স্টাফ রিপোর্টার: সীমান্তবর্তী নদীতে ভেসে থাকা গরুর গলায় বাঁধা বিস্ফোরক। লক্ষ্য বিএসএফ। বাংলাদেশে পাচারের এই নয়া কৌশলে চমকে গিয়েছিলেন বিএসএফ কর্তারা। যার রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল দিল্লিতে। তার ভিত্তিতেই তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় সর্বোচ্চ তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই পাচার-যোগ পেল সীমান্তের জেলাগুলির বেশ কিছু রাজনৈতিক প্রভাবশালীর। দিল্লিতে প্রাথমিক বৈঠকের পর এফআইআর করার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়ে গিয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকার পাচার নিয়েও সিবিআই তৎপরতা এখন তুঙ্গে। সংস্থা সূত্রে খবর, পূর্বাঞ্চলীয় দপ্তরের অফিসারদের একটি টিম তৈরি হয়েছে তদন্তে সাহায্য করার জন্য। তবে পুরো বিষয়টি ‘মনিটরিং’ হবে দিল্লি থেকেই।
সিবিআইয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে মুর্শিদাবাদের হারুডাঙা সীমান্তে বেশ কিছু গরু উদ্ধার হয়। সেগুলি বাঁধা ছিল কলাগাছের সঙ্গে। নদীতে সহজেই যাতে তারা ভেসে এপার থেকে ওপারে চলে যেতে পারে তার জন্য এই ব্যবস্থা। সেগুলির গলায় ঝুলছিল অ্যালুমিনিয়ামের ক্যান। গরুগুলি উদ্ধারের পর যা দেখে তাজ্জব হয়ে যান বিএসএফ জওয়ানরা। দেখা যায় এইসব ক্যানে রয়েছে বিস্ফোরক। সাধারণ নয়, তা আইইডি। পাচারকারীদের কাজের এই ধরনটা চমকে দেওয়ার মতো। শুধু তাই নয়, প্রায় একই সময়ে মালদহের শোভাপুর আউটপোস্টেও ৫১টি গরু উদ্ধার হয়, যা পাচার হচ্ছিল একই কায়দায়। এরপর উত্তর ২৪ পরগনার ইছামতী নদী থেকে পাওয়া যায় সাতটি গরু। যা পাচারের ধরনে চোখ কপালে ওঠে। দেখা যায়, একটি বাছুরকে তিনটি কলাগাছের সঙ্গে বেঁধে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই গাছের ভিতরে গুঁজে দেওয়া হয়েছে ক্যান। তার সঙ্গে বাঁধা একটি দড়ি। সেই দড়ি চলে গিয়েছে বহুদূর। যেটিতে বাকি গরুগুলির গলা জড়ানো রয়েছে। এবং তার মাঝে মাঝে রয়েছে সেই ক্যান। যা বিস্ফোরকে ঠাসা। অর্থাৎ, সেগুলি তুলতে গেলেই বড় বিপদ অনিবার্য। স্পষ্টত পাচারকারীদের লক্ষ্য বিএসএফ। তদন্তে দেখা যায়, শুধু সাধারণ পাচারকারীদের মাথা থেকে এমন বিপজ্জনক পরিকল্পনা বের হতে পারে না। তার মধ্যে রয়েছে বড় চক্র।
[ আরও পড়ুন: ‘সবসময় মোদির জনপ্রিয়তা জেতাতে পারবে না’, বিজেপিকে কটাক্ষ আসাদউদ্দিন ওয়েইসির ]
সেই চক্রে বাংলাদেশ যোগ রয়েছে বলে নিশ্চিত হন বিএসএফের কর্তারা। কিন্তু সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বিশেষ টিমের তদন্ত এখানেই থেমে থাকেনি। পশ্চিমবঙ্গের কোথায় কেমন যোগ রয়েছে তার তদন্তে উঠে আসে সীমান্তের কিছু প্রভাবশালীর নাম। সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের এক কর্তা বলেন, “রাজনৈতিক প্রভাবশালী, অথবা নেতা কিনা সেটা আমাদের বিবেচ্য ছিল না। আমরা দেখেছিলাম, পাচারের ক্ষেত্রে যে চক্র কাজ করছে তার নিয়ন্ত্রণে এই ব্যক্তিদের ভূমিকা কতটা। দেখা যায়, তাদের হাত রয়েছে পাচারের সঙ্গে যুক্তদের মাথার উপর। অর্থনৈতিক লেনদেনও থাকতে পারে। দিল্লিতে রিপোর্ট দেওয়ার পর সিবিআই বিষয়টি নিয়ে কী করেছে তা আমরা জানি না।” তবে বিএসএফের সূত্রটি জানায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে যে তথ্য জোগাড় করা হয়েছিল, তা বলছে গরু পাচারের যে ৯০০০ কোটির ব্যবসা ছিল সীমান্তজুড়ে তা নেমে এসেছে ১৬০০ কোটিতে। প্রথম মোদি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং সীমান্ত পরিদর্শনে এলে তাঁকেও পাচারের বিষয়টি জানায় বিএসএফ। তখনই তিনি কড়া হতে নির্দেশ দেন। তারপর পাচার অনেকটাই কমে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ছক বদল করে পাচারকারীরা। সম্প্রতি উদ্ধার বিস্ফোরক-সহ গরুগুলি তার প্রমাণ। এতে নাশকতার ছক, সীমান্তের সুরক্ষাবলয়কে দুর্বল করার কোনও জঙ্গি পরিকল্পনাও থাকতে পারে বলে অনেকের ধারণা। তাই এ নিয়ে এখন সিবিআই মাঠে নামল।
[ আরও পড়ুন: ফের রক্তাক্ত উপত্যকা, জঙ্গির গুলিতে নিহত ২ লরিচালক ]
The post গরুপাচারেও সিবিআই তদন্ত, বিএসএফের রিপোর্টের ভিত্তিতে দিল্লিতে এফআইআরের প্রস্তুতি appeared first on Sangbad Pratidin.