সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে টানাপোড়েন ক্রমেই বাড়ছে। বিজেপি চাইছে, শোভনকে দলে টেনে তৃণমূলকে জোর ধাক্কা দেওয়ার পাশাপাশি গেরুয়া শিবিরকে আরও শক্তিশালী করতে। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে শোভনকে কলকাতা বা লাগোয়া শহরতলির কোনও সংসদীয় কেন্দ্রে প্রাক্তন মেয়রকে প্রার্থী করতে চাইছে বিজেপি। যদিও স্বয়ং শোভন এ বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত যেমন নেননি, তেমনই মন্তব্যও করেননি।
[রাফালে চুক্তিতে বাইপাস সার্জারি করেছেন প্রধানমন্ত্রী, ফের তোপ রাহুলের]
অন্যদিকে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব শোভনকে দলে রাখার পাশাপাশি পুরনো মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে ফের সচেষ্ট হয়েছে। আর এ নিয়ে ইতিমধ্যে শোভনকে শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে ফোন করে পুরনো আবেগ ও নানা সেন্টিমেন্ট উসকে দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু করেছে তৃণমূল শিবির। স্বয়ং প্রাক্তন মেয়রও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি নিজের আবেগ ও দুর্বলতার বিষয়টি এখনও অস্বীকার করেন না। বরং উলটে তিনি প্রকাশ্যেই স্বীকার করেন, তাঁর রাজনৈতিক উত্থান এবং প্রশাসনিক বিভিন্ন গুরুদায়িত্ব পাওয়ার মূল শক্তি ‘মমতাদি’। বস্তুত এই কারণে এখনও পর্যন্ত তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে কোনও স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তৃণমূল নেত্রীর ‘কানন’।
দলে টানা নিয়ে ইতিমধ্যে শোভনের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেছেন পশ্চিমবঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়। একাধিকবার কথা হয়েছে সহ-পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেননের সঙ্গেও। কলকাতার প্রাক্তন মেয়রকে গুরুত্ব দিয়ে দলে টানার মূল কারণ হিসাবে বিজেপি শিবির শোভনের কলকাতার পাশাপাশি দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রাজনৈতিক প্রভাবের অঙ্ক মাথায় রাখছে। কারণ, দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রতিটি বুথ ও কলকাতার প্রতিটি ওয়ার্ড হাতের তালুর মতোই চেনেন শোভন। এছাড়াও তৃণমূলের নির্বাচনী নানা সমীকরণ ও রণকৌশলও প্রাক্তন মেয়রের নখদর্পণে। বস্তুত এই কারণে শোভনকে যে কোনও মূলে্য দলে টানতে চাইছে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ আসনে প্রার্থী করে তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থীকেও কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে প্রাক্তন মেয়রকে ‘ট্রাম্পকার্ড’ করতে চাইছেন অমিত শাহর সেনাপতিরা।
শোভন বিজেপিতে চলে গেলে দলের একটা বড় অংশে যে প্রভাব পড়বে তা অনুমান করেই বুধবার থেকেই সক্রিয় হয়েছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। কারণ, একদিকে শোভন যেমন নির্বাচন পরিচালনায় দক্ষ, অন্যদিকে তেমনই কলকাতা ও শহরতলির পুরনো তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে প্রাক্তন মেয়রের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা অনেকখানি। বহু প্রভাবশালী তৃণমূল কর্মীর সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্কও রয়েছে বেহালা পূর্বের বর্তমান বিধায়ক শোভনের। বস্তুত এই কারণেই তড়িঘড়ি শোভনকে দলে ধরে রাখতে তৃণমূল হাইকমান্ড দলের এক দাপুটে সেনাপতিকে আসরে নামিয়েছে। তিনি শোভনকে ফোন করে পুরনো আবেগ ও অনুভূতির কথা বলে ফের দলীয় কাজে দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নামার জন্য ডাক দিয়েছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনে শোভনের জন্য বিশেষ ‘জায়গা’ রয়েছে। কিন্তু নিজের পারিবারিক ঝামেলায় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ যেভাবে নাক গলিয়েছে তাতে তিতিবিরক্ত প্রাক্তন মেয়র। বিশেষ করে তাঁর পারিবারিক ঝামেলাকে হাতিয়ার করে যেভাবে রাজনৈতিক কেরিয়ারকে নেতৃত্বের একাংশ ক্ষতি করে দিয়েছে, তা নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ প্রাক্তন মেয়র। স্বভাবতই নেত্রীকে ঘিরে পুরনো আবেগ এবং অনুভূতির পাশাপাশি এই পারিবারিক বিবাদের সময় নেতৃত্বের হাতে হেনস্তা হওয়া নিয়ে রীতিমতো ধন্দে স্বয়ং শোভনও। তাই দু-দলের, দুই শিবিরের পাশাপাশি মানসিক টানাপোড়েনে কলকাতার প্রাক্তন মেয়র।
[কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন পাতিদার নেতা হার্দিক প্যাটেল, লড়বেন লোকসভায়]
The post শোভনকে নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল শিবিরে জোর টানাটানি শুরু appeared first on Sangbad Pratidin.