অর্ণব আইচ: শহরের পথে যেন একেবারে সিনেমা৷ দৃশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছে ‘ধুম’-এর কথা। প্রচণ্ড গতিতে বেরিয়ে যাচ্ছে স্কুটি। তার পিছনে আরও একটি বাইক। দ্বিতীয় বাইকটি আরও গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এক লহমায় দেখলে মনে হতে পারে গভীর রাতে ফাঁকা রাস্তায় শহরে চলছে ‘বাইক রেসিং’। এভাবেই চলল মিনিট কয়েক।
তারপরই দ্বিতীয় বাইকটি ধরে ফেলল স্কুটিটিকে। আরোহী তাঁর বাইক থেকে লাফ দিয়ে নেমে চেপে ধরলেন স্কুটির আরোহীর কলার। তার কাছ থেকে উদ্ধার হল ছিনতাই হওয়া মোবাইল। ওই যুবক ও তার আরও দুই সঙ্গী পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু তার আগেই সিনেমার কায়দায় তিনজনকে আটকে রাখলেন দুই বন্ধু। একই সঙ্গে খবর দেওয়া হয় পশ্চিম বন্দর থানার পুলিশকে। পুলিশ গিয়ে তিন মোবাইল ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে।
[ আরও পড়ুন: ‘জয় শ্রীরাম’ নিয়ে অমর্ত্য সেনের বক্তব্য লেখা হোর্ডিং কাদের? উঠছে প্রশ্ন]
অনুরাগ তিওয়ারি, সুরজ মণ্ডল ও রোহিত রায় তিনজনই দক্ষিণ বন্দর এলাকার বাসিন্দা। দিনের বেলায় তাদের মধ্যে কেউ ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করে। কেউ বা ছোটখাটো অন্য ধরনের কাজও করে। রাত হতেই বাইক নিয়ে শুরু করে ছিনতাই। তাদের মূল টার্গেট ছিল মোবাইল। সম্প্রতি শহরের একাধিক জায়গায় স্কুটি ও বাইক নিয়ে মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
বালিগঞ্জের গুরুসদয় দত্ত রোডের উপর চলন্ত বাইক থেকে এক যুবকের মোবাইল ছিনতাই করে পালায় ছিনতাইকারীরা। আবার উত্তর কলকাতার বড়তলা এলাকার যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউয়ের উপর ঝাড়খণ্ডের ধানবাদের বাসিন্দা এক যুবকের হাত থেকে মোবাইল ছিনতাই করে পালায় দুষ্কৃতীরা। তারপর একই ধরনের ঘটনা ঘটল পশ্চিম বন্দর এলাকার সিক লেনের মোড়ের কাছে। পুলিশ জানিয়েছে, তখন রাত প্রায় দুটো। অভিযোগকারী যুবক ও তাঁর বন্ধু দাঁড়িয়েছিলেন সেন্ট্রাল গার্ডেনরিচ রোডের উপর সিক লেনের মোড়ের কাছে। মোবাইলে কিছু দেখছিলেন তাঁরা। গভীর রাতে অনেক যুবকই ওই রাস্তা দিয়ে প্রচণ্ড গতিতে বাইক নিয়ে যাতায়াত করেন। তাই দুই বন্ধু বিশেষ কিছু বুঝতেও পারেননি। হঠাৎই স্কুটি নিয়ে তিন যুবক ওই জায়গায় আসে।
[ আরও পড়ুন: এবার নজরে কালীঘাট সেতু, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২৪ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে যান চলাচল]
কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁদের হাত থেকে মোবাইল ছিনতাই করে উধাও হয়ে যায় তারা। কিন্তু দমে যাননি দুই বন্ধু। তাঁদের কাছেও ছিল বাইক। ছিনতাইকারীদের স্কুটি তাড়া করেন তাঁরা। পিছনে অন্য বাইক তাড়া করেছে বুঝতে পেরে স্কুটি রুদ্ধশ্বাসে ছুটতে থাকে। এ-গলি, সে-গলি দিয়ে তারা পালানোর চেষ্টা করে। কিন্তু হাল না ছেড়ে তাদের পিছু নেন দুই বন্ধু। শেষ পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের ধরতে বাইকের গতি বাড়িয়ে দেন তাঁরা।
ভূকৈলাস রোডের কাছে এসে স্কুটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তাঁদের বাইক। ততক্ষণে ছিনতাইকারীদের স্কুটির তেলও শেষ হয়ে এসেছিল। দুই আরোহী নেমে ছিনতাইকারীদের ধরে ফেলেন। পালানোর চেষ্টা করে তারা। কিন্তু তার আগেই তাদের আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে পশ্চিম বন্দর থানার পুলিশ এসে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার হয় মোবাইলটি। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, ছিনতাইকারীদের কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। এক স্কুটিতে ছিল তিনজন। পালানোর সময় কোনও দুর্ঘটনা যদি ঘটত, তার ফল হত মারাত্মক। শহরের অন্য ছিনতাইগুলির সঙ্গে অভিযুক্তদের যোগাযোগ রয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
The post শহরের রাস্তায় ‘ধুম’, বাইকে ধাওয়া করে ছিনতাইবাজদের স্কুটি ধরলেন দুই বন্ধু appeared first on Sangbad Pratidin.