বিক্রম রায়, কোচবিহার: চেকিংয়ের নামে স্কুল ছাত্রীদের হেনস্তা বিএসএফের। প্রতিবাদ করায় জুটেছে মারধরও। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে থানায় অভিযোগ ছাত্রীদের। ঘটনাস্থল সেই দিনহাটা, যেখানে এর আগে এক রাজবংশী যুবককে স্রেফ বাংলাদেশি সন্দেহে গুলিতে ঝাঁজরা করে দিয়েছিলেন সীমান্তের জওয়ানরা। এই ঘটনা ছাড়াও একাধিকবার এখানে বিএসএফের বিরুদ্ধে গুলি চালিয়ে স্থানীয়দের মেরে ফেলা অথবা নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। বহুবার প্রতিবাদী জনতার বিক্ষোভের মুখেও পড়েছে তারা। তারপরও যে তাদের ‘যেমন খুশি চলা’র মানসিকতায় বদল হয়নি তার প্রমাণ মঙ্গলবার কোচবিহারের দিনহাটার গীতালদহের ঘটনা। যেখানে তাদের হাতে মার খাওয়া তিন মাধ্যমিকের ছাত্রীকে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। ক্ষোভে ফুঁসছেন গীতালদহ এক নম্বর পঞ্চায়েতের ভোরামপোয়েস্তি এলাকার মানুষ।
জেলার পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানান, ঠিক কী ঘটনা ঘটেছে, সেটা তিনি খোঁজ নিয়ে দেখছেন। অভিযোগ হলে ঘটনার তদন্ত হবে। ওই তিন ছাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে থানায় হাজির হয়ে এফআইআর করিয়েছেন গীতালদহ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মলয়কুমার দাস। তিনি বলেন, ‘‘এদিন স্কুলে এসে অভিভাবকরা জানান যে, তিনজন ছাত্রীকে বিএসএফ শারীরিকভাবে নিগ্রহ করেছে। তারপরেই ওই ছাত্রীদের সঙ্গে আমি থানায় যাই। এবং ছাত্রীদের পক্ষ থেকে বিএসএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’’ ঘটনাটি তিনি শিক্ষা দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: ‘অভিনেত্রী নয়, শিক্ষিত মানুষ চাই’, লোকসভার আগে নুসরত ‘বিরোধী’ পোস্টারে ছয়লাপ বসিরহাট]
ওই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী পারভিনা খাতুন, লাবণী পারভিন এবং শাহনাজ খাতুন জানান, স্কুলে মাধ্যমিকের টেস্ট চলছে। পরীক্ষা দিয়ে ফেরার সময় তাদের বিএসএফ চেক করার নামে আটকে দেয়। দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখার পর তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। সেই সময় মহিলা বিএসএফ কর্মী এসে হঠাৎ তাদের মারধর করে। কারও হাতে চোট লেগেছে। কারও কপালে। প্রায় প্রতিদিন বিএসএফের এই ধরনের হয়রানির মুখে পড়তে হয় তাদের। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে এদিন থানায় অভিযোগ জানিয়েছে তারা।
স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি মোস্তফা খোন্দকার বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলের ছাত্রীদের বিএসএফ শারীরিকভাবে নিগ্রহ করেছে। প্রাথমিকভাবে ওই ছাত্রীদের চিকিৎসা করানো হয়েছে। বিএসএফের এই ধরনের অত্যাচার মেনে নেওয়া যায় না তাই দোষীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি করেছি আমরা।” যদিও গোটা ঘটনায় বিএসএফের আধিকারিকদের মন্তব্য জানা যায়নি, তবে কর্মরত বিএসএফ জওয়ানদের দাবি, নিয়ম মেনে তল্লাশি চালানো হয়েছে। কারণ, কাঁটাতারের বেড়ার ভিতরে যে বসতি, তার মধ্যে ওই ছাত্রীদের বাড়ি। সীমান্তের গেট পেরোলেই তল্লাশির নিয়ম। তা করেছেন মহিলা বিএসএফ। কিন্তু স্কুল ফেরত পরিচিত ছাত্রীদের কেন এমন তল্লাশি, তার উত্তর মেলেনি।