shono
Advertisement

মায়ের মন্দিরে ব্রাত্য মেয়েরাই! কালিয়াগঞ্জের ‘বয়রাকালী’র পুজোর আয়োজনে শুধু পুরুষরাই

কী গভীর রহস্য লুকিয়ে রাজনন্দিনী ঠাকুরদালানের আনাচে কানাচে?
Posted: 06:17 PM Nov 11, 2023Updated: 08:18 PM Nov 11, 2023

শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: মায়ের মন্দিরে মেয়েরা ব্রাত্য। দেবীর পুজোর (Kalipuja 2023) আয়োজনে মন্দিরের অন্দরে প্রবেশের কোনও অনুমতি নেই মহিলাদের। কী গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে রাজনন্দিনীর ঠাকুরদালানের আনাচে কানাচে? যার জন্য কালিয়াগঞ্জের প্রাচীন মন্দিরের অন্নভোগ রান্নাতেও অংশ নিতে পারেন না মহিলারা। মহিলাদের বদলে মন্দিরের অন্দরমহলের যাবতীয় কাজ সামলান পুরুষবাহিনী।

Advertisement

রাজনন্দিনী বেশে এখানে দেবী মা ‘জীবন্ত’ হন অমাবস্যার রাতে! কালীপুজোর সকালে রাইফেলধারী সশস্ত্র পুলিশের ঘেরাটোপে দেবী সেজে ওঠেন সোনার রকমারি অলঙ্কারে। এই পুজো নিয়ে রয়েছে হরেক লোকগাথা। শ্রীমতি নদীতে নৌকা ভাসিয়ে মাছ ধরতে এসে দেবীকে পুজো করেছিলেন মৎস্যজীবীরা। ঘনজঙ্গলে বয়রা গাছের তলায় হেলায় পড়ে থাকা পাথরের বেদীতে দূর্বা, ফুল, বেলপাতা নিবেদন করে পুজোর সূচনা করেছিলেন তাঁরাই। কথিত আছে, দুষ্কৃতীরা লুঠ করার আগে শক্তি অর্জনের লক্ষ্যে এই জঙ্গলের বেদীকে পুজো করতেন।

[আরও পড়ুন: রঙ্গলীলার ভিডিও প্রকাশ করব! নাম না করে অমিতাভ চক্রবর্তীর কেচ্ছা ফাঁসের হুঁশিয়ারি অনুপমের]

১৮৯৮ সাল, তখন নাগাদ ব্রিটিশ শাসন চলছে। নদীর অদূরে অবিভক্ত দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ থানার উলটোপাড়ে টিনের চালা ঘরে মাটির প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করে কালীপুজোতে মেতে ওঠেন নির্জন জনপদের গুটিকয়েক বাসিন্দা। তার পর শ্রীমতির বুক দিয়ে ভেসে গিয়েছে অনেক রক্ত। ইংরেজরা বিদায় নিয়েছেন। ১৯৬৮ থেকে গড়ে উঠেছে আজকের ‘শ্রী শ্রী বয়রা কালীমাতা’ মন্দির।

নদীর ওপারে বাংলাদেশ। এপাড়ে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জের কালীমায়ের দেবীমূর্তি মাত্র তিন দশক আগে (১৯৯৮) কলকাতার ভাস্কর মৃণাঙ্গ পালের হাতের যাদুতে দেবী অষ্টধাতুতে রূপান্তর হয়। দেবীর নামের মাহাত্ম্য নিয়ে নানা জনশ্রুতি রয়েছে। স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিদের দাবি, ১৮৯৮-এর কালিয়াগঞ্জ থানার তৎকালীন ওসি নাজমুল হকের ভাই কানে বয়রা ছিলেন,তখন ভাইয়ের সুস্থতার জন্য পুলিশ দাদা নাজমুল কালীমাতার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন। তাতে দেবীর স্বপ্নাদেশে ভাই পুরো সুস্থ হয়ে উঠেন। সেই থেকে না কি দেবী ‘বয়রাকালী’ নামে পরিচিত।

 

ভদ্র পরিবারের দানের জমিতে নির্মিত এই মন্দির। পরিবারের সদস্য তিমির ভদ্র বলেন,”আটের দশকে কালীপুজো চলাকালীন মন্দিরের ভিতরে এক মহিলার শাড়িতে আচমকা আগুন ধরে হুলুস্থুল কাণ্ড সৃষ্টি হয়। তার পর থেকে কোনও মহিলার মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়।” তিনবছর ধরে পশুবলি আর হয় না। তবে দেবীমায়ের চক্ষুদানের মাহেন্দ্রক্ষণে পরপর দুটি পাঠা বলির রীতি। পরম্পরা মেনে আজও অব্যহত রয়েছে। পুজোর যুগ্ম সম্পাদক বিদ্যুৎবিকাশ ভদ্র বলেন,”কোভিড অতিমারি থেকে বন্ধ পশুবলি। ফলে পুজোর দীর্ঘ বছরের ঐতিহ্য মানা সম্ভব নয়।” পুজোর সূচনাকাল ঘিরে বির্তক থাকলেও প্রায় শতবর্ষ উত্তীর্ণ বলে জানান আরেক সম্পাদক সৌমেশ লাহিড়ী।

[আরও পড়ুন: ‘এজেন্সির সঙ্গে লড়তে গেলে নিজেকে ঠিক রাখতে হবে’, তৃণমূলকে ‘পাঠ’ অর্জুনের]

‘রাজনন্দিনীমাতা’ রূপে দেবীর রাজকীয় পুজোর আয়োজন হয়ে থাকে। পুঁটি-সহ বোয়াল, শোল, শাল, রুই পাঁচরকম মাছের ব্যঞ্জনে দেবীর অন্নভোগ রান্না করেন ব্রাহ্মণরা। সেইসঙ্গে লুচি- সুজি-সহ রকমারি কাঁচা ফল তামার পাত্রে সাজিয়ে দেবীর কাছে নিবেদন করা হয়। তবে পুজোর উপাচার, আয়োজনে মহিলাদের প্রবেশ নেই মন্দিরের অন্দরে। বংশ পরম্পরায় পুজা অর্চনায় ছিলেন তারাপদ ভাট্টাচার্য। তাঁর উত্তরসূরি সময় ভট্টাচার্য প্রায় ৩২ বছর ধরে মায়ের পুজো করছেন। তাঁর পর্যবেক্ষণ, “দেবী মা পুজোর রাতে নির্জন পথে নূপুর পরে হেঁটে যান কয়েক মুহূর্ত।” পুজোর পরের দিন সন্ধেয় দেবীর অলঙ্কার খুলে বাক্সবন্দি করে বন্দুক উঁচিয়ে পুলিশ পাহারায় কালিয়াগঞ্জ থানার লকার জমা রাখা হয়। ঐতিহ্য অনুযায়ী কালিয়াগঞ্জ থানার আইসি সুবল ঘোষ এবার পদাধিকারের পুজো কমিটির সভাপতির দায়িত্বে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup রাজধানী এক্সপ্রেস toolbarvideo ISL10 toolbarshorts রোববার