সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: জম্মু-কাশ্মীরের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির রণকৌশল প্রশ্নের মুখে। যা পরিস্থিতি, তাতে কাশ্মীরে বিরোধীপক্ষকে কার্যত ওয়াকওভার দিচ্ছে বিজেপি। উপত্যকাকে গুরুত্বই না দেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। ন্যাশনাল কনফারেন্স সহ-সভাপতি ওমর আবদুল্লা তো সরাসরি বলেই দিলেন, মুসলমান বিদ্বেষ থেকেই এই নীতি নিয়েছে বিজেপি।
৩৭০ ধারা প্রত্যাহার পরবর্তী জম্মু-কাশ্মীরের অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রথম বিধানসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে প্রথম দফা। বুধবার দ্বিতীয় ও ১ অক্টোবর তৃতীয় এবং শেষ দফার নির্বাচন। সপ্তাহ দুয়েক আগে জম্মুতে বসে দলীয় ইস্তাহার প্রকাশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গত দু’দিন ফের এসেছিলেন জম্মুতে। মেনধার, নৌসেরায় করেছেন জনসভা। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং রবিবার জম্মুর রাজৌরির দুই জায়গা ও পুঞ্চে করেছেন জনসভা। বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জে পি নাড্ডারও আসার কথা জম্মু-কাশ্মীরে। রোড শো করবেন জম্মু পূর্ব কেন্দ্রে। বিজেপির হেভিওয়েট নেতাদের মধ্যে শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিই গত বৃহস্পতিবার একবার এসেছিলেন কাশ্মীরে। হেলিপ্যাড থেকে সভামঞ্চে আসা ও ফেরত যাওয়া-সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ সওয়া ঘণ্টা তিনি কাটিয়েছিলেন ভূস্বর্গে। শের-এ-কাশ্মীর স্টেডিয়ামে সব মিলিয়ে ছিলেন মিনিট পঞ্চাশেক।উল্টোদিকে সোমবার পুঞ্চ ও শালটেংয়ে জনসভা করবেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস সূত্রের খবর, আগামী বুধবারও জম্মু-কাশ্মীরে আসবেন রাহুল। জম্মু এবং কাশ্মীর-দুই অঞ্চলেই থাকবে তাঁর কর্মসূচি। ইতিমধ্যেই জম্মু-কাশ্মীরে প্রচার করে গিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। ফের আসার কথা আছে তাঁর।
সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে কাশ্মীরের তিনটি কেন্দ্রের কোনওটিতেই প্রার্থী দেয়নি বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনেও ৪৭টির মধ্যে মাত্র ১৯টিতে প্রার্থী দিয়েছে তারা। তার উপর শীর্ষনেতৃত্বের কাশ্মীর নিয়ে অনীহা। এতেই উঠছে প্রশ্ন। কেন এমন নীতি নিচ্ছে বিজেপি? একটি মহলের ব্যাখ্যা, কাশ্মীর থেকে একটিও আসন জুটবে না, তা কার্যত ধরে নিয়েছে বিজেপি। তাই জম্মুর ৪৩টির মধ্যে অন্তত ৩০-৩৫টিতে জিততে চাইছে তারা। আবার কাশ্মীরে বেশি প্রচারে এলে যদি মুসলমান ভোটাররা রেগে গিয়ে একতরফা এনসি-কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে দেয়, সেই ঝুঁকিও নিতে চাইছে না তারা। তার থেকে তলে তলে বিভিন্ন স্থানীয় দল ও নির্দল প্রার্থীদের মদত করে যাওয়াকেই কম ঝুঁকির বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে।
রবিবার ডাল লেকে শিকারা র্যালি করেছেন ওমর আবদুল্লা। সেখানে সংবাদ প্রতিদিন-এর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কাশ্মীরে ওদের কিছু নেই। এখান থেকে কিছুই পাবে না, তা-ও ভাল জানে। তাই সময়, শ্রম, অর্থ ব্যয় করতে চাইছে না। তাছাড়া মুসলমান সম্পর্কে ওদের কী নীতি, তা দুনিয়া জানে। তাই তো ১৪০ কোটির দেশে ১৬% মুসলমানের মধ্যে ওরা একজনকেও পেল না, যাকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করা যায়।” শ্রীনগর কেন্দ্রের ন্যাশনাল কনফারেন্স সাংসদ আগা সইদের বক্তব্য, “ভালই হল, কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ আরও বুঝে গেল তাদের নিয়ে বিজেপির কী মানসিকতা। আশা করব, হাতেগোনা যে কয়েকজন বিজেপি সমর্থক আছেন, তাঁরাও নিজেদের কথা ভেবেই আর পদ্ম প্রতীকে ভোট দেবেন না।”
দলের এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি স্থানীয় বিজেপির কোনও নেতৃত্ব। দিল্লির কোর্টে বল ঠেলে তাঁদের বক্তব্য, এখান থেকে কাশ্মীরেও বিভিন্ন কর্মসূচির কথা বলা হয়েছিল। সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি। তবে তৃতীয় পর্যায়ের আগে কাশ্মীরেও শীর্ষনেতৃত্বের কর্মসূচি হতে পারে বলে তাঁদের দাবি। অন্যদিকে জম্মু-কাশ্মীর প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যতম মুখপাত্র রবিন্দর কুমার শর্মা বললেন, “এ আর নতুন কী? বিজেপি জানে কাশ্মীরে খাতা খুলতে পারবে না, তাই ওখানে সময় নষ্ট করতে চায় না। গায়ের জোরে কিছু মানুষ নিয়ে এসে লোক দেখানো একটা কর্মসূচি করিয়ে দেওয়া হল প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে।” পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নেতা মোহিত দার বললেন, “বিজেপি যে সাম্প্রদায়িক দল, আরও একবার তার প্রমাণ দিল। যেহেতু কাশ্মীরে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ বেশি, তাই তো ওদের কাছে কাশ্মীর অস্পৃশ্য।” প্রশ্ন হল, দেশের প্রধান শাসক দল, যারা আবার প্রকাশ্যে নিজেদের ধর্ম নিরপেক্ষ, বিশ্বের বৃহত্তম দল বলে দাবি করে। তারা কেন কাশ্মীরের এত সংখ্যক আসনে প্রার্থী খুঁজে পেল না? তাহলে কি বিভিন্ন ‘প্রক্সি’ দলের যে তত্ত্ব তুলছে বিরোধীরা, চুপচাপ তাতেই সায় দিচ্ছে বিজেপি!