shono
Advertisement
Bhanu Bandopadhyay

'বুকের ভিতরটা...', পর্দায় শাশ্বতকে দেখে চমকে উঠেছিলেন ভানুকন্যা বাসবী

বাবার কোন কোন স্মৃতি ফিরল 'যমালয়ে জীবন্ত ভানু' দেখে? একান্ত সাক্ষাৎকারে জানালেন তিনি।
Published By: Suparna MajumderPosted: 06:52 PM Nov 15, 2024Updated: 08:55 PM Nov 15, 2024

'যমালয়ে জীবন্ত ভানু' দেখে কেমন লাগল? সিনেমার কোনও মুহূর্ত আপনাকে সবচেয়ে বেশি নস্ট্যালজিক করল? শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে বাবার ভূমিকায় দেখার অনুভূতি কেমন? একান্ত সাক্ষাৎকারে সুপর্ণা মজুমদারকে জানালেন কিংবদন্তি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা বাসবী ঘটক বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবার নানা স্মৃতিকথাও শোনালেন তিনি।

Advertisement

'যমালয়ে জীবন্ত ভানু' দেখলেন? কেমন লাগল সিনেমা?
প্রিমিয়ার শোতেই দেখলাম। প্রথমেই 'যমালয়ে জীবন্ত মানুষ' ছবিটাকে মন থেকে মুছে ফেলতে হবে। হ্যাঁ, সেই সিনেমার অনেক সিন আছে, অনেক কথা মনে পড়ল। আমার সবচেয়ে বেশি যেটা ভালো লেগেছে যে এখন তো হাসির ছবি খুব কম হয়, এই ছবির মধ্যে হাসি রয়েছে এবং এটি একটি পারিবারিক ছবি। মানে পরিবারের সমস্ত সদস্যদের নিয়ে দেখা যায়। আমার তো বেশ ভালো লেগেছে। আমি খুবই উপভোগ করেছি।

শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে বাবার ভূমিকায় দেখার অনুভূতি কেমন?
ভীষণ ভালো। অপু (শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়) আসলে এত ছোটবেলা থেকে আমার বাবাকে দেখেছে এবং এতই ঘনিষ্ঠতা ছিল। অপুর হাঁটাচলা, কথা বলা... ও এমনিতেই এত ভালো অভিনেতা যে আমার আর আলাদা করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। দর্শক সেটা জানেন। তবে, একেক জায়গায় খুবই মিল ছিল। অসম্ভব ভালো। মানে ও (শাশ্বত) ছাড়া আমি আর কাউকে দেখতে পারি না।

সিনেমার কোনও মুহূর্ত আপনাকে সবচেয়ে বেশি নস্ট্যালজিক করল?
অপু যখন প্রথম আসে সেই সিনটা। আমি তো শুরু থেকেই অপেক্ষা করছিলাম কখন দেখাবে। প্রথম দিকটায় তো অম্বরীশকে নিয়ে অনেকটা ছিল তার পরই অপু আসে। যেই ওকে প্রথম দেখাল বুকের ভিতরটা ধপ করে উঠল। অদ্ভূত একটা অনুভূতি তো হয়ই। 'যমালয়ে জীবন্ত মানুষ'-এর একটা বিখ্যাত দৃশ্য দেখানো হয়েছিল।

অনুরাগীদের কাছে তিনি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়। 'মাসিমা মালপো খামু'। আপনার কাছে বাবা। কেমন মানুষ ছিলেন?
সকলের বাবা যেমন হয়, আমার বাবাও তেমনই ছিলেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের বাবা ঠিক যেমন, একদম সেরকম। কোনও পার্থক্য নেই। অনস্ক্রিন তিনি হলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, অফস্ক্রিন হলেই আমার বাবা।

ছবি: সংগৃহীত

শোনা যায়, পর্দায় তাঁর বাঙাল ভাষার জনপ্রিয়তা থাকলেও তিনি বাড়িতে অন্যভাবে কথা বলতেন?
মায়ের সঙ্গে উনি পূর্ববঙ্গের ভাষাতেই কথা বলতেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কোনওদিন বলেননি। আসলে এটা লোকেরা না খুব ভুল করে ফেলে, বাবার কিন্তু প্রচুর ছবি রয়েছে এদেশের ভাষায়। বাবা যদি তিনশো ছবি করে থাকেন, তার অর্ধেক বা অর্ধেকের বেশি কিন্তু এদেশের ভাষায়। অবশ্যই বাঙাল ভাষাটাকে জনসমক্ষে মানে শিল্পজগতের মাধ্যমে জনসমক্ষে নিয়ে আসার কৃতিত্বটা বোধহয় বাবারই, মানে আমার যতটুকু মনে হয়। তবে এমনি ভাষাতেও বাবা যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। কোনও অসুবিধা ছিল না।

কখনও ওনার স্টারডম প্রভাবিত করছে?
কখনই না। উনি খুব অপছন্দ করতেন। এর আগেই এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি। আমি তখনও বলেছি, বাবা আমাদের বোঝাতেন। তোমার বন্ধুর বাবারা যেমন একেকজন একেকটা পেশার সঙ্গে যুক্ত এটাও আমার একটা পেশা। আমার কাজ। এটার মধ্যে বিশেষত্ব কিছু নেই।

'যমালয়ে জীবন্ত ভানু'র প্রিমিয়ার শোয়ে। ছবি সৌজন্যে ইন্দ্রনীল রায়ের ফেসবুক পেজ।

গল্প হলেও সত্যি। ওনার চেলোর সুর আজও কানে বাজে...
বাবা নিজে খুব বেসুরো ছিলেন। গাইতে পারতেন না। কিন্তু সঙ্গীতের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন কারণ মা তো অসম্ভব ভালো গায়িকা (নীলিমা মুখোপাধ্যায়) ছিলেন। মায়ের তো প্রচুর রেকর্ড, প্রচুর ক্যাসেট, বাবার প্রচুর যাত্রাতে সুর দেওয়া। সুতরাং সঙ্গীত ব্যাপারটার সঙ্গে তো বাবা অসম্ভব জড়িত ছিলেন। শুধু মা নয়, সঙ্গীত জগতের সমস্ত লোকেদের সঙ্গেই বাবা জড়িয়ে ছিলেন। উত্তমকাকু যেমন ভীষণভালো গান গাইতেন, ভালো লিপও মেলাতেন। বাবা গান গাইতে না পারলেও অসম্ভব ভালো লিপ মেলাতেন। এটা হল অভিনেতাদের অধ্যাবসায়। যেটুকু বাজানো সেটা এতই চর্চা করেছেন যে লোকের কাছে সেটা স্বাভাবিক মনে হয়েছে।

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি ব্যাগে বোমা রাখতেন? সেই সময়ের কোনও গল্প বলেছেন আপনাকে?
প্রচুর গল্প শুনেছি। বাবার উপর দাদা যে বই লিখেছেন, তাতেও লেখা আছে। যতদিন ঢাকায় থেকেছেন, করেছেন। ঢাকা থেকে যখন কলকাতায় চলে আসেন, অভিনয় গতে ঢোকেন তখন তো আর কিছু করা সম্ভব হয়নি খালি বাবার রাজনীতিবিদদের সঙ্গে খুব যোগাযোগ ছিল। মানে দেখাসাক্ষাৎ, বন্ধুত্ব... সেটা তো ছিলই।

অন্যায় দেখলে নাকি ভানু বন্দ্যোপাধ্যা একেবারেই সহ্য করতে পারতেন না?
অসম্ভব সাহসী এবং অসম্ভব স্পষ্টবক্তা ছিলেন। যেকোনও জায়গায় অন্যায় দেখলে কোনও অগ্রপশ্চাৎ বিবেচনা না করে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। আমাদের বাপের বাড়ির পাড়া আর তাঁর পাশের পাড়ার মধ্যে ভয়ানক শত্রুতা ছিল। সারাক্ষণ লাঠসোঁটা নিয়ে মারামারি হোতো। এমনই দেখেছি, ওই পাড়া থেকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসছে আর বাবা সেটা থামাতে তার মধ্যে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এতে যে বাবার আঘাতও লাগতে পারত সেই চিন্তা কখনও করেননি। নিজের চোখের সামনে কোনও অন্যায় হতে দেবেন না।

ছবি: সংগৃহীত


সত্যেন্দ্রনাথ বসুর খুব প্রিয় ছাত্র ছিলেন সাম্যময় (ভানু) বন্দ্যোপাধ্যায়।
সত্যেন্দ্রনাথ বসু মহাশয়ের জন্মদিন প্রত্যেকবার বাবা-ই করতেন এবং মাকে নিয়ে, আমাদের নিয়ে প্রত্যেকবছর ওই দিনে অবশ্যই যেতেন ওনার বাড়িতে। এরকম সম্পর্ক ছিল, আর বাবা-ই বোধহয় একমাত্র ওনাকে সত্যেনদা বলে ডাকতেন। সেই অধিকারটা বোধহয় বাবারই একমাত্র ছিল। আর উনি তো অসম্ভব স্নেহ করতেন।

এখন কমেডি সিনেমার সংখ্যা কমেছে? আবার কখনও কখনও কি কমেডি ভাঁড়ামোয় পরিণত হচ্ছে?
নির্দিষ্টভাবে সেভাবে বলব না। তবে কিছু কিছু জায়গায় তো হয়েছে বটেই। আমার বাবার বৈশিষ্ট্য ছিল তিনি সংলাপের মধ্যে দিয়ে হাসাতেন। শারীরিক অঙ্গভঙ্গী সেভাবে করেননি। বা কথার মধ্যে কোনও অশ্লীলতা বা তেমন কিছু কোনওদিন ছিল না। সেটা তো আজকাল দেখা যায় যথেষ্ঠই। তবে ভালো কাজও হচ্ছে। একদম হাসির হয় না তা বলব না। তবে বেশি ভালোটা বোধহয় আগে হোতো। টোটাল কমেডি তো আর এখন দেখতে পাই না। কিন্তু একদমই যে হয় না তা বলব না। অনেক ছবিতে যথেষ্ট হাসির উপাদান থাকে। রিলস দেখা যায়, নাটকে দেখা যায়। একেবারেই চলে গিয়েছে, পুরো জিনিসটাই ভাঁড়ামো, সেটা আমি কখনও বলব না। একটু তো আছে। তুলনা করলে আছে।


'ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট', ইটারনাল জুটি। বর্তমান সময়ে এই দুই চরিত্রে কাদের দেখতে চাইবেন?
ভীষণ ভাবতে হবে। সমবয়সী কাউকে তো বলতে পারব না। তবে আমার ভীষণ পছন্দের হল খরাজ (খরাজ মুখোপাধ্যায়)। আর পরাণবাবু (পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়) তো আছেনই। কৌতুকের ব্যাপারে এঁদের দুজনকে আমার অসম্ভব ভালো লাগে।

ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় হিসেবে শাশ্বতদাকে তো দেখলাম। তাঁর সঙ্গে 'জহর অ্যাসিস্ট্যান্ট' কে হতে পারেন?
কঠিন প্রশ্ন করলে। খরাজকে ভাবতে পারি।

এই সময়ের কেউ হলে?
বলা মুশকিল। রুদ্রনীল ঘোষ ভীষণ ভালো অভিনেতা। আরও বেশ কয়েকজন আছেন।

বাবার নানা গল্প আপনি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন। আমাদেরও এমন কোনও গল্প বলুন।
আমি ফেসবুকে নিয়মিত এমন গল্প জানাচ্ছি। যেহেতু রিল তৈরি করছি। তা সেখানকার জন্যই তুলে রাখা ভালো।

'যমালয়ে জীবন্ত ভানু'র প্রিমিয়ার শোয়ে। ছবি সৌজন্যে ইন্দ্রনীল রায়ের ফেসবুক পেজ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • প্রিমিয়ার শোতেই 'যমালয়ে জীবন্ত ভানু' দেখেছেন কিংবদন্তি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যা বাসবী ঘটক বন্দ্যোপাধ্যায়।
  • ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় হিসেবে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে বড়পর্দায় দেখেই চমকে উঠেছিলেন তিনি।
Advertisement