নিজস্ব সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার: আলিপুরদুয়ার মহিলা ঋণদান সমবায় সমিতির ঋণদানের ক্ষেত্রেও এবার দুর্নীতির তথ্য পেল সিবিআই। শুক্রবার এই সমবায় সমিতি থেকে লোন নিয়েছিলেন এমন ১৯ জন ঋণগ্রহীতাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই কর্তারা। আর তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের পরই এই সমবায়ের ঋণ দুর্নীতি সম্পর্কে জানতে পারেন সিবিআই কর্তারা। এই সমবায় সমিতিতে গ্রাহকরা টাকা রেখে সেই টাকা ফেরত পাননি। পরে সেই দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই ও ইডি তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Ganguly)। কিন্তু সেই তদন্তে নেমে এবার সমবায় সমিতির ঋণেও দুর্নীতির তথ্য পেল সিবিআই।
জানা গিয়েছে, এদিন জিজ্ঞাসাবাদের পর সিবিআই (CBI) কর্তারা জানতে পেরেছেন সমবায় সমিতিতে জমা টাকা থেকে পছন্দমতো ঋণ দিতেন সমবায়ের কর্তারা। শুধু তাই নয় ঋণগ্রহীতার নামে বেশি অর্থ লোন মঞ্জুর করিয়ে বাড়তি টাকা নিজের পকেটে পুরতেন সমবায়ের কর্তারা। বাকি টাকা ঋণগ্রহীতাকে দেওয়া হত। ঋণগ্রহীতা যে পরিমান অর্থ হাতে পেতেন তার থেকে অনেক বেশি টাকা তার নামে রেজিস্ট্রারে তুলে রাখা হত। অনেক ক্ষেত্রে ঋণ নেওয়ার জন্য ক্লার্ককে কমিশন পর্যন্ত দিতে হত।
[আরও পড়ুন: লোকসভা ভোটের আগে নয়া ট্রেন পেল উত্তরবঙ্গ, X হ্যান্ডলে ঘোষণা সাংসদ সুকান্তর]
এই সমবায় থেকে মাত্র ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন সূর্য নগরের বাসিন্দা রাজু সাহ। সেই টাকা তিনি শোধও করেছিলেন। কিন্তু রাজু সাহার নামে ৩ লক্ষ টাকা ঋণ রেজিস্টার করা রয়েছে। এদিন রাজু সাহাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই কর্তারা। আর জিজ্ঞাসাবাদের পর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে রাজুর। তিনি বলেন, “আমার মায়ের এই সমবায় সমিতিতে ৬০ হাজার টাকা ফিক্সড ডিপোজিট ছিল। সেই ফিক্সড ডিপোজিটের বদলে আমি ৫০ হাজার টাকা লোন নিয়েছিলাম। আমার এলআইসির (LIC) কাগজও জমা দিয়েছিলাম। এখন সিবিআই কর্তারা বলছেন আমার নামে ৩ লক্ষ টাকা ঋণ দেখানো আছে। আমি এখন কী করব?”
[আরও পড়ুন: ইসলামিক স্টেটের শিকড় উপড়ে ফেলতে ৪১টি জায়গায় অভিযান NIA-এর, গ্রেপ্তার ১৫]
আলিপুরদুয়ার কোর্ট মোড়ে ব্যবসা করেন রতন কর। এই সমবায় সমিতি থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। ২০১১ সালে তিনি ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু রতনবাবুর দাবি কখনও ২০ হাজার আবার কখনো ৪০ হাজার এভাবে ভাগে ভাগে সর্বমোট ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ঋণ তুলেছিলেন তিনি। কিছু টাকা শোধও করেছেন। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে তিনি কোনও টাকা শোধই করিনি। এদিন জিজ্ঞাসাবাদে এটাও জানতে পেরেছেন সিবিআই কর্তারা যে ঋণ দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন আইন মানা হয়নি। এমনকী প্রয়োজনীয় নথিপত্রও রাখেননি সমবায়ের আধিকারিক ও কর্মীরা। ফলে এই সব টাকাই সমবায়ের কর্তা ব্যক্তিরা হরির লুটের মতো নানাভাবে লুট করেছে। এদিন দিনভর দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ চালান সিবিআই কর্তারা।