সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: 'ছাবা'। যে সিনেমা কিনা মুক্তির পর থেকেই নানা কারণে চর্চার শিরোনামে। খুব কম দিনেই ৫০০ কোটির গণ্ডি টপকে বক্স অফিসে ঝড় তো তুলেই দিয়েছে, পাশাপাশি দর্শকদের মনস্তত্ত্বেও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে এই ছবি। তবে তাঁর প্রভাব যে এমন মারাত্মক সুদূরপ্রসারী হবে, তা সম্ভবত আগে কেউ আঁচও করতে পারেননি! এবার নাগপুরে সাম্প্রদায়িক হিংসার জন্য সেই সিনেমাকেই কাঠগড়ায় তুললেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবিস।

সমস্যার সূত্রপাত, মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের কবর সরানোর দাবি নিয়ে। "ঔরঙ্গজেবের কবর গুঁড়িয়ে দেওয়া হোক", মার্চ মাসের গোড়াতেই বিজেপি নেত্রী তথা প্রাক্তন সাংসদ নবনীত রানা মহারাষ্ট্র থেকে মুঘল সম্রাটের কবর সরানোর দাবি তুলেছিলেন। 'কাট টু' ১৭ মার্চ। ঔরঙ্গজেবের কবর সরানোর দাবিতে মহারাষ্ট্রে তুমুল বিক্ষোভ শুরু করেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। যার জেরে বর্তমানে হিংসার আগুনে জ্বলছে মহারাষ্ট্রের নাগপুর। কার্যত রণক্ষেত্র পরিস্থিতি। সোমবার দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা শহর। একের পর এক গাড়ি জ্বালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে অশান্তির জেরে জখম দশ জনেরও বেশি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কারফিউ জারি করা হয়েছে। শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়ণবীস। পুলিশের দাবি, গুজবের জেরেই দু' পক্ষের মধ্যে অশান্তি দানা বাঁধে। মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, "ভিকি কৌশলের 'ছাবা' সিনেমাটি আদতে জনগণের সামনে তথ্য তুলে ধরেছে। আর এহেন হিংসার ঘটনা পূর্ব-পরিকল্পিত।"
মঙ্গলবার মহারাষ্ট্রের বিধানসভায় দাঁড়িয়ে ফড়ণবিস বলেন, ছক কষেই এহেন দাঙ্গার ঘটনা ঘটানো হয়েছে নাগপুরে। কারণ উন্মত্ত জনতার লক্ষ্য ছিল, নির্দিষ্ট একটা গোষ্ঠী এবং তাঁদের ঘরবাড়ি ভাঙার দিকে। দেখেই মনে হচ্ছে এটা কোনও বড় ষড়যন্ত্র। আসলে ভিকি কৌশলের 'ছাবা' সিনেমাটি দেখেই মানুষের মনে ঔরঙ্গজেবের প্রতি ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে জনগণের উদ্দেশে বলছি, আপনারা প্রত্যেকে শান্ত থাকুন। মঙ্গলবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে ভিকি কৌশলের 'ছাবা'কেই নাগপুর হিংসার জন্য দায়ী করলেন দেবেন্দ্র ফড়ণবিস।
সূত্রের দাবি, সোমবার অশান্তির সূত্রপাত এক কট্টরপন্থী সংগঠনের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ, ওই বিক্ষোভে পবিত্র ধর্মীয় মন্ত্র লেখা একটি কাপড় জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এরপরই এলাকাজুড়ে অশান্তি ছড়ায়। সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে খবর, দু’টি জেসিবি-তে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও একাধিক গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে এলে, তাদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়। ইট-পাথরে ঘায়ে অন্তত ১৫ পুলিশ কর্মী জখম হয়েছেন। এরপরই এলাকাজুড়ে কারফিউ জারি করা হয়েছে। চলছে ধরপাকড়ও। ইতিমধ্যে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। তবে এখনও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। চলছে টহলদারি। সোমবার শান্তিবজায় রাখার আবেজন জানিয়ে দেবেন্দ্র ফড়ণবীস বলেন, "পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।" একইসঙ্গে নাগপুর পুলিশের তরফে অশান্তির কারণ হিসেবে গুজবকেই দায়ি করা হয়েছে। একই সুর সাংসদ নীতীন গড়কড়িরও।