স্টাফ রিপোর্টার: দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা তৈরির জন্য বিজেপি তথা সংঘ পরিবারের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ শুক্রবার আরও একবার সেই পথে হেঁটেই রাজ্যে ঐক্যের বার্তা দিলেন মমতা৷
মাদার টেরিজার সন্ত উপাধি লাভের পর ভ্যাটিকান সিটি থেকে ফিরে মুখ্যমন্ত্রীই চেয়েছিলেন কলকাতার মানুষের সঙ্গে সেই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার৷ মিশনারিজ অফ চ্যারিটিকে তাই একটি অনুষ্ঠান আয়োজনেরও অনুরোধ করেছিলেন৷ টেরিজার হাতে প্রতিষ্ঠিত ট্যাংরার ‘শান্তিদান’-এ এদিন তেমনই একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ টেরিজার একের পর এক কাজ, রোমের কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বললেন, “আমরা একসঙ্গে থাকলে কেউ আমাদের ছুঁতে পারবে না৷ আলাদা থাকলেই আক্রমণ আসবে৷” তিনি বলেন, “আমরা একটা যৌথ পরিবার৷ এটাই আমাদের বিশ্বাস৷ মানবিকতাই আমাদের ধর্ম৷ সবাইকে ভালবাসাই আমাদের বিষয়৷ মাদার টেরিজা এই সত্য বুকে নিয়ে কাজ করতেন৷ আমাদেরও সেটাই ধর্ম৷”
বক্তব্যের শুরুতেই ভ্যাটিকান সিটির অভিজ্ঞতা তুলে আনেন মমতা৷ সেখানেই মাদার টেরিজাকে সন্ত উপাধি দেওয়া হয়েছিল৷ মিশনারিজ অফ চ্যারিটির আমন্ত্রণে সেখানে সিস্টার প্রেমার সঙ্গে গিয়েছিলেন তিনি৷ এ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, যেখানে এমন আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের আমন্ত্রণ নিয়ে আমি ভাবিইনি৷ এদিনও অনুষ্ঠানে ছিলেন সিস্টার প্রেমা৷ ছিলেন আর্চ বিশপ ফাদার ডিসুজাও৷ তাঁদের সঙ্গে সেদিনের কথা প্রসঙ্গেই মমতা বলেন, “টেরিজা সন্ত হতে পারেন৷ কিন্তু ‘মা’ তিনি সকলের৷”
মমতার সঙ্গে তিনবার সাক্ষাৎ হয়েছিল টেরিজার৷ সে কথা স্মরণ করেই বলেন, “মানুষ যখনই বিপদে পড়ত, নিপীড়িত হত, হানাহানি-দাঙ্গার শিকার হত– তখনই চেষ্টা করেছি রাস্তায় নামতে৷ আর তখনই দেখেছি একা ‘মা’-এর মতো মাদার টেরিজা বুক দিয়ে আগলাচ্ছেন মানুষকে৷ তাঁর সেই আদর্শকেই সামনে রেখে আমাদের এগোতে হবে৷ তাঁর প্রেরণাই আমাদের শক্তি জোগায়৷” বলেন, আমার মা যখন মারা গেলেন, তাঁর কথা মনে করে আমি বৃদ্ধাশ্রমের মায়েদের জন্য কিছু করার কথা ভাবি৷ যখনই কেউ কোনও কাপড় দেন, আমি সেটা তুলে রাখি তাঁদের জন্য৷ শান্তিদানে এমনই সর্বহারা মানুষের সেবায় ব্রতী মাদার হাউজের সিস্টাররা৷ একইসঙ্গে শারীরিকভাবে অক্ষম শিশুদের নিয়েও কাজ করছে তারা৷ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, এমন আরও উদ্যোগ যদি কেউ গ্রহণ করেন, তাঁর পাশে থাকবে সরকার৷
পুজোর মরশুম শেষ হতেই খ্রিস্ট ধর্মের উৎসব আসছে বড়দিনে৷ শীতকালের অন্যতম বড় উৎসব এটি৷ মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে এই উৎসবকে যে যথেষ্ট পছন্দ করেন, সে কথা এদিন বললেনও৷ একইসঙ্গে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, এ বছরই টেরিজা সন্ত হয়েছেন৷ বড়দিনের আগে যা কলকাতার মানুষের জন্য অত্যন্ত গর্বের৷ বড়দিনে পার্ক স্ট্রিটে তাই বড়দিনের উৎসবও হবে মহা সমারোহে৷ অনুষ্ঠানে এদিন ছিলেন সাংসদ ডেরেক ও’ ব্রায়েন, মন্ত্রী জাভেদ খান, বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা প্রমুখ৷ মিশনারিজ অফ চ্যারিটির তরফ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে সন্ত টেরেজার একটি স্মারক তুলে দেওয়া হয়৷ মুখ্যমন্ত্রীও এখানকার সদস্যদের জন্য বিজয়ার উপহার নিয়ে এসেছিলেন৷ ঘুরে দেখেন মাদার হাউজের এই বাড়িটির বিভিন্ন অংশও৷ শেষে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন মাদার হাউজের সদস্যরা৷
The post মাদারের আদর্শে মমতার মুখে ঐক্যের বার্তা appeared first on Sangbad Pratidin.