shono
Advertisement
Shiboprosad Mukherjee

'ভালোবেসেই জিনিস ফেরত দিন', দেগঙ্গার বিনয়ী ডাকাতদের বার্তা 'বহুরূপীর রবিনহুড' বিক্রমের

'বহুরূপীর বিক্রম ভালো চোখে দেখল না', দেগঙ্গার ডাকাতদলকে 'বিনয়ের সঙ্গে' জিনিস ফেরতের বার্তা শিবপ্রসাদের।
Published By: Sandipta BhanjaPosted: 11:40 AM Nov 25, 2024Updated: 12:00 PM Nov 25, 2024

সন্দীপ্তা ভঞ্জ: যেন 'বিনয়ের অবতার'! হাতে বন্দুক-বোমা। মুখে মা, দিদি সম্বোধন। এদিকে আগ্নেয়াস্ত্র উঁচিয়ে 'মালকড়ি ছাড়ার' আবদার! এহেন ডাকাতি-কৌশল যেন সিনেমার চিত্রনাট্যকেও যেন হার মানায়। দেগঙ্গায় ডাকাতি করতে যাওয়া বাড়িতে খোদ দুষ্কৃতীদেরই এমন যত্ন-আত্তির করার কায়দা দেখলে চোখ কপালে উঠবে। অসুস্থদের জল খাওয়ানো থেকে সোনার শাঁখাবাঁধানো খুলতে অস্বস্তি হলে সাবান লাগিয়ে দেওয়া, কাউকে আঘাত তো নয়ই, বরং স্রেফ মৃদু স্বরে হুমকি দিয়েই পর পর দুটো বাড়ি সাফ করে পালাল একদল ডাকাত। সম্প্রতি বাংলা ছবিতে ব্যাঙ্ক লুঠ করতে আসা ডাকাতদের 'সবিনয় আর্জি' তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। তবে 'বহুরূপী'র সেই ছ্যাঁচড়াপুরের 'বিক্রম' কিন্তু দেগঙ্গার এই ডাকাতির ঘটনা মোটেই ভালো চোখে দেখেননি।

Advertisement

সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন-এর মাধ্যমেই ওই বিনয়ী ডাকাতদলকে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বার্তা, "যেমন ভালোবেসে ডাকাতি করেছেন, তেমনই ভালোবেসে জিনিস ফেরত দিয়ে আসুন।" সংশ্লিষ্ট ঘটনাটা নিয়ে কী মত 'বহুরূপীর রবিনহুড'-এর? শিবপ্রসাদ জানালেন, "সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন-এ নিউজ আর্টিকলটা পড়লাম। প্রতিবেদনটা মজার হলেও ঘটানাটা দুঃখের। এখানে ডাকাতদল কিন্তু সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত জিনিস ডাকাতি করেছে। 'বহুরূপী'র ডাকাত কিন্তু সাধারণ মানুষের কোনও জিনিস ডাকাতি করেনি। মানুষকে ভালোবেসে ডাকাতি করে ঠিকই, তবে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে তাঁরা ডাকাতি করে না। বিক্রম কিন্তু বলেইছিল- 'সাধারণ মানুষ কষ্ট করে অর্থ উপার্জন করে যে টাকা সঞ্চয় করেছে বা তাঁর বাড়িতে যে জিনিস রয়েছে, সেই জিনিস ডাকাতি করা উচিত নয়।' বিনয়ের সঙ্গে ডাকাতি করুন বা রক্ত ঝরিয়ে ডাকাতি করুন, মানুষ তার অর্থ, সোনাদানা বা সম্পদ হারালে কিংবা নিজের প্রিয় জিনিস চলে গেলে সাধারণ মানুষের যে কী হয়, সেটা কি ডাকাতির পরে সেই মানুষটি দেখতে যাচ্ছে?" এরপরই শিবপ্রসাদের সংযোজন, "তাই এই কাজটি 'বহুরূপী'র বিক্রম প্রামাণিক কিন্তু ভালো চোখে দেখল না। সেই ডাকতদলের সমস্ত সদস্যদের বলব, যেরকম ভালোবেসে জিনিস ডাকাতি করেছেন, সেরকম ভালোবেসে সেগুলো তাঁদের বাড়িতে ফিরিয়ে দিয়ে আসবেন।"

বৃহস্পতিবার রাতে আমুলিয়ার কলাপোল গ্রামের রাস্তার ধারের দু'দিকের দুটি বাড়িতে ঢুকে করজোড়ে বিনয়ী ভঙ্গিতে 'ডাকাতিতে সহযোগিতা করুন' বলে আবেদন জানিয়েই গোটা বাড়ি সাফ করে পালিয়েছে ডাকাতদল। যা নিয়ে রবিবার দিনভর চর্চা চলল দেগঙ্গা ব্লকের গ্রামে-গ্রামে। এহেন ডাকাতদের ধরতে পুলিশকে গঠন করতে হয়েছে ‘বিশেষ তদন্তকারী দল’। তাতে রয়েছেন একাধিক ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার অফিসার, জেলা পুলিশের এক শীর্ষকর্তাও। গ্রামে সাধারণত সিসি ক্যামেরার নজরদারি থাকে না। কলাপোল গ্রামের ঘটনাস্থল থেকে পাঁচ-সাতশো মিটারের মধ্যেও কোনও সিসি ক্যামেরা ছিল না। সেই সুযোগকেই কাজে লাগায় ডাকাতদল। দুই পরিবারের অভিযোগ, দুটি বাড়ি মিলিয়ে প্রায় ৩০ ভরির বেশি সোনার গয়না ডাকাতি হয়েছে। পাশাপাশি নগদ টাকাও নিয়েছে দুষ্কৃতীরা। তবে প্রত্যেকের মোবাইল ফেরত দিয়েছে ডাকাতরা। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে বাদুড়িয়া থানা এলাকায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনার সঙ্গে এর অনেকটা মিল পাওয়া গিয়েছে।

পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুটি বাইকে ছয় জন দুষ্কৃতীর নজরে আসে মৃণাল চৌধুরির বাড়ি। রাস্তার উপর এই বাড়িতে কোনও পাঁচিল নেই, গেটও ছিল খোলা। সেই সুযোগে ছয়জন বোমা-বন্দুক হাতে সোজা ঢুকে পড়ে বাড়িতে। উপস্থিত সকলকে বন্দুক দেখিয়ে, মহিলাদের মা বলে সম্বোধন করে ডাকাতিতে সহযোগিতার অনুরোধ করে দুষ্কৃতীরা। চৌধুরিবাড়িতে অপারেশন শেষ হওয়ার কিছু সময় আগে ঠিক উলটো দিকের নিপন দেবের বাড়িতে গিয়ে দিদি-দিদি বলে ডাকতে শুরু করে কয়েকজন দুষ্কৃতী। দেব বাড়ির এক মহিলা বেরিয়ে আসতেই বন্দুক-বোমা দেখিয়ে একই কায়দায় গৃহে প্রবেশ করে দুষ্কৃতীরা। এখানেও ঠিক 'ডাকাতিতে সহযোগিতা করুন' কায়দায় শুরু হয় ডাকাতি। পাহারায় থাকা এক দুষ্কৃতী আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে পরনের গয়না খুলে দিতে বলে। তখন এক মহিলা হাত থেকে নিজের সোনার শাঁখা বাঁধানো খুলতে না পারলে, যাতে ব্যথা না লাগে তার জন্য হাতে সাবান মাখিয়ে শাঁখা খুলতে সাহায্যও করে ডাকাত। অপারেশন চলাকালীন অসুস্থ লাগছে জানালে মা বলে সম্বোধন করে রান্নাঘর থেকে জল এনেও খাওয়ায় ডাকাতরা। কাট টু চৌধুরিবাড়ির অপারেশন। মহিলাদের মা বলে সম্বোধন করেছে, সম্মান দিয়েছে। চৌধুরিবাড়ির সদস্য, পেশায় আইনজীবী প্রতিমের কথায়, "কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি, আঘাত করেনি। ওরা হিন্দি বাংলা মিশিয়ে কথা বলছিল। শুধু হুমকি দিয়ে বলেছিল, পুলিশকে জানালে পরবর্তীতে যে কোনও বিপদ আমাদের ঘটতে পারে।" দেগঙ্গার সেই ডাকাতদলকে এবার পর্দার 'বহুরূপী' রবিনহুডের বার্তা, 'ভালোবেসেই জিনিসগুলো সেই পরিবারকে ফেরত দিয়ে আসুন।'

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • দেগঙ্গার সেই ডাকাতদলকে এবার পর্দার 'বহুরূপী' রবিনহুডের বার্তা, 'ভালোবেসেই জিনিসগুলো সেই পরিবারকে ফেরত দিয়ে আসুন।'
  • 'বহুরূপী'র ডাকাত কিন্তু সাধারণ মানুষের কোনও জিনিস ডাকাতি করেনি: শিবপ্রসাদ।
  • বিনয়ী ভঙ্গিতে 'ডাকাতিতে সহযোগিতা করুন' বলে আবেদন জানিয়েই গোটা বাড়ি সাফ করে পালিয়েছে ডাকাতদল।
Advertisement