এই বছরটা তাঁর ঝলমলে কেটেছে। ‘লাপাতা লেডিজ’-এর অভাবনীয় সাফল্য তো ছিলই, সঙ্গে জুড়েছে ‘অল উই ইম্যাজিন অ্যাজ লাইট’-এর কান উৎসব মাতিয়ে ফেরা। মারাঠি ইন্ডাস্ট্রি ছাড়িয়ে ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে এখন ছায়া কদমের নাম ছড়িয়ে পড়ছে আলোর মতোই। পায়েল কাপাডিয়া পরিচালিত ছবি যখন ভারতজুড়ে মুক্তি পেয়েছে, তখন গোয়ায় ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ ইন্ডিয়া (ইফি)-র ৫৫তম সংস্করণ উপলক্ষে উপস্থিত ছিলেন ছায়া কদম (Chhaya Kadam)। গজেন্দ্র আহিরে পরিচালিত মারাঠি ছবি ‘স্নো ফ্লাওয়ার’-এর স্ক্রিনিংয়ের জন্য পাঞ্জিমের আইনক্স-এর উৎসব চত্বরে এসে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর কাছে ধরা দিলেন অভিনেত্রী। শুনলেন প্রিয়ক মিত্র।
‘স্নো ফ্লাওয়ার’ ছবির জন্য নাকি আপনি একফোঁটাও মেকআপ করেননি?
ছায়া কদম- হ্যাঁ। আমি আমার কেরিয়ারের গোড়ার দিক থেকেই নানাভাবে মেক আপ ছাড়া ছবি করেছি। আমার শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা বলে, এতে সময়ও বাঁচে। এমনও দেখেছি, আলো নিভেছে সেটে, সেই সুবাদে কিছুটা মেক আপ করে নিতে হচ্ছে অভিনেতাকে। এমন চাপে থাকলে অভিনয় কোথাও না কোথাও ধাক্কাই খায়। একটা কথা অনেকেই বলে, ‘গ্ল্যামার বিমার হ্যায়’। আমি নিজেও কিছুটা তাতেই বিশ্বাসী, কিন্তু একথাও ঠিক, এই গ্ল্যামার দুনিয়াতেই আমাদের কাজ।
গজেন্দ্র আহিরে পরিচালিত এই ছবির শুটিং হয়েছে রাশিয়া, সাইবেরিয়ায়। কেমন ছিল অভিজ্ঞতা?
ছায়া কদম- অপূর্ব। আমার চরিত্র এখানে একজন বৃদ্ধার। সেটা ‘পুল অফ’ করতে পেরেছি, কারণ আমার পরিচালক, গজেন্দ্র আহিরে সেই পরিসরটা আমাকে দিয়েছিলেন।
‘অল উই ইম্যাজিন অ্যাজ লাইট’ অবশেষে দেশজুড়ে মুক্তি পাচ্ছে। কেমন লাগছে?
ছায়া কদম- লাগছে তো খুবই ভালো। আমার ফিল্ম কেরিয়ারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এবং আমি বলব, সবচেয়ে ইমোশনাল জার্নি ঘটেছে এই ছবির ক্ষেত্রেই। তবে আমি বলব, কান-এ যখন ছবিটা গিয়েছিল, অনেকের অনেক উৎসাহ দেখেছিলাম। এবার কিন্তু তাদের পরীক্ষা। হলে গিয়ে তারা ছবিটা দেখছে কি না, সেটাই এখন দেখার।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে যাওয়ার পর কোনও বদল এসেছে জীবনে?
ছায়া কদম- ব্যাপক। আমি আমার মা-কে হারিয়েছিলাম ঠিক ওখানে যাওয়ার আগেই। মায়ের শাড়ি পরে গিয়েছিলাম কান-এ। এটা কোনওদিন ভোলা যায়?
‘অল উই ইম্যাজিন অ্যাজ লাইট’ নারীত্বের উদ্যাপন করে। এই ধরনের ছবি কি ভারতে কম হয়? এমন চরিত্র কি আদতে দুর্লভ?
ছায়া কদম- না, একথা একেবারেই বলা যায় না। এই যেমন গজেন্দ্রজিই কবে থেকে নারীচরিত্র কেন্দ্রিক ছবি বানিয়ে চলেছেন। আমি তো অবাক হয়ে যেতাম, একজন পুরুষ হয়ে নারীচরিত্র এভাবে উনি লেখেন কী করে?
এক্ষেত্রে অবশ্য ‘লাপাতা লেডিজ’-এর কথাও বলতে হয়। সেই ছবি অস্কারের মঞ্চেও গিয়েছে...
ছায়া কদম- অবশ্যই! ‘লাপাতা লেডিজ’ দেশে যেভাবে সাড়া ফেলেছে, এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে যেভাবে পৌঁছেছে, তা সত্যিই গর্বের।
আপনি নিজে কি এই ধরনের ছবি, যা কিছুটা হলেও বলিউডের চেনা লিঙ্গকাঠামোর বাইরে, তেমন ছবিতে অভিনয় করতেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন?
ছায়া কদম- তেমনটা বলব না। আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের ছবিতে অভিনয় করেছি। ছায়া কদমের হয়তো একধরনের ছবি ভালো লাগে, কিন্তু আমি যখন অভিনেত্রী, তখন আমি হয়তো একটা কমেডি ছবিতেও অভিনয় করতে চাই, হয়তো একটা অ্যাকশন ছবিতেও অভিনয় করতে চাই। ওভাবে ঠিক বাছবিচার করি না।
'লাপাতা লেডিজ'-এ ছায়া কদম
আপনার অভিনীত ‘সাইরাত’ সারা দেশে আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল। আঞ্চলিক ছবির সীমানা কি ভাঙছে? আপনি বলিউডেও কাজ করছেন, কী মনে হচ্ছে?
ছায়া কদম- আমার কাছে আসলে ফিল্ম ফিল্ম-ই। বলিউড, মারাঠি, দক্ষিণ ভারতীয়, বাংলা- এইভাবে আলাদা করতে পারি না, চাইও না। তবে হ্যাঁ, ওটিটি আসার পরে হোক বা যা-ই হোক, অবশ্যই আঞ্চলিক ছবি অনেক বেশি পৌঁছচ্ছে মানুষের কাছে।
আপনি তো সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে এসেছেন?
ছায়া কদম- (হাসি) হ্যাঁ। এইটা বলতে পারেন, কান-এর পরে ঘটেছে। হঠাৎই সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকাটা একটু জরুরি হয়ে উঠেছে। আর অস্বীকার করে লাভ নেই, এখন আমাকে আরও একটু বেশি মানুষ চিনছে। যেমন, সম্প্রতি একটি অ্যাপ ক্যাব ডেকেছিলাম, দেখলাম গাড়িতে সংস্থার তরফ থেকে আমার জন্য একটি ফুলের তোড়া রাখা। অস্বীকার করব না, এগুলো ভালো লাগে খুবই। মন ভালো করে দেয়। তাই মানুষের কাছে থাকার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকছি খানিক।