সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঠাকুরপুকুর কাণ্ড নিয়ে তোলপাড় টলিউড। টিআরপি তালিকায় ‘ভিডিও বৌমা’র ঝকঝকে মার্কশিট দেখে নৈশপার্টিতে মজেছিলেন পরিচালক ভিক্টো এবং সেই সিরিয়ালের তিন অভিনেতা আরিয়ান ভৌমিক, ঋ এবং স্যান্ডি সাহা। সঙ্গে কার্যনির্বাহী প্রযোজক শ্রিয়া বসুও ছিলেন। রবিবার মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে এক ব্যক্তিকে পিষে দেওয়ার অভিযোগে আপাতত পুলিশি হেফাজতে ভিক্টো। বাকিরা ছাড় পেলেও এমন অনভিপ্রেত ঘটনা টলিপাড়ার কাজের ধরন এবং পরিবেশ নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। "সত্যি কি, রাতভর নেশা করে নেশগ্রস্ত হয়ে শুটিং ফ্লোরে যাওয়া যায়?", ঠাকুরপুকুর কাণ্ডের কথা উল্লেখ করে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুললেন পরিচালক শিলাদিত্য মৌলিক।

'সোয়েটার' খ্যাত পরিচালক টলিউডের আগে মুম্বই ইন্ডাস্ট্রিতেও কাজ করেছেন। একাধিক হিন্দি বিজ্ঞাপনী ভিডিও তৈরি তাঁর হাতে। অতঃপর দুই ইন্ডাস্ট্রির কাজের পরিবেশের পার্থক্য সম্পর্কে শিলাদিত্য ভালোই অবগত। এবার ঠাকুরপুকুর কাণ্ডের পর টলিউডের কাজের পরিবেশ এবং তারকাদের 'ডিসিপ্লিন' নিয়ে প্রশ্ন তুললেন পরিচালক। তাঁর কথায়, "এটা কিন্তু একটি পরাজয়ের গল্প। একই ইন্ডাস্ট্রিতে থাকার পরাজয়। একই মাটিতে জন্মে একই হাওয়ায় নিঃশ্বাস নেওয়ার পরাজয়ের গল্প। এমন হাড়হিম করা এই গল্প যে অনেক বড় বড় দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমাকেও হার মানবে। সোশাল কিংবা অ্যান্টিসোশাল সব মিডিয়াতে ফুটেজ এবং সিসি ক্যামেরা ফুটেজ ইত্যাদি দেখার পর, একটা প্রশ্ন বিগত দু' দিন ধরে খুব বিব্রত করছে আমাকে। কেউ দেখি সেটা নিয়ে কোনও কথাই বলছে না। আমি রোজ ভাবি আজ কেউ বলবে, কিন্তু বলছে না। আর আমি ভেবে মরছি- কেউ এটা দেখছে না? নিজেকে অনেকবার বারণ করে করে, আমার ফাইনালি আজকে 'ব্রেক ফেল' করল।"
এরপরই পরিচালকের সংযোজন, "আচ্ছা, ধরুন সেদিন ঠাকুরপুকুরের দুর্ঘটনাটা হয়নি। নির্দেশক, চ্যানেল প্রযোজক এবং অভিনেত্রী সারা রাত পার্টি সেরে ফিরছেন। এক সেকেন্ড, কোথায় ফিরছেন? ফ্লোরে। তাঁদের চলতি সিরিয়ালের শুটিং চলছে, তাই তাঁরা কাজে ফিরছিলেন। কারণ তাঁরা কোথাও না কোথাও এটা জানেন যে এভাবে 'কাজে ফেরা' যায়। নেশা করা যে কোনও ইন্ডাস্ট্রিতেই সমানভাবে বিরাজমান। আমার সিনেমার বাইরে বন্ধুদের থেকে এমন অনেক গল্প শুনেছি, যা শুনে বিশ্বাস হয়নি যে কর্পোরেট জীবন এতটা বন্য হতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু ব্যাপারে আমরা তাদের থেকে অনেক অংশে এগিয়ে রয়েছি। আর সেটা, এখানে রোজ হয়।" কীরকম?
সেই উদাহরণও পয়েন্ট সহযোগে লিখে দিলেন শিলাদিত্য মৌলিক। পরিচালক চোখে আঙুল দিয়ে মনে করিয়ে দিলেন, "একটা প্রচলিত সিরিয়ালের নির্দেশক সারা রাত নেশা করে সোজা কাজে চলে যেতে পারেন (ডান্স ফ্লোর থেকে একেবারে শুটিং ফ্লোর)? চ্যানেলের তরফে প্রযোজকও পারেন? অভিনেতা বা অভিনেত্রীরাও পারেন? শুট তাও বন্ধ হয় না। এক্ষেত্রেও হয়নি। চ্যানেল, তৎক্ষণাৎ এই নির্দেশককে পরিবর্তন করে অন্য আরেকজনকে কাজে লাগিয়ে দিয়েছেন। কেন? কারণ TRP কমানো যাবে না। এটা তো সারা বছর, বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। কারণ সমস্যাটা নেশা সংক্রান্ত একেবারেই না। সমস্যাটা ডিসিপ্লিনের। কারও মধ্যে এই নিম্নতম নিয়মানুবর্তিতা থাকলে এবং কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকলে সেদিন ঠাকুরপুকুরটা হয়ত হত না। কালকে সকালে শুটিং আছে, আজ যাই আবার একদিন বসছি- এটা বলা যায় না? এই সিরিয়ালের কিছু চেনা বন্ধু আছে, তাঁরা সেটা করেছেনও। কিন্তু এই গল্পের নায়ক নায়িকারা সেটা করেননি। কেনই বা করবেন? 'এই লাইনে তো এরকম কোনও নিয়ম নেই!'"
এবার টলিপাড়ার কাজের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুললেন পরিচালক। তাঁর কথায়, ঠিক সময় শুটিংয়ে না আসাটা, "এখানে ঐতিহ্যপূর্ণ। কখনও তারকাদের বীরত্বের কাহিনি শুনবেন, শুনতে পাবেন দেরি করে আসাটা যেন তাদের ট্যালেন্ট, যেখানে এই শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কেউ কাজ করতে এসেছেন, তিনি ভিড় বাজারে মানুষের উপর গাড়ি চালাবেন না তো কোথায় চালাবেন, রাস্তায়? আত্মীয়স্বজন লোকজনের কাছে- 'তোদের লাইনটা ভালো না' শুনতে শুনতে বুড়ো হয়ে গেলাম। কী করে কি ঠিক হবে, আমি জানি না। একে তাকে শাস্তি দেওয়া হোক। সত্যের জয় হোক।" শিলাদিত্যর এই ফেসবুক পোস্টে সমর্থন জানিয়েছেন অনেকেই।