বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৬৪/৭ (তামিম ইকবাল ৭০, মুশফিকুর রহিম ৬১, বুমরাহ ২/৪০)
ভারত: ৪০.১ ওভারে ২৬৫/১ (রোহিত ১২৩*, কোহলি ৯৬*, মোর্তাজা ১/২৯)
ভারত নয় উইকেটে জয়ী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সকাল থেকেই ছিল বৃষ্টির ভ্রুকুটি। টস শুরুর আগে কয়েক পশলা ঢেলেওছিলেন বরুণ দেব। কিন্তু ম্যাচ পণ্ড করার জন্য সেটা যথেষ্ট ছিল না। ভারত-পাকিস্তান না পাকিস্তান-বাংলাদেশ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে এশিয়ার কোন দু’টি দল খেলবে? পাকিস্তান-ইংল্যান্ড ম্যাচের পর থেকেই এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল তামাম ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। প্রস্তুতি ম্যাচে এই বাংলাদেশকেই তো ২৪০ রানে হারিয়েছিলেন বিরাটরা। ৩২৫ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ৮৪ রানেই গুটিয়ে যান মুশফিকুর রহিমরা। কিন্তু প্রস্তুতি ম্যাচ আর প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ যে এক জিনিস নয়, সে ব্যাপারে ময়দানের নবাগত ক্রিকেটারটিও ওয়াকিবহাল। তার উপর বিপক্ষে যখন বাংলাদেশের মতো আনপ্রেডিক্টেবল দল, যাঁরা কিনা নিজেদের দিনে অতি শক্তিশালী দলকেও সাধারণ পর্যায়ে নামিয়ে আনতে পারেন। তাই ম্যাচের আগে থেকেই সতর্ক ছিলেন ক্যাপ্টেন কোহলির টিম ইন্ডিয়া। শেষ পর্যন্ত অবশ্য রোহিতের একাদশতম শতরান ও কোহলির দুর্দান্ত ইনিংসের সৌজন্যে হাসতে হাসতেই ম্যাচ বের করল ভারত। প্রমাণ করে দিল, এই বাংলাদেশ আর যাঁকেই হারাক, বিরাটদের সামনে পড়লে তাঁরা ‘কাগুজে বাঘ’-এই পরিণত হয়।
বার্মিংহামে মাঠের লড়াইয়ের অনেক আগে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় দু’দেশের সমর্থকদের মধ্যে কথার যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। ২০১৫ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের ম্যাচ হোক কিংবা ২০১৬-র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ, বাংলাদেশকে পরাস্ত করেছে ভারত। আর তাই বৃহস্পতিবার মিনি বিশ্বকাপের শেষ চারের লড়াইয়ে বদলা নিতে মুখিয়ে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু বড় মঞ্চে বিরাটদের অভিজ্ঞতার কাছেই হার মানতে হল ভারতের প্রতিবেশী দেশটিকে। কারণ ৫০ ওভারে ২৬৫ রান লক্ষ্যমাত্রা রোহিত-শিখর-কোহলি-যুবরাজ-ধোনিদের নিয়ে গড়া টিম ইন্ডিয়ার ব্যাটিং লাইন-আপের কাছে যে কিছুই না। উলটোদিকের বোলিং লাইন-আপেও যে বিষদাঁত ফোটানোর মতো তেমন কোনও নাম ছিল না। ফল যা হওয়ার তাই হল। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সামনে কার্যত কোনও প্রতিরোধই গড়ে তুলতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা।
রান তাড়া করতে নেমে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা এবং শিখর ধাওয়ান শুরু থেকেই দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন। মোর্তাজার বলে শিখর ৪৬ রানে (৩৪ বলে) আউট হয়ে গেলেও রোহিত নিজস্ব ঢংয়েই ব্যাটিং করতে থাকেন। সঙ্গে দোসর বিরাট কোহলি। একের পর এক বল বাউন্ডারি লাইনে আছড়ে পড়ছিল, আর বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন চুরমার হচ্ছিল। এদিন ভারতীয় ব্যাটিংয়ের সময় এক বারের জন্যও মনে হয়নি টিম ইন্ডিয়া কোনওভাবে ম্যাচটি হারতে পারে। মুস্তাফিজুর, মোর্তাজা থেকে শুরু করে রুবেল, তাসকিন কেউই দাগ কাটতে পারেননি। বলা হয়, রোহিত শর্মা বড় মঞ্চের খেলোয়াড়। আর এদিন ফের একবার তিনি প্রমাণ করলেন, ক্রিকেটবোদ্ধারা তাঁর সম্পর্কে কোনও ভুল কথা বলেন না। উলটোদিকে, চুপ ছিলেন না কোহলিও। এদিন ওয়ানডে ক্রিকেটে দ্রুততম ৮০০০ রানের গণ্ডিও পেরোলেন তিনি।
[গোপন ডেরা থেকে নেপালি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার গুরুংয়ের]
মেঘলা আকাশ, নতুন বল, সুইং বোলারদের জন্য আদর্শ পরিবেশ দেখেই প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বিরাট। নতুন বলে শুরুটাও সেরকমই করেছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার। প্রথম ওভারেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সৌম্য সরকারকে(০)। তারপরে সাব্বির রহমানকেও ব্যক্তিগত ১৯ রানের মাথায় প্যাভিলিয়নে ফেরান ভুবি। তবে জোড়া ধাক্কা সামলে দেন মুশফিকুর রহিম এবং তামিম ইকবাল। তৃতীয় উইকেটে দু’জন মিলে ১২৩ রান যোগ করেন।
এই দুই ব্যাটসম্যান যেভাবে খেলছিলেন তাতে গ্যালারিতে উপস্থিত বাংলাদেশি সমর্থকদের মনে হয়েছিল তাঁদের দলের রান তিনশোর গণ্ডি পেরিয়ে যাবে। পাশাপাশি টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় অঘটনটা এদিনই ঘটবে। কিন্তু তখনই এল কাহানি মে টুইস্ট। দলের নির্ভরযোগ্য বোলাররা যখন পারছেন না, তখন উইকেটের সন্ধানে কেদার যাদবকে নিয়ে আসেন ক্যাপ্টেন কোহলি। শেষ পর্যন্ত তাঁর এই স্ট্র্যাটেজিই কাজে আসে। প্রথমে ৭০ রানে তামিমকে আউট করে জুটিটি ভেঙে দেন। পরে মুশফিকুরের(৬১) উইকেটটিও তুলে নেন কেদার যাদব। ইনিংসের মাঝপথে যে লড়াইটা করেছিলেন তামিম-মুশফিকুর, সেটাকে চালিয়ে যেতে পারেননি বাংলাদেশের বাকি ব্যাটসম্যানরা। ফলে স্লগ ওভারে রান ওঠার গতিও কমে যায়। এর পাশাপাশি ভারতীয় বোলারদের মাপা বোলিংও প্রশংসার দাবি রাখে। শেষ ওভারগুলিতে মোর্তাজাদের হাত খোলার কোনও সুযোগই দেননি জসপ্রীত বুমরাহ ও ভুবনেশ্বর।
[OMG! ৯ বছর এই ব্যক্তির পেটে ছিল ব্লেড, ভাঙা টিউবলাইট!]
ভারতের অভিযান শুরু হয়েছিল পাকিস্তান ম্যাচ দিয়ে। শেষও হবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াই দিয়েই। ঠিক যেমনটা দেখা গিয়েছিল ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়। ওই বিশ্বকাপে দু’বারই শেষ হাসি হেসেছিলেন তৎকালীন ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। আর চলতি মিনি বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত বিরাট-১, সরফরাজ আহমেদ-০। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় ‘মওকা’তেও পাকিস্তানকে ছারখার করে পরপর দুবার ট্রফি ঘরে তোলাই এখন লক্ষ্য বিরাটদের।
The post রোহিত-কোহলির ব্যাটিং ঝড়ে স্বপ্নভঙ্গ বাংলাদেশের appeared first on Sangbad Pratidin.