রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। দেশের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেই প্রাণপুরুষ মনে করে ভারতীয় জনতা পার্টি (BJP)। আজকের পশ্চিমবঙ্গ তাঁর জন্যেই পশ্চিমবঙ্গ, এমনই মনে করেন তাঁরা। আর তাই রবিবার অর্থাৎ ২০ জুন দিনটিতে তাঁরা পালন করছে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’। বিজেপি রাজ্য দপ্তরের সামনে তাঁর ছবিতে মাল্যদান করে সমবেত হয়েছেন বিজেপির নেতারা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনার ১৯ জন বিধায়ক। তাঁদের এই ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’কে পালটা খোঁচা দিয়ে তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ওদের একার নয়। আলাদা করে এই দিবস পালনের অর্থ নেই।
[আরও পড়ুন: প্রায় কোটি টাকার ওষুধ নষ্টের আশঙ্কা, স্বাস্থ্যদপ্তরকে জানাল বেলেঘাটা আইডি]
কিন্তু কেন আচমকা বাংলায় ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’? এই দিনের তাৎপর্যই বা কী? সকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় তারই ব্যাখ্যা করেছেন বিজেপি নেতারা। তথাগত রায়, শুভেন্দু অধিকারীদের বক্তব্য, ১৯৪৭ সালের ২০ জুন ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গ আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের অংশ হয়। সেদিন শ্যামাপ্রসাদ-পন্থী ৫৪ জন বিধায়কের প্রবল দাবির কাছেই পশ্চিমবঙ্গ স্বীকৃতি পায় বলে দাবি তাঁর।
এদিন দলের রাজ্য দপ্তরের সামনে এই বিশেষ দিনটি উদযাপন করতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) অভিযোগ, ”স্বাধীনতার পর থেকে কোনও নির্বাচিত সরকার আজকের দিনটির স্মরণে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনে উদ্যোগী হয়নি। কংগ্রেস, সিপিএম কিংবা আজকের তৃণমূল, কেউই দিনটার গুরুত্ব সম্পর্কে সম্যকভাবে ওয়াকিবহাল নন। কারণ, তাঁরা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অবদানকে সেভাবে স্বীকৃতি দিতে চায় না। কিন্তু তিনি না থাকলে, আজ হিন্দুদের জন্য বাংলা তৈরি হতো না। ঢাকা কিংবা ইসলামাবাদের মতো মুসলিম জায়গায় থাকতে হতো।” দলের বর্ষীয়ান নেতা তথাগত রায় (Tathagata Roy) টুইটারে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ”তিনি তাঁর বিশাল রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন ইসলামী পাকিস্তান হিন্দুদের জন্য নরকে পরিণত হবে। সেজন্য তিনি দাবি করলেন, ভারত ভাগ করল বাংলাকে ভাগ করে বাংলার হিন্দু প্রধান অঞ্চলগুলি নিয়ে একটা ‘পশ্চিমবঙ্গ’ সৃষ্টি করতে হবে যা হবে হিন্দুপ্রধান ভারতের অংশ।এ বিষয়ে প্রচার করার জন্য শ্যামাপ্রসাদ সারাবাংলা চষে বেড়ালেন এবং কংগ্রেসের সমর্থন পেলেন।” এভাবেই দিনটির বিশেষত্বের কথা লিখেছেন লকেট চট্টোপাধ্যায় থেকে নিশীথ প্রামাণিকের মতো সাংসদরাও।
রবিবার রাজ্য বিজেপি দপ্তর থেকে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে মিছিল করে বিধানসভার দক্ষিণ গেটে যান বিজেপি নেতারা। সেদিনকার ৫৪ জন বিধায়ককে স্মরণ করে দাবি তোলেন, দলমত নির্বিশেষে বিধানসভায় সমস্ত বিধায়কদের পালন করতে হবে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’। তৈরি করতে হবে স্মারকও। যদিও তাঁদের এই দিবস পালন, দাবি – এসবকে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের (TMC) রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। তাঁর পালটা বক্তব্য, যাঁরা সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বাংলাকে ভাগ করল, তাঁদের কথা শুনে কেন অন্যেরা এই দিন পালন করবে?এক্ষেত্রে তিনি ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির বিরুদ্ধে।
[আরও পড়ুন: নতুন সম্পর্কে জড়িয়েছেন বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ? মুখ খুললেন স্ত্রী সুজাতা]
তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, যতই ইতিহাস তুলে ধরে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ পালনের যৌক্তিকতা সামনে আনুক বিজেপি, এই প্রথমবার তাঁদের এই দিবস পালন বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। একুশের ভোটে ‘সোনার বাংলা’ তৈরির স্বপ্ন চুরমার হওয়ার পরও বঙ্গে নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা প্রতিষ্ঠা করতে হিন্দু আবেগে ফের উসকানি দিতেই এই কর্মসূচি রাজ্য বিজপি নেতাদের।