শুভঙ্কর বসু: রাজ্যের বিভিন্ন হোমগুলিতে আবাসিকদের টিকাকরণ নিয়ে কড়া নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta HC)। বয়স অনুযায়ী সব আবাসিককে অবিলম্বের টিকা দিতে হবে। বৃহস্পতিবার সেই নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন ও বিচারপতি সৌমেন সেনের ডিভিশন বেঞ্চ। সেইসঙ্গে হোমগুলির পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিচারপতিরা।
গত বছর করোনার (Coronavirus) প্রকোপ দেখা দিতেই হোমগুলিতে ভাইরাসের ছোঁয়াচ এড়াতে ও রাজ্যের মোট ৭১টি সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত হোমের সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) নির্দেশমতো স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছিল কলকাতা হাই কোর্ট। এরপর গত ২ জুন কোভিডে এক অনাথ শিশুর মৃত্যুর খবর পৌঁছয় আদালতের কাছে। এরপরই রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর ও শিশুকল্যাণ দপ্তরের প্রধান সচিবকে সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি হোম, চাইল্ড কেয়ার সেন্টার বা সিএনসিপিতে থাকা শিশুদের মানসিক ও শারীরিক অবস্থার বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। পাশাপাশি এই পরিস্থিতিতে তাদের কী ধরনের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে, তাও উল্লেখ করতে বলে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। হোমগুলির সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়েও তথ্য তলব করা হয়।
[আরও পডুন: রোগী দিব্যি বেঁচে, লেখা হল ডেথ সার্টিফিকেট! বিতর্কে লেকটাউনের হাসপাতাল]
সেইমতো হাই কোর্টে রাজ্য জানায়, ১৪ জুন পর্যন্ত রাজ্যের হোমগুলিতে ৩০ জন কোভিড আক্রান্ত হয়েছে। এই তথ্য জানার পর বয়স অনুযায়ী হোমের আবাসিকদের টিকাকরণের (Vaccination) ব্যবস্থার নির্দেশ দেয় আদালত। বয়স অনুযায়ী অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দায়িত্ব নিয়ে টিকা দিতে হবে সবাইকে। এমনই নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ।
[আরও পডুন: বাসে পা দিলেই এবার ১৫ টাকা, কোথাও ভাড়া দ্বিগুণ, ক্ষোভ বাড়ছে যাত্রীদের]
তবে হোমগুলির উন্নয়ন ও পরিকাঠামো নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন আদালত। বৃহস্পতিবার যে রিপোর্ট রাজ্যের তরফে জমা পড়েছে হাই কোর্টে, তা নিয়ে ডিভিশন বেঞ্চের মন্তব্য, রাজ্যের হোমগুলির উন্নয়নে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলোর অবস্থা বেহাল। হোমের জন্য বরাদ্দ অর্থও নয়ছয় হয়েছে কি না, এদিন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতিরা।
মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন এবং বিচারপতি সৌমেন সেনের পর্যবেক্ষণ, ‘‘রাজ্যের হোমগুলির কী অবস্থা! একটি হোমের নিচতলা বানাতে ৩.৪১ কোটি টাকা খরচ! তারপরেও হোমের পরিস্থিতি এমন কেন? সমস্ত রিপোর্ট জানাতে হবে রাজ্যকে।’’ বিচারপতি সেন প্রশ্ন তোলেন, ”হোম নির্মাণেও কোনও ‘কাটমানি চক্র’ কাজ করছে না তো?” রাজ্যের বাকি হোমগুলি কী অবস্থায় রয়েছে? এগুলি নির্মাণের জন্য কীভাবে টেন্ডার ডাকা হয়? এখনও পর্যন্ত কতগুলি টেন্ডার ডাকা হয়েছে? এসব রিপোর্ট সবিস্তারে আদালতে জমা দেওয়ার জন্য রাজ্যকে নির্দেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।