টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: গলায় আটকে গিয়েছিল সাড়ে ৪ ফুটের বল্লম। আর তা বের করতে অপারেশন থিয়েটারে (OT) ডাকা হল ওয়েল্ডিং মিস্ত্রিকে! বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে বর্শার মোটা অংশ কাটার পর বাকি সরু অংশটি বের করা হয়। রবিবার সন্ধ্যায় এমনই এক বিরল ঘটনার সাক্ষী রইল বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি (ENT) বিভাগ।
জানা গিয়েছে, রবিবার সাতসকালে বন্ধুদের সঙ্গে বেজি শিকার করতে বেরিয়েছিলেন পুরুলিয়ার (Purulia) হেমন্ত বেসরা। বাড়ি রায়নায়। পাড়া থেকে একটু দূরে জঙ্গলে বেজি শিকারের সময় তাঁর বল্লম হঠাৎ স্বরযন্ত্র, খাদ্যনালি, মহাধমনী ভেদ করে শিড়দাঁড়ার পাশ দিয়ে পিছনের দিকে ঢুকে যায়। বাঁকুড়া (Bankura) হাসপাতালের ইএনটির অধ্যাপক ডা. মনোজ চক্রবর্তীকে পুলিশ অন্তত এমনটাই জানিয়েছেন। মনোজের কথায়, ‘‘রবিবার বর্ধমানের বাড়িতে ভরদুপুরে হাসপাতালের গাড়ি আসতেই বুঝতে পারি কোনও অঘটন। হাসপাতালে যেতেই জানতে পারি কণ্ঠনালি ও স্বরযন্ত্র ভেদ করে বল্লম ঢুকেছে এমন একজনের অস্ত্রোপচার করতে হবে।’’
[আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত নিয়োগ বাতিল নয়, স্কুলগুলিকে চিঠি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের]
হেমন্ত বেসরা ততক্ষণে অপারেশন থিয়েটারে (OT)। বল্লমের সামনের অংশটি হাতে ধরা। রক্তে ভিজে সারা শরীর। মনোজের কথায়, ‘‘ভাল করে দেখে বুঝলাম বল্লম (Spere) টেনে বের করতে গেলে মাংস-সহ স্বর শ্বাসযন্ত্র এবং খাদ্যনালি ছিঁড়ে বেরিয়ে আসবে। মেরুদণ্ডেও আঘাত লাগতে পারে। তাই কাস্তের মতো করে গলায় আস্তে আস্তে কাটা হল। কিন্তু তাতেও সমস্যা মিটল না। বল্লম বের করা গেল না!’’
অস্ত্রোপচারে যুক্ত এক চিকিৎসককে মনোজ বলেন, ‘‘এমএসভিপিকে বলুন, একজন ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি পাঠাতে, না হলে রোগীকে বাঁচানো যাবে না।’’
[আরও পড়ুন: ‘নতুন স্কুলে যোগ না দিলে তা সার্ভিস ব্রেক’, শিক্ষক বদলি ইস্যুতে কড়া কলকাতা হাই কোর্ট]
বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ ডা. সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘শুধু ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি নয়। দু’জন ডোমকেও নিয়ে হাজির হই। রীতিমতো ডাক্তারি অ্যাপ্রন পরে মুখে-মাথায় মাস্ক দিয়ে তিনজনকে নিয়ে ওটিতে ঢুকলাম। পাশে সহকর্মীরা। ভাল করে দেখে বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে বল্লমের মাথাটা কেটে ফেলা হল।’’ মনোজের কথায়, ‘‘হালকা টান দিতেই বল্লমের দণ্ডটি বেরিয়ে এল।’’ এরপর ধীরে ধীরে একের পর এক অংশ জুড়ে ফেলা হয়। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর আপাতত আইসিইউ-তে রয়েছেন হেমন্ত।
আজ মঙ্গলবার থেকে তাঁকে তরল খাবার দেওয়া হবে। দিন সাতেক পর ছুটি দেওয়া হবে। সপ্তর্ষি জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচারের সময় মাত্র দুই ইউনিট রক্ত দিতে হয়েছিল। মনোজের কথায়, ‘‘জীবনে অনেক অস্ত্রোপচার করেছি। কিন্তু বৈদ্যুতিক করাত নিয়ে ওটিতে ওয়েল্ডিং মিস্ত্রির সাহায্যে অস্ত্রোপচার জীবনে এই প্রথম!’’