দেশবাসীকে বিজেপির শোষণ অনুষঙ্গে মহাভারতের ‘চক্রব্যূহ’-র উপমা ব্যবহারে রাহুল গান্ধী বুদ্ধিমত্তা ও সূক্ষ্ম রসবোধের পরিচয় দিলেন।
মহাভারতের কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে চক্রব্যূহে অভিমন্যু-নিধনের কাহিনি তার অনৈতিকতা এবং কারুণ্যের জন্য এখনও আমাদের ধাক্কা দেয়। তার অন্তরবার্তা এখনও পুরনো হয়নি, ফুরিয়ে যায়নি। সোমবার নিজের বাজেট-ভাষণে সেই পুরাণকাহিনিকে বিরোধী দলনেতা এবং কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী যেভাবে আধুনিক মোচড় দিয়ে ব্যাখ্যা করে কাজে লাগালেন, তা প্রশংসাযোগ্য। তার মধ্যে সারবত্তা এবং বুদ্ধিমত্তা যেমন সংশয়াতীতভাবে উপস্থিত, পাশাপাশি রয়েছে সূক্ষ্ম এবং রুচিশীল হাস্যরস– ভারতীয় রাজনীতিতে যা এই সময়ে ক্রমবিলীয়মান।
রাহুল প্রথমেই মহাভারতের চক্রব্যূহের একটি নির্ভুল বর্ণনা দিয়ে বলেন, এই ব্যূহের মূলচক্রীরা দ্রোণাচার্য, কর্ণ, কৃপাচার্য, কৃতবর্মা, অশ্বত্থামা ও শকুনি। মোট ছ’জন। মহাকাব্যের উল্লেখ টেনে রাহুল সহজে তৈরি করলেন আমাদের সামনে তাঁর নিজস্ব কল্পনা ও ব্যাখ্যার একটি আধুনিক চক্রব্যূহ– দ্রোণাচার্যর মতো যার প্রাণপুরুষ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর রাহুল তাঁর চক্রব্যূহটি বৃত্তাকারে সমাপ্ত করেন আরও পাঁচ মহারথীর নাম করে: যাঁরা হলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত, এনএসএ প্রধান অজিত দোভাল, শিল্পপতি গৌতম আদানি ও মুকেশ আম্বানি। রে-রে-রব উঠল! রাহুল গান্ধী সংসদের নিয়ম-রীতি চুরমার করেছেন আদানি-আম্বানির নাম করে। স্পিকার ওম বিড়লা রাহুলকে বুঝিয়ে দিলেন কেন তাঁর বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ– যাঁরা এই সদনের সদস্য নন, তাঁদের নাম নিতে পারেন না কেউ।
[আরও পড়ুন: ‘সংসদে একবারও ভুমিধসের কথা বলেননি কেন?’, ওয়ানড় কাণ্ডে রাহুলকে নিশানা বিজেপির]
রাহুল জানতেন, এই প্রতিবাদ আসবেই। কিন্তু তিনি যা ড্যামেজ করার তা তো করে দিয়েছেন নামগুলি নিয়ে। এবার মুচকি হেসে তিনি বললেন, তাহলে কি ওঁদের ‘এ ওয়ান’, ‘এ টু’ বলতে পারি? আবার হাস্যরসের অাগমন ঘটল। যঁারা হাসার, হাসলেন। বাকিরা আবার গর্জে উঠলেন প্রতিবাদে।
রাহুল এবার বর্ণনাটি সমাপ্ত করলেন এই সময়ের নিয়তি-নির্ধারিত অভিমন্যুকে চক্রব্যূহের মাঝখানে অসহায়ভাবে ঢুকিয়ে দিয়ে। ভারতজুড়ে এই মুহূর্তের অভিমন্যু হল– দেশের যুবসমাজ, কৃষক, মহিলা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষ। এই অভিমন্যুকে হত্যা করার জন্যই ভারতজুড়ে রচিত হয়েছে ছয় মহারথীর চক্রব্যূহ। প্রাচীন চক্রব্যূহের এই আধুনিক ব্যাখ্যার যাথার্থ অনস্বীকার্য। এই ব্যাখ্যার সারবত্তা রাহুল গান্ধীর ভাষণে নিয়ে এল বোধ ও বুদ্ধির সরস মাত্রা। তবে রাহুল এখানে থামলেন না। তিনি বললেন, গালে-জিভ-দেওয়া একটি বাক্য: আমি সামান্য লেখাপড়া করে বুঝলাম, পুরাকালে চক্রব্যূহকে ‘পদ্মব্যূহ’-ও বলা হত।
[আরও পড়ুন: তিনদিনের সফরে ভারতে ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী, মোদির সঙ্গে করবেন দ্বিপাক্ষিক বৈঠক]
আর একটি বাক্যও খরচ করেননি উক্তির ব্যাখ্যায়। শুধু শেষে তাঁর এই পাঞ্চলাইন: এ-যুগের কৌরব বাহিনী যাকে ‘অভিমন্যু’ বলে ভুল ভেবেছে, সে আসলে অর্জুন, যে-জানে পদ্মব্যূহ ভেদ করার অব্যর্থ আবহ, আয়ুধ ও পদ্ধতি।