দেব গোস্বামী, বোলপুর: শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা আয়োজন করুক বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষই। আর তা হোক পূর্বপল্লির মাঠে। সেই দাবি তুলে এবার বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিলেন বোলপুরের ব্যবসায়ী সমিতি ও কবিগুরু হস্তশিল্পী উন্নয়ন সমিতি। শান্তিনিকেতনকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেওয়ার পর এবছর পৌষমেলা নিয়ে আশার আলো দেখছেন ব্যবসায়ী থেকে হস্তশিল্পী সকলে। সেই ঐতিহ্যমণ্ডিত চেনা আবেগের পৌষ উৎসব পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে আনার দাবিতেই সরব হয়েছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্যবাহী মেলা এতদিন পরিচালনা করে এসেছে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ২০১৯ সালের শেষবার পূর্বপল্লির মাঠে হয়েছিল পৌষমেলা। বিগত কয়েক বছর ধরে বিশ্বভারতীর তত্ত্বাবধানে প্রায় বন্ধ হয়েছে পৌষ উৎসব। যদিও গত বছর রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় এবং জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পূর্বপল্লির মাঠেই বিকল্প পৌষমেলার আয়োজন করা হয়। তবে এবছর পৌষমেলা প্রসঙ্গে স্থানীয় হস্তশিল্পীদের দাবি, "হস্তশিল্পী-সহ হাজার হাজার রবীন্দ্র প্রেমী মানুষ এই মেলার দিকে এখনও তাকিয়ে থাকেন। ঐতিহাসিক এবং ঐতিহ্যমণ্ডিত শান্তিনিকেতনের মেলা আবারও স্বমহিমায় ঐতিহ্য ফিরে আসুক এবং পৌষমেলা করা হোক শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে পূর্বপল্লির মেলা প্রাঙ্গণে।"
সন্ধের পৌষমেলা জমজমাট। নিজস্ব চিত্র।
হস্তশিল্প সমিতির সম্পাদক আমিনুল হুদা জানান, "পৌষমেলা বাঙালি তথা দেশের আবেগ ও গর্বের। গ্রামীণ অর্থনীতির বুনিয়াদ। এই মেলার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। মেলার সঙ্গেই গ্রামীণ হস্তশিল্প ও হস্তশিল্পীদের সঙ্গে বিশ্বভারতীর আর্থিক মেলবন্ধন অটুট রয়েছে। এবছর পৌষমেলা করার গঠনমূলক সিদ্ধান্ত নিক বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট।" ব্যবসায়ী সমিতির সুব্রত ভকত ও সুনীল সিংহ জানান, "পূর্বপল্লির মাঠে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা ফিরিয়ে আনুক বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সদর্থক ভূমিকা পালন করে দ্রুত প্রশাসনিক বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক।"
শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার জানান,"ব্যবসায়িক ও হস্তশিল্পীরা মেলায় অংশগ্রহণ করে। ট্রাস্টের মেলা হলেও বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রী কর্মী অধ্যাপক তাঁরা এই মেলা পরিচালনা করে। আমরা চাই পূর্বপল্লির মাঠেই মেলার আয়োজন করুক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।" বিশ্বভারতী সূত্রে জানা যায়, উপাচার্য, প্রশাসনিক আধিকারিক, কর্মীমণ্ডলী যৌথ বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরেই বিশ্বভারতী সর্বোচ্চ রীতি নির্ধারক কমিটি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পৌষমেলার আয়োজন হতে পারে। তবে এ বিষয়ে আগামী সপ্তাহেই উপাচার্য ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের জরুরি বৈঠক রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বিনয় কুমার সোরেন জানান, "হস্তশিল্পী ও ব্যবসায়ীদের স্মারকলিপি ইতিমধ্যেই কর্মসচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।"