সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রাখতে না চাওয়ায় এক মহিলাকে খুন করেছিল গ্রামের এক যুবক। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। অভিযুক্ত যুবকের জামার বোতামের টুকরোর সূত্র ধরে তাকে পাকড়াও করা হয়। আর সেই খুনের ঘটনায় ঝাড়গ্রাম আদালত যুবককে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা করল। এই প্রথম ঝাড়গ্রাম আদালত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে। মাত্র ২২ দিনের মধ্যে মোট ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এক বছরের মধ্যে খুনের মামলায় সাজা ঘোষণা করল ঝাড়গ্রাম জেলা আদালত।
সাঁকরাইল থানার লাউদহ গ্রামের যুবক রঞ্জিৎ মান্ডিকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে আদালত। এই ঘটনা ২০২৩ সালের ১৮ এপ্রিল সাঁকরাইল থানা এলাকার। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন সাঁকরাইল থানার লাউদহ গ্রামের গৃহবধূ পূর্ণিমা মান্ডি (২৩)-র মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল গ্রামের অদূরে একটি মাঠে। পূর্ণিমার স্বামী প্রসেনজিৎ মান্ডি কর্মসূত্রে বাইরে থাকতেন। তাঁদের দুই মেয়ে, এক ছেলে রয়েছে। স্বামীর অবর্তমানে ওই মহিলার সঙ্গে গ্রামের যুবক রঞ্জিতের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে অভিযোগ। তাঁদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও ছিল বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে পারিবারিক বিবাদও চলছিল। পরিবারের কথা ভেবে এই অবস্থায় পূর্ণিমা আর ওই যুবক রঞ্জিতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু রঞ্জিৎ তা মানতে চায় না। সে খুনেরও হুমকি দেয়।
[আরও পড়ুন: আত্মহত্যা অভিনেত্রীর! WhatsApp স্ট্যাটাস ঘিরে দানা বাঁধছে রহস্য]
এর পর ২০১৩ সালের ১৮ এপ্রিল গ্রামের অদূরে ওই মহিলার ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখতে পায় গ্রামের মানুষজন। প্রাথমিকভাবে গ্রামবাসীরা ভেবেছিল তাঁকে কোনও বন্য জন্তু কামড় দিয়েছিল। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায় পেটে বারে বারে কোনও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে ওই মহিলাকে খুন করা হয়েছে। এরপর পূর্ণিমার স্বামী প্রসেনজিৎ তাঁর বড় মেয়ের কাছ থেকে পুরো বিষয়টি জানতে পারেন। এরপর ২১ এপ্রিল তিনি সাঁকরাইল থানায় রঞ্জিতের বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রীকে খুন করার অভিযোগ দায়ের করেন। ওই দিনই গ্রেপ্তার হয় রঞ্জিৎ। পুলিশ তদন্তে নেমে ঘটনাস্থল থেকে রঞ্জিতের জামার একটি বোতামের টুকরো পায়। এবং খুনে ব্যবহৃত ছুরিটিও পায়।
জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন পূর্ণিমা যখন ছাগল চরাতে গিয়েছিলেন সেখানে উপস্থিত হয়েছিল রঞ্জিৎ। সে তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলতে থাকে। ওই মহিলা রাজি না হওয়ায় তাঁকে খুন করে। এই মামলায় ২০২৪ সালে জানুয়ারি মাসে চার্জ গঠন হয়। তার আগেই পুলিশ চার্জশিট জমা দেয়। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। মোট ১৯ জন সাক্ষির সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে চারজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। যা কিনা উল্লেখ্য বলে জানা যায়। সরকারি আইনজীবী বিভাষ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই মামলায় ২২ দিনের মধ্যে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করা হয়েছে। অভিযুক্তের যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা হয়।”