শুভঙ্কর বসু: এবার রাজ্যের বেসরকারি স্কুলগুলির আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিলের নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট (Calcutta HC)। ‘শিক্ষার অধিকার আইন ২০১২’ অনুযায়ী, বেসরকারি স্কুলগুলি লাভজনক সংস্থা নয়। এ ব্যাপারে শীর্ষ আদালতের নির্দেশিকা রয়েছে। সোমবার বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে বেসরকারি স্কুলের ফি সংক্রান্ত মামলায় রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্তর কাছ থেকে এমন বক্তব্য শোনার পরই স্কুলগুলিতে আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে জুলাই অবধি আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে হবে। এ ব্যাপারে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি কমিটি করারও প্রস্তাব দিয়েছে হাই কোর্ট। ওই কমিটি কাছেই স্কুলগুলিকে সমস্ত হিসাব দাখিল করতে হবে।
[আরও পড়ুন: ‘দিলীপের সঙ্গে কোনও দ্বন্দ্ব নেই, জোট বেঁধেই লড়ব’, জল্পনা ওড়ালেন মুকুল]
বেসরকারি স্কুলগুলিতে টিউশন ফি ছাড়াও অন্য বিভিন্ন খাতে পড়ুয়াদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নেওয়া হয়। এই মহামারীর সময় সেই বাড়তি টাকা নেওয়া বন্ধ হোক। এমনই দাবি জানিয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রায় ১৫ হাজার অভিভাবক। প্রাথমিকভাবে কল্যাণ ভারতী ট্রাস্ট (হেরিটেজ স্কুল), অশোকা হল স্কুল গোষ্ঠী, অ্যাডামাস ইন্টারন্যাশনাল এবং বিড়লা স্কুলকে পক্ষ করে জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের হয়। এরপর মোট ১১২টি স্কুলকে এই মামলায় যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
এই মামলার সূত্র জানা যায়, ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে পুরো ফি নেওয়া হলেও একাধিক বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীদের বেতন বকেয়া রয়েছে। স্কুলগুলি অবশ্য জানিয়েছিল, চুক্তিভিত্তিক কিছু কর্মীর বেতন বকেয়া থাকলেও স্থায়ী কর্মীদের কোনও বেতন বকেয়া নেই। এমনকি স্কুলের পরিকাঠামো ও শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের বেতন দিতেই ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ফি নেওয়া হয়ে থাকে। এর প্রেক্ষিতে স্কুলগুলিকে হলফনামা জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। সেই সঙ্গে ১৫ আগস্টের মধ্যে অভিভাবকদের বকেয়া ফি-র ৮০ শতাংশ মেটাতে বলেছিল ডিভিশন বেঞ্চ। এরপর আদালতের নির্দেশমতো এরপর একাধিক স্কুলই বিষয়টি নিয়ে হলফনামা জমা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে রাজ্য আগেই আদালতে জানিয়েছিল, মহামারী পরিস্থিতি চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে একাধিক বিজ্ঞপ্তি জারি করে বেসরকারি স্কুল গুলিকে ফি বৃদ্ধি থেকে বিরত থাকা ও ফি ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এদিন মামলার শুনানি চলাকালীন অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানান, বেসরকারি স্কুল গুলি লাভজনক সংস্থা নয়। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা রয়েছে। রাজ্য শিক্ষার অধিকার আইন ২০১২’ স্কুলগুলি পরিচালনার জন্য একটি ‘ট্রাস্ট’ বা ‘সোসাইটি’ গঠন প্রয়োজন। স্কুলের পরিকাঠামো ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের বেতন সংক্রান্ত বিষয়গুলি ওই ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ার কথা। এমনটা না করলে ওই আইনের ১৮ নম্বর ধারা অনুযায়ী স্কুলগুলির রেজিস্ট্রেশন বাতিল হওয়ার কথা।
[আরও পড়ুন: করোনাকে হেলায় হারিয়ে হাসপাতালেই তেরঙ্গা তুললেন ৯৪ বছরের ‘ফাদার’]
তাঁর এই সওয়ালের পর চলতি সময়ে স্কুলগুলির আয়-ব্যয়ের তথ্য খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয় বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যর ডিভিশন বেঞ্চ। ডিভিশন বেঞ্চে জানিয়ে দেয়, যেসব স্কুল গুলির অডিট প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে, তারা জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিল করবে। যেসব স্কুলে অডিট প্রক্রিয়া এখনও হয়নি অডিটর বা চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট নিয়োগ করে সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে ও হিসাব দাখিল করবে। এ ব্যাপারে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়ার কথাও জানিয়েছে আদালত। ওই কমিটিকেই বিষয়টি যাচাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হবে।
The post লকডাউনেও বাড়তি ফি, বেসরকারি স্কুলের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিতে কমিটি গড়ার নির্দেশ আদালতের appeared first on Sangbad Pratidin.