বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: বঙ্গ বিজেপির ক্ষমতাসীন নেতাদের প্রতি আস্থা নেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘেরও (RSS)। নেতৃত্বের একগুঁয়ে আচরণ, ঔদ্ধত্য এবং একতরফা সিদ্ধান্তই বাংলায় দলকে ডোবাচ্ছে বলে বিজেপির (BJP) কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে সংঘ পরিবারের তরফে রিপোর্ট জমা পড়েছে। সেই রিপোর্ট হাতে পেয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চক্ষু চড়কগাছ। বঙ্গ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীকে দিল্লিতে তলব করা হলেও তড়িঘড়ি তা বদলে নয়া নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের স্পষ্ট বার্তা, মনগড়া তথ্যে ঠাসা রিপোর্ট নয়। গোটা রাজ্য ঘুরে বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরতে হবে। সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর কাছে সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার (JP Nadda) এই নির্দেশ পৌঁছতেই নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য বিজেপি। শুরু হয়েছে নতুন করে রিপোর্ট তৈরির তোড়জোড়। তবে শুধু ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীই নয়, বিক্ষুব্ধ শিবিরের নেতাদেরও সবিস্তার রিপোর্ট তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছে দলে্র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সব রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরই সংগঠনে ঝাঁকুনি দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে সূত্রের খবর। তবে দিল্লিতে বসে নয়, রাজ্যে গিয়েই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন অমিত শাহ ও জে পি নাড্ডারা।
[আরও পড়ুন: ৮ মাস ধরে ৮০ জন মিলে গণধর্ষণ ১৩ বছরের কিশোরীকে! চাঞ্চল্য অন্ধ্রপ্রদেশে]
২০১৯ সালের আগে নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ (Amit Shah) বা কৈলাস বিজয়বর্গীয়দের তদারকিতে গড়ে ওঠা বঙ্গ বিজেপির সংগঠন তিন বছরের মধ্যেই ধরাশায়ী। জনসমর্থনের গ্রাফ নিম্নমুখী। যত দিন গড়াচ্ছে, সংগঠন হয়ে পড়ছে আরও বেহাল। বিধানসভা ভোটের পর একের পর এক উপনির্বাচনে জনসমর্থন ক্রমশ তলানিতে ঠেকেছে। জনসমর্থন কমতেই রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র টানাপোড়েন। চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি। কার্যত আড়াআড়ি ভাগ হয়ে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপি।
একদিকে অধ্যাপক রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তাঁর পিছনে অন্যতম মদতদাতা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা। সুকান্ত ও শুভেন্দুদের একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বারবার মুখ খুলেছেন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, রাহুল সিনহা ও সায়ন্তন বসুরা। দমবন্ধ পরিস্থিতিতে এদের অনেকেই নীরব প্রতিবাদ করে সংগঠনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছেন। ভুল করেও পার্টি অফিসমুখো হন না রীতেশ তেওয়ারি বা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়রা।
অনেককেই উপনির্বাচনের প্রচারে দেখা যায়নি। সব খবরই যাচ্ছিল দিল্লিতে। এক বছরের মধ্যেই সংগঠনের হাল কেন এমন হল, এবার তার ময়নাতদন্তে তৎপর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বারবার বাংলার সংগঠন নিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলেছেন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা ও বি এল সন্তোষরা। বঙ্গ বিজেপির সংগঠনকে ঝাঁকুনি দিতে তাঁরা রূপরেখা তৈরি করছেন বলে সূত্রের খবর। এর মধ্যেই অফিশিয়াল লবির কাছে ‘গোদের ওপর বিষফোঁড়া’ হয়ে দাঁড়িয়েছে সংঘ পরিবারের রিপোর্ট।
[আরও পড়ুন: মেডিক্যাল রিপোর্টে লেখা যাবে না নির্যাতিতার নাম, ধর্ষণ মামলা পরিচয় গোপন রাখতে কড়া স্বাস্থ্যদপ্তর]
জানা গিয়েছে, রিপোর্টে সুকান্ত ও শুভেন্দুদের বিরুদ্ধে গুচ্ছগুচ্ছ অভিযোগ করা হয়েছে। চার দফা অভিযোগের মধ্যে অন্যতম,
- যে কোনও ক্ষেত্রে বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা। এর ফলে দলের মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দল চরম আকার নিয়েছে বলে অভিযোগ।
- দলের পুরোনো নেতাদের অসম্মান। দলের কর্মসূচিতে দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা, সায়ন্তন বসু বা রীতেশ তেওয়ারিদের ডাকা হয় না। অভিমানে অনেকেই দূরত্ব বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠে এসেছে সঙ্ঘের রিপোর্টে।
- সংঘ পরিবারের তরফে বারবার সতর্ক করা হলেও কর্ণপাত করেনি ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সিংহভাগ ক্ষেত্রেই তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই সংগঠনের মুখপত্রে বারংবার সতর্ক করা হয়।
- বলা হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে নিজেদের মহান করতে মনগড়া রিপোর্ট পাঠায় বঙ্গ বিজেপির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ভুলে ভরা থাকে। প্রকৃত সত্য রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় না বলেও সঙ্ঘ পরিবার সূত্রে খবর।
সংঘের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরেই খড়গহস্ত কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বঙ্গ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদককে ডেকে পাঠানো হলেও শেষ মুহূর্তে তাঁকে আসতে বারণ করা হয়। রাজ্য ঘুরে নিচুতলার নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী রিপোর্ট তৈরি করে তবে তাঁকে দিল্লি আসতে বলা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আর সময় নষ্ট করতে রাজি নয়। তাই ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি।