shono
Advertisement

বিতর্ক ছাপিয়ে ‘এভারেস্টের চূড়া’য় পৌঁছেছিলেন রাওয়াত

স্মৃতিচারণায় প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরী।
Posted: 11:03 AM Dec 09, 2021Updated: 11:03 AM Dec 09, 2021

প্রথম ‘সিডিএস’ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছিল। পরে, মন্ত্রকের পক্ষ থেকেই বিপিন রাওয়াতের নাম ঘোষণা করা হয়। অভিজ্ঞতা, পদমর্যাদা, যোগ্যতা সবদিক থেকেই তিনি ছিলেন অবিকল্প। এই মর্মান্তিক মৃতু্যতে আমি শোকাচ্ছন্ন। লিখছেন প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল শঙ্কর রায়চৌধুরী

Advertisement

জেনারেল বিপিন রাওয়াত যখন দেশের প্রথম ‘চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ’(সিডিএস) হন, তখন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। প্রকৃত প্রস্তাবে, ওই গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য তিনজন সেনাকর্তার কথা ভাবা হয়েছিল। তিনজনেরই ‘সিনিয়রিটি’ ছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত সব প্রতর্কে ইতি টেনে কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করে যে, বিপিন রাওয়াত-ই হবেন ‘চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ’। অনস্বীকার্য যে, বিপিন রাওয়াত পেশাগত পরিক্রমায় অত্যন্ত সুযোগ্য। এই বিষয়ে সেনাবাহিনীর প্রত্যেকেই আশা করি সহমত হবেন।

তাঁর রাজনৈতিক সম্পর্ক বা যোগাযোগ নিয়ে সেভাবে কিছু বলা উচিত হবে না। কেননা, বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল বা সক্রিয় রাজনীতিতে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন– এমনটা বলা যাবে না। আর, আমি মনে করি, এভাবে কোনও সেনাকর্তা রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখতে পারেন না বা সংযোগ থাকা উচিতও নয়।

[আরও পড়ুন: যান্ত্রিক ত্রুটি না নাশকতা? সেনা সর্বাধিনায়ক বিপিন রাওয়াতের মৃত্যু ঘিরে উঠছে প্রশ্ন]

ইন্ডিয়ান আর্মি, এয়ার ফোর্স বা নেভি– এই তিন বাহিনীর থেকেই দেশের সামরিক বাহিনীর প্রধান বা ‘সিডিএস’ নির্বাচিত হতে পারেন। প্রথম ‘সিডিএস’ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিরক্ষামন্ত্রকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। পরে মন্ত্রকের পক্ষ থেকেই বিপিন রাওয়াতের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। প্রতিরক্ষামন্ত্রক তাঁকে গুরুত্ব দেয় ‘মাউন্টেন অপারেশন’ বা পাহাড়ি প্রতিবেশে যুদ্ধ করার অনুভবের উপর। তখন ‘সিডিএস’ পদে এমন একজনের প্রয়োজন ছিল, যাঁর একইসঙ্গে পাহাড়, সমতলভূমি ও মরুভূমিতে কাজ করার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা আছে। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গি দমনের প্রশ্নেও।

‘সিডিএস’ পদের জন্য অভিজ্ঞতা, পদমর্যাদা, যোগ্যতা এই ধাপগুলি বিবেচনা করা হয়। সেই সময় পদমর্যাদার দিক থেকে জেনারেল বিপিন রাওয়াত-ই ছিলেন সবথেকে ‘সিনিয়র’। তবে পদমর্যাদার পাশাপাশি যোগ্যতার নিরিখটিও গুরুত্ববহ। কথিত, মনোনয়ন ঘিরে নিয়ে তখন নাকি তিন বাহিনীর কর্তাদের মধ্যে মনোমালিন্যও হয়। তবে তা অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাইরে থেকে সাধারণ মানুষ ওই ব্যাপারে কিছুই জানতে পারেন না। জানানো সংগত বলেও মনে করি না।

এই স্মৃতি-তর্পণে বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে জেনারেল বিপিন রাওয়াতের বাবা লেফটন্যান্ট জেনারেল লক্ষ্মণ সিং রাওয়াতের কথা। তিনি নিজেও একজন সেনাকর্তা ছিলেন। বিপিন রাওয়াত সরাসরি কখনও আমার অধীনে কাজ করেননি। কিন্তু আমি নিজে তাঁর বাবা লেফটেন্যান্ট জেনারেল লক্ষ্মণ সিং রাওয়াতের অধীনে কাজ করেছি। আমি যখন তাঁকে দেখেছি, তখন তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। আর, আমি সবে ‘ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমি’ থেকে পাস করেছি। তিনি ১১ গোর্খা ব্যাটালিয়নের পদস্থ কর্তা ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিত্ব আমাকে মুগ্ধ করেছিল। বিপিন রাওয়াত নিজেও ছিলেন অত্যন্ত দক্ষ অফিসার। তা নাহলে কি এই পদ, যাকে ‘এভারেস্টের চূড়া’ বললেও ভুল হয় না, সেখানে উন্নীত হওয়া যায়?

এই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা কেন ঘটল, তা নিয়ে অহেতুক মন্তব্য করা উচিত হবে না। কারণ, ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা অপেক্ষা করে রয়েছি সেই তদন্ত রিপোর্টের জন্যই। এই করুণ মৃত্যুর প্রতিচ্ছায়া আমাকে বহুদিন তাড়িত করবে।

(মতামত নিজস্ব)

[আরও পড়ুন: বিপিন-পত্নী মধুলিকার প্রয়াণে ‘স্বজন’ হারালেন অন্যান্য শহিদ জওয়ানদের স্ত্রীরা]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement