গৌতম ব্রহ্ম: পাঁজির গেরোয় পয়লার আকাশে নামল অমাবস্যার অন্ধকার! তাও আবার একশো বছর পর।
অন্ধকার নামল ব্যবসায়ী, দোকানদার এবং অবশ্যই পুরোহিতদের মুখেও। কারণ, এই অমাবস্যা মেশানো পয়লা বৈশাখে মাঙ্গলিক কাজ করলে লাভের থেকে ক্ষতিই বেশি হবে। এমনই আশঙ্কা বৈদিক পণ্ডিত ও পুরোহিতদের।
এবার ১৫ এপ্রিল, রবিবার বাংলা নতুন বছর শুরু হচ্ছে। সকাল সাতটা বাহান্ন মিনিটে অমাবস্যা লাগছে। ছাড়ছে সোমবার সকাল সাতটা একুশে। এই সাড়ে তেইশ ঘণ্টা কোনও শুভ কাজ শুরুর কোনও যোগ নেই। তা সে হালখাতা হোক বা নতুন ব্যবসার গোড়াপত্তন। গৃহপ্রবেশ হোক বা নামকরণ। পণ্ডিতদের পরামর্শ, পয়লা বৈশাখে মাঙ্গলিক কোনও কাজ বা পুজোপাঠ করতে চাইলে সকাল সাতটা বাহান্নর আগে সেরে নিতে হবে। না হলে কালযোগের কবলে পড়তে হবে। বরং পয়লা বৈশাখ না করে শুভ কাজগুলি দু’দিন পর অর্থাৎ বুধবার অক্ষয় তৃতীয়ার দিন করলে অনেক ভাল ফল মিলবে।
[শুধু রসনাতৃপ্তি নয়, ফলের রাজা বাড়াবে আপনার ত্বকের জেল্লাও]
সম্রাট আকবরের আমল থেকে পয়লা বৈশাখ পালনের রেওয়াজ শুরু। তখন চৈত্রমাসের শেষ দিনের মধ্যে বাদশাকে সমস্ত খাজনা মিটিয়ে দিতে হত। পয়লা বৈশাখ ভূমির মালিক মিষ্টিমুখ করাতেন। হিসাব রাখার নতুন খাতা বা হালখাতা চালু হয় এদিন। সেই থেকে পয়লার গায়ে মিষ্টিমুখ, বকেয়া মেটানো, হালখাতা শব্দগুলি জুড়ে গিয়েছে। পরবর্তীকালে ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করার জন্য এই দিনটিকে বেছে নেন। বহু ব্যবসায়ী পরিবার বংশপরম্পরায় এই দিনটিতে উৎসব, পুজোপাঠের ব্যবস্থা করে আসছে। কিন্তু পাঁজির গেরোয় এবারই তাল কাটল। পয়লার আকাশে নামল অমাবস্যার অন্ধকার। বৈদিক পণ্ডিত পুরোহিত মহামিলন
কেন্দ্র ও মানিকতলা টোলের সভাপতি পণ্ডিত নিতাই চক্রবর্তী জানিয়েছেন, একশো বছর পর এমন কাণ্ড ঘটল। পয়লা বৈশাখে অমাবস্যা পড়ল। এটি অত্যন্ত বিরল ঘটনা। অনেকেরই পয়লা বৈশাখে পুজোপাঠ, অনুষ্ঠানের বংশগত ঐতিহ্য রয়েছে। তাঁদের ক্ষেত্রে নিতাইবাবুর প্রেসক্রিপশন, লক্ষ্মী-গণেশের পুজোর পাশাপাশি কালী পুজো করে নিন। তাহলে তিথির দোষ কিছুটা কাটবে। তবে বেশিরভাগ পুরোহিতই অক্ষয় তৃতীয়ায় মাঙ্গলিক কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
[সস্তার কেতাদুরস্ত জুতো পরেন? স্পন্ডিলোসিস ডেকে আনছেন না তো!]
বেনারসের পুরোহিত আচার্য গৌতম ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, এ বছর পয়লা বৈশাখে তিনটি যোগের সমাপতন ঘটেছে। শুক্র পুষ্য উৎপাতযোগ, জায়ী জয় যোগ ও সর্বার্থ সিদ্ধি যোগ। ৭০-৮০ বছরে একবার এমন অমাবস্যা আসে। কৌশিকী অমাবস্যার থেকেও এই অমাবস্যার পুণ্যফল বেশি। তন্ত্রসাধকদের পক্ষে অত্যন্ত শুভ। অনেক সুকৃতির জোরে এমন তিথি পান সাধকরা। কিন্তু গৃহপ্রবেশ, নামকরণ, ব্যবসার শুরু, সাধভক্ষণের মতো সাধারণ মাঙ্গলিক কাজের জন্য এই তিথি ‘শুভ’ নয়। গৌতমবাবুর পরামর্শ, এবারের পয়লায় তন্ত্রমতে শক্তির আরাধনা করে অক্ষয় তৃতীয়ায় ‘শুভ’ কাজ করলে অনেক ভাল ফল মিলবে। জোড়া সুফল মিলবে। মৌনি স্নানের যোগও রয়েছে এবারের বৈশাখী অমাবস্যায়। ‘বঙ্গীয় পুরোহিত কল্যাণ পরিষদ’-এর সাধারণ সম্পাদক সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য অন্য মত পোষণ করেন। তিনি জানালেন, তিথি হিসাবে নয়, পয়লা বৈশাখের মাহাত্ম্য বর্ষশুরুর দিবস হিসাবে। তাই অমাবস্যার বিষয়টি এলেও কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অমাবস্যা কী অশুভ? তাহলে এই তিথিতে কালীপুজো হত না। তবে হ্যাঁ, মন যদি সায় না দেয় তবে একদিন পিছিয়ে অক্ষয় তৃতীয়ায় পুজোপাঠ করাই ভাল।
The post ১০০ বছর পর অন্ধকার বাঙালির হালখাতায়, চিন্তায় ব্যবসায়ীরা appeared first on Sangbad Pratidin.