করে ব্যবস্থা নেবে। তাঁর কথায়, “রামের নামে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে রাজনীতি করে রামকে ব্যবহার করে বিজেপি যে সংস্কৃতির পরিচয় দিচ্ছে, তাতে আর যাই হোক ভারতীয় সংস্কৃতির পরিচয় নেই।” তিনি আরও বলেন, “রামচন্দ্রকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু দিলীপবাবু রামনবমী পালনের নামে যা করছেন, তার সঙ্গে প্রাচীন ভারতের রামের চিত্রের কোনও মিল নেই। এটা রামের অসম্মান।”
[প্রশাসনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পুরুলিয়ায় রাম নবমীর মিছিলে অস্ত্র হাতে নাবালকরা]
অস্ত্র হাতে বিজেপির মিছিল করার ঘটনার তীব্র বিরোধিতা করেছে সিপিএম। সিপিএমের পক্ষ থেকে শনিবারই রামপুরহাটে সম্প্রতি মিছিল করা হয়। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরেন চট্টোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য বাম নেতারা মিছিলে পা মেলান। কলকাতায় রামনবমীর একটি মিছিলে হাঁটতে দেখা যায় ‘আমরা আক্রান্ত’ মঞ্চের অন্যতম মুখ মৌসুমি কয়ালকে। রবিবার নিউটাউন থেকে শুরু হওয়া এই মিছিলের জমায়েতে দেখা যায় বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে। মৌলালির কাছে রামলীলা ময়দানে মিছিলের আগে অস্ত্র পুজো হওয়ার সময় পুলিশ কয়েকটি তলোয়ার আটক করে। হাবড়ার চোঙদার মোড় থেকে রামনবমীর মিছিল বেরয় স্থানীয় বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নেতৃত্বে। ব্রাত্য বসুর নেতৃত্বে দমদমে অনুষ্ঠান হয়েছে। বিধাননগরে মিছিলে অংশ নিয়েছেন সুজিত বসু। মধ্য কলকাতায় বিশাল শোভাযাত্রা হয়েছে বিধায়ক স্মিতা বক্সির নেতৃত্বে। চুঁচুড়ায় অস্ত্র মিছিলে পা মেলাতে দেখা গিয়েছে রাহুল সিনহাকে।
The post রামের নামে অস্ত্র মিছিল, কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে রাজ্য প্রশাসন appeared first on Sangbad Pratidin.
