বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: সাধারণ সম্পর্ক সারথি আর সওয়ারির। অন্তরের সম্পর্ক সুহৃদের। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর (Biman Basu) দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছরের ছায়াসঙ্গী তথা আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিএম সদর দপ্তরের গাড়িচালক দিলীপ গিরির মৃত্যু হল শনিবার রাতে। খবর শুনে ভেঙে পড়লেন বিমান বসু। প্রথমে তিনি করোনায় আক্রান্ত বলে মনে করা হলেও, রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। করোনার কামড় থেকে বাঁচলেও হৃদরোগ কেড়ে নিল ষাটোর্ধ্ব দিলীপ গিরির জীবন। তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া আলিমুদ্দিনের অন্দরে। সিপিএম নেতারা একে একে শোকপ্রকাশ করেছেন।
খাতায়কলমে কমরেড নন দিলীপ গিরি, পার্টি অফিসের এক গাড়িচালক মাত্র। কিন্তু বর্ষীয়ান বাম নেতা তথা বামফ্রন্ট রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর সঙ্গে দিলীপ গিরির সখ্য অনেকটাই গভীরের। ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ছায়াসঙ্গীর মতো বিমান বসুর সঙ্গে ঘুরতেন তিনি। নানা ওঠাপড়ার সাক্ষীও থেকেছেন। একে অপরের প্রতি এতটাই শ্রদ্ধাপ্রবণ ছিলেন যা দেখে অবাক হতেন অন্যেরাও। পার্টির হোলটাইমার বিমান বসু পার্টি অফিসে থাকার সুবাদে আলোচনা, পরামর্শের আদানপ্রদান একটু বেশিই হতো। শুধু বিমান বসুই নন, অন্যান্য নেতা, কর্মীদের সঙ্গেও দিলীপ গিরির আন্তরিক সম্পর্ক ছিল। তাঁর মতো প্রকৃত ভাল মানুষ কমই দেখেছেন, এমনই অভিজ্ঞতা পার্টির কর্মীদের।
[আরও পড়ুন: দীর্ঘ পরিশ্রম সার্থক, প্রধানমন্ত্রীর হেলথ আই-কার্ড প্রকল্পের নেপথ্যে মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী]
জানা গিয়েছে, দিন তিনেক আগে বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভরতি হন দিলীপ গিরি। শুক্রবার তাঁর করোনা পরীক্ষা হয়। শনিবার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে বলে জানান দলের চিকিৎসক নেতা ফুয়াদ হালিম। তবে জ্বর ও হৃদযন্ত্রের সমস্যায় শারীরিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। শনিবার গভীর রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ষাটোর্ধ্ব দিলীপ গিরি। এই খবর আলিমুদ্দিনে পৌঁছনো মাত্র সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়েন বিমান বসু। তাঁর এতদিনকার অন্তরঙ্গ সঙ্গীর প্রয়াণে নিজেকে সামলে রাখতে পারছিলেন না। সেটাই স্বাভাবিক।
[আরও পড়ুন: ‘ফাঁকা চেয়ার অনেক কথা বলে!’ রাজভবনে চা-চক্রে মমতার অনুপস্থিতিতে রুষ্ট ধনকড়]
এদিকে, আলিমুদ্দিনে করোনা (Coronavirus) আতঙ্ক চরমে। তিনজন গাড়িচালক, কর্মী ছাড়াও পার্টি অফিসের সবসময়ের দায়িত্বে থাকা হোলটাইমার সর্বাণী সাঁতরাও করোনায় আক্রান্ত বলে জানা গিয়েছে। এ নিয়ে সিপিএম সদর দপ্তরে ৭ জন করোনা পজিটিভ। বর্ষীয়ান নেতা বিমান বসুকে কার্যত ঘরবন্দি করে রাখা হয়েছে। দলের চিকিৎসক-নেতাদের পরামর্শ, তিনতলায় নিজের ঘর থেকে যেন বাইরে না বেরন বিমান বসু। এবং তাঁর সঙ্গে দেখা করার ক্ষেত্রেও জারি হয়েছে বিধিনিষেধ। এমনকী এই মুহূর্তে রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও আর একান্ত প্রয়োজন ছাড়া পার্টি অফিসের আসছেন না। এই মুহূর্তে রাজ্য বামফ্রন্টের বেশ কয়েকজন তাবড় নেতানেত্রীই করোনায় কাবু। ফলে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতেই হচ্ছে।
The post ৩০ বছরের ছায়াসঙ্গীর প্রয়াণ, দিলীপ গিরিকে হারিয়ে নিঃসঙ্গ বিমান বসু appeared first on Sangbad Pratidin.