শাহজাদ হোসেন, ফরাক্কা: টানা ১৯ ঘণ্টা আয়কর তল্লাশি। সূত্রের খবর, সাগরদিঘির বিধায়ক বায়রন বিশ্বাসের বাড়ি এবং বিভিন্ন অফিসে তল্লাশি চালিয়ে ৭০ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেন আধিকারিকরা। সোনার গয়নাগাটি এবং নথিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এদিকে, তল্লাশি চলাকালীনই অসুস্থ হয়ে পড়েন বায়রন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি তিনি।
বুধবার সকালে বায়রন বিশ্বাসের সামশেরগঞ্জের ধুলিয়ানের বাড়িতে হানা দেন আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের মোতায়েন করে তল্লাশি চলে বিধায়কের বাড়িতে। পাশাপাশি তল্লাশি চলে বায়রনের একটি স্কুল, হাসপাতাল, চায়ের কারখানা ও রাসায়নিক কারখানাতেও। বিধায়কের বাড়ি ও কারখানায় তল্লাশির সময় ভিতরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তার মধ্যেই রাতে তল্লাশি চলাকালীন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন বিধায়ক। কংগ্রেসের প্রতীকে জিতে কিছুদিন আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তিনি। বিধায়কের বাবা বাবর আলি জানান, ‘‘বায়রন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, বিধায়ক। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আয়কর দপ্তরের আধিকারিকরা হানা দিয়েছে।’’
[আরও পড়ুন: বুর্জ খলিফায় বাদশারাজ, ‘ডাঙ্কি’ ঝড়ে কাঁপছে বলিউডও, ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো দেখছেন কোন তারকারা?]
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘রাজনৈতিকভাবে তৃণমূলকে মোকাবিলা করতে না পেরে বিজেপি এজেন্সিকে লেলিয়ে দিচ্ছে। নিজেদের ঘাটতি এজেন্সি দিয়ে আক্রমণ করিয়ে পূরণের চেষ্টা করছে। ফলে যাঁরা উন্নয়নে সামিল হতে তৃণমূলে চলে আসছেন, তাঁদের ঘরে আয়কর, সিবিআই পাঠিয়ে দিচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছু নয়।’’ বায়রন বিশ্বাসের পরিবারের ব্যবসার মোট সাতটি জায়গায় আয়কর দফতরের আধিকারিকরা তল্লাশি চালান। এর মধ্যে সাগরদিঘির বিধায়ক বায়রন একটি বেসরকারি স্কুল ও হাসপাতালের ডিরেক্টর। বামেদের সমর্থনে কংগ্রেসের টিকিটে জেতার তিন মাসের মধ্যে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তবে রাজনীতির ময়দানে নামার অনেক আগে থেকেই তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।
মুর্শিদাবাদের রাজনীতিতে বিড়ি শিল্পপতি হিসাবে উল্লেখযোগ্য নাম বায়রন। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে কংগ্রেসের প্রতীকে দাঁড়িয়ে তৃণমূল প্রার্থীকে ২২ হাজার ভোটে হারান বায়রন। নিয়ম মোতাবেক তিনি নিজের আয়-ব্যয়ের খতিয়ান প্রার্থী হওয়ার সময় তুলে ধরেছিলেন কমিশনের কাছে। সেই হলফনামা থেকে দেখা যায় ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে বায়রনের আয় ছিল ৩৫ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। কিন্তু, ২০১৮-১৯ সালে তাঁর আয় ছিল ৬৯ লাখ ১৬ হাজার ১৪৯। এর পরবর্তী তিন অর্থবর্ষ অর্থাৎ ২০২১-২২ সাল পর্যন্ত তাঁর বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৪৩ লাখ ৫৯ হাজার ৭৪০, ৪০ লাখ ৪২ হাজার ১৭০ এবং ৫৪ লাখ ২৮ হাজার ৮৭০ টাকা। এছাড়াও তাঁর ব্যাঙ্কে ডিপোজিট, বিভিন্ন বিনিয়োগ, এনএসএসে বিনিয়োগ, গাড়ি, সোনা মিলিয়ে মোট সম্পদ ছিল তিন কোটি ৫৩ লাখ ১২ হাজার ১৩৮.৭৭ টাকা। পরিবারের তরফে জানানো হয়, আয়ের তথ্য দিয়েই আয়করের রিটার্ন জমা দেওয়া হয়। তারপরও দপ্তরের তরফে নথি চাওয়া হতেই পারে। তা তাঁরা দেবেন। অন্যদিকে বর্ধমানের ভাতারে একটি কাগজ মিলে এদিন হানা দেয় আয়কর দপ্তর।