স্টাফ রিপোর্টার: কায়িক শ্রম দেওয়া ১০০ দিনের শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা মজুরি তিন মাস ধরে দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় সরকার। লাগাতার কেন্দ্রীয় বঞ্চনার জেরে পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে আগামী দিনে ১০০ দিনের শ্রমিকদের মজুরি বন্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অথচ প্রকল্প চালু থেকে কেন্দ্রের শর্তই রয়েছে, মজুররা কায়িক শ্রম দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই টাকা পাঠিয়ে দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় চরম বঞ্চনার এমনই তথ্য বুধবার বিধানসভায় জানান রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী পুলক রায়।
দপ্তরের বাজেট বিতর্কে অংশ নিয়ে জবাবি ভাষণে তাঁর তথ্য, “বছরের পর বছর ১০০ দিনের প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলা প্রথম হওয়ায় ঈর্ষান্বিত কেন্দ্রের বিজেপি সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে। অথচ নিয়ম মেনে ১৫ দিনের মধ্যে মজুরি পাঠানো দূরের কথা, তিন মাসেও পাওনা টাকা দিচ্ছে না।” গরিব মানুষের জন্য আবাস যোজনায় ২৩টি রাজ্যকে চলতি আর্থিক বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা দিলেও বাংলাকে এক টাকাও দেয়নি কেন্দ্র। বিধানসভায় মন্ত্রীর তথ্য, ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে এদিন পর্যন্ত ১০০ দিনে এক টাকাও দেয়নি কেন্দ্র। কিন্তু তবু রাজ্য সরকার নিজের সীমিত সামর্থ্যে ১০০ দিনের শ্রমিকদের পাওনা মেটাচ্ছে।
[আরও পড়ুন: রামপুরহাট কাণ্ডে নিহতদের পরিবারের পাশে রাজ্য, চাকরি ও আর্থিক সাহায্য ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর]
কেন্দ্রীয় বঞ্চনার পরিসংখ্যান দিতে গিয়ে পঞ্চায়েতমন্ত্রী বলেন, মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে কেন্দ্র চলতি অর্থবর্ষে ৬৪৫ কোটি টাকার অনুমোদন দিলেও এদিন পর্যন্ত রাজ্যকে এক কানাকড়িও পাঠায়নি। উলটে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বাংলার নানা উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অর্থবরাদ্দ বন্ধ করতে বলছেন বলে অভিযোগ করেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী। ন্যায্য পাওনা বা অনুমোদিত অর্থ মঞ্জুরে করতে নিষেধ করছেন বলে বিরোধীদের বিরুদ্ধে সরাসরি তোপ দাগেন পুলক। বলেন, “বিরোধীরা কেউই নিজের রাজ্যকে ভালবাসেন না। এরা সবাই অন্তরে ও বাইরে, দু’দিকেই প্রবল বাংলা বিরোধী ভূমিকা নিচ্ছেন।”
গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী এমন তথ্যবহুল আক্রমণ শানালেও বিজেপি বিধায়করা রামপুরহাট যাওয়ায় বিরোধী বেঞ্চ ছিল শূন্য। অবশ্য শাসকদলের তরফে সমীর জানা, নারায়ণ গোস্বামী, শ্যামল মণ্ডল, শওকত মোল্লা, শিউলি সাহা তথ্য তুলে গেরুয়া শিবিরকে আক্রমণ করেন। বামজমানায় পঞ্চায়েতের অর্থ কীভাবে পার্টির প্রচারে ব্যয় হত তার তথ্য তুলে ধরেন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না। কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার পাশাপাশি জবাবি ভাষণে এদিন গরিবদের বাড়ি তৈরির প্রকল্প আবাস যোজনা নিয়ে মারাত্মক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন পঞ্চায়েতমন্ত্রী।
পরিসংখ্যান উল্লেখ করে তিনি বলেন, “গরিবদের বাড়ির জন্য এবছরে প্রায় ১২ লক্ষ পরিবারকে টাকা দেওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রের। কিন্তু কাউকে এক টাকাও দেয়নি। এই খাতে রাজ্যের ন্যায্য পাওনা প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা।” ইতিমধ্যে ৫৬ লক্ষ ৮৬ হাজার ৪৮৩টি পরিবার আবাস যোজনা প্রকল্পে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। তার মধ্যে ৩৮ লাখ ৯৫ হাজার ৯৯১টি পরিবারের জব কার্ড ম্যাপিং হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের শর্ত মেনে এই প্রায় ৩৯ লক্ষ পরিবারই অর্থ পাওয়ার যোগ্য কিন্তু এক টাকাও দেয়নি দিল্লির বিজেপি সরকার।