shono
Advertisement

বুকে ‘রাক্ষসের মাথা’! সফল অস্ত্রোপচারে মহিলার জীবন ফেরাল কলকাতা মেডিক্যাল

মাথা সোজা করতে পারেননি টানা ৩৬৫ দিন।
Posted: 01:09 PM Apr 02, 2021Updated: 09:45 PM Apr 02, 2021

অভিরূপ দাস: দেখতে বীভৎস। আকারে প্রকাণ্ড। এমনই দানবাকৃতি মাংসপিণ্ড ঝুলছিল বুক থেকে। সাড়ে তিন কেজিরও বেশি ওজনের সেই মাংসপিণ্ডর জেরে কুঁজো হয়ে গিয়েছিল শরীর। মাথা সোজা করতে পারেননি টানা ৩৬৫ দিন। ষাট ছুঁইছুঁই পূর্ণিমাদেবীর শাপমোচন হল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে (Calcutta medical College)। এক বছর পর গোটা দুনিয়াকে সোজা দেখলেন তিনি।

Advertisement

স্তনে টিউমার হয়েছিল আগেই। বছর চারেক আগে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে সেই স্তন কেটে বাদ দেওয়া হয়। সেই কাটা স্তনের জায়গাতেই ফের টিউমার। চিকিৎসা পরিভাষায় এমন মাংসপিণ্ডকে বলা হয় ম্যালিগন্যান্ট ফিলোডস টিউমার। ২০২০ সালের লকডাউনের সময়ই তা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পৌঁছয়। হাঁটাচলা করা দূর অস্ত। টিউমারের চাপে শুয়ে থাকতে হত। জেলা হাসপাতালে জটিল এই অস্ত্রোপচার সম্ভব নয়। দ্রুত ওই রোগীকে রেফার করা হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। করোনা আবহে কলকাতায় আসা সম্ভব ছিল না। বাস-ট্রাম বন্ধ। তার উপর ওই সময় আচমকাই স্বামী মারা যান পূর্ণিমাদেবীর।

[আরও পড়ুন: ‘২০২৪এ কঠিন লড়াই, বারাণসী সামলান’, মোদিক নিশানা করে ইঙ্গিতবাহী টুইট তৃণমূলের]

পিছোতে থাকে চিকিৎসা। এদিকে টিউমারটি বাড়ছিল। বুকের মধ্যে যেন একটা রাক্ষসের মাথা। ওজনের ভারে চলাফেরা করাই মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অবশেষে ২০২১-এর নিউ নর্মাল আবহে সেই টিউমার বাদ দিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্রেস্ট এন্ডোক্রাইন বিভাগ। দৈত্যাকার ওই মাংসপিণ্ড বাদ দেওয়ার পরেই কাজ শেষ হয়নি। সম্পূর্ণভাবে তাকে নিকেশ করা গিয়েছে কি না তা জানতে প্রয়োজন ছিল বায়োপসি রিপোর্টের। কারণ, টিউমারটি যদি সামান্য অংশও লেগে থাকত, সেখান থেকে ফের গজাত রাক্ষুসে মাংসপিণ্ড। বায়োপসি রিপোর্ট পেয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরেও শুরু হয় পরবর্তী প্রক্রিয়া।

পেল্লায় ওই মাংসপিণ্ড বাদ দেওয়ার পর বুকে গভীর এক গর্ত তৈরি হয়। সেই গর্তটা ভরাট করাই ছিল চ্যালেঞ্জ। প্রথমে পেট থেকে অনেকটা মাংস নিয়ে গর্তের কিছুটা ভরাট করা হয়। এই অস্ত্রোপচারের নাম ভি র‌্যাম ফ্ল্যাপ। এই ধরনের ফ্ল্যাপে তিনটে স্তর। ত্বক, সাবকুটেনাস চর্বি আর আর পেশি দিয়ে তৈরি হয় এই তিনটে স্তর। সেই ফ্ল্যাপ দিয়েও গর্ত পূরণ না হওয়ায় পিঠ থেকেও নিতে হয় এক খাবলা মাংস। এ অস্ত্রোপচারের নাম এলডি ফ্ল্যাপ বা ল্যাটিসিমাস ডরসি ফ্ল্যাপ।

সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্রেস্ট এন্ডোক্রাইন বিভাগের প্রধান ডা. ধৃতিমান মৈত্র। তিনি জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ অস্ত্রোপচার করতে লেগেছে প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা। মোট তিনটি পর্যায়ে হয়েছে এই অস্ত্রোপচার। প্রথম পর্যায়ে দৈত্যাকার টিউমারটি কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে। বায়োপসি করা হয়েছে তারপর। এরপর পেট থেকে মাংস নিয়ে ক্ষতস্থান পূরণ। এবং তৃতীয় পর্যায়ে পিঠ থেকে মাংস নিয়ে গর্তপূরণ। চিকিৎসকের কথায়, “টিউমারটা বাদ দিলেই কাজ শেষ হত না। লক্ষ্য রাখতে হয়েছে টিউমারের ছিটেফোঁটাও যেন আর শরীরে না থাকে। তাহলে সেই জায়গা থেকে আবার গজাত টিউমার।”

[আরও পড়ুন: অ্যালার্জি থাকলেও নেওয়া যাবে করোনার টিকা, তবে মানতে হবে সতর্কতা]

গোটা অস্ত্রোপচারে চিকিৎসক টিমে ছিলেন ডা. শতপ্রতু বর্মন, ডা. হেমাভ সাহা, ডা.অন্তরীপ ভট্টচার্য, ডা. অন্বেষ বিশ্বাস, ডা. শশী। ডা. মৈত্র জানিয়েছেন, বুকের গর্ত পূরণ করতে দু’টি ভিন্ন ভিন্ন জায়গার মাংস কেটে তা পূরণ করা অত্যন্ত জটিল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement