সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুঃসংবাদটা এসেছিল ভোরে। দিনভর কাজের ব্যস্ততা সত্ত্বেও হৃদয়ের কর্তব্য ভোলেননি। মঙ্গলবার বিধানসভায় আলোচনার পর দুপুর গড়াতেই মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) চলে গেলেন সল্টলেকে, দলের দীর্ঘদিনের সহযোদ্ধা মুকুল রায়ের (Mukul Roy) বাড়ি। সদ্যই তাঁর স্ত্রী বিয়োগ হয়েছে। কৃষ্ণা রায়ের প্রয়াণের খবর পেয়ে কঠিন সময়ে তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন, প্রকৃত বন্ধুর মতো। ‘রাজদ্বারে শ্মশানে চ/ যস্তিষ্ঠতি স বান্ধব’ – চিরকালীন এই প্রবাদটিকে ফের নামিয়ে আনলেন কঠিন বাস্তবের মাটি।
করোনা (Corona Virus) পরবর্তী শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন মুকুল রায়ের স্ত্রী কৃষ্ণাদেবী। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর পরই তাঁকে বাইপাসের ধারের একটি নামী বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করা হয়। সেটা ছিল মে মাসের মাঝামাঝি সময়। দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরও তাঁর শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি না হওয়ায় চিকিৎসকরা জানান, ফুসফুসের অবস্থা বিশেষ ভাল নয়। তা প্রতিস্থাপন করা প্রয়োজন। সেইমতো চিকিৎসকদের পরামর্শে কৃষ্ণাদেবীকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় চেন্নাইতে (Chennai)। সেখানেই তাঁর ফুসফুস প্রতিস্থাপন হওয়ার কথা ছিল। চেন্নাইয়ের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোরে মৃত্যু হয় কৃষ্ণাদেবীর। মায়ের অন্তিম শয্যায় সঙ্গে ছিলেন পুত্র শুভ্রাংশু।
[আরও পডুন: বিধানসভায় মন্ত্রীর ঘরের বাইরে আগুনের ফুলকি, ছড়়াল আতঙ্ক]
কৃষ্ণাদেবীর অসুস্থতা যদিও রাজনৈতিক বিভেদ ভুলিয়ে মুকুল-শুভ্রাংশুদের কাছাকাছি এনেছিল তৃণমূল নেতাদের। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে হাসপাতালে তাঁকে দেখতে গিয়ে শুভ্রাংশুর পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছিলেন। সৌজন্যের এক নয়া নজির তৈরি হয়েছিল। এরপর ঘটনা পরম্পরায় সপুত্র মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে ফেরেন এবং তারপরই কৃষ্ণাদেবীকে চিকিৎসার জন্য চেন্নাই নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ।
[আরও পডুন: ক্রীড়াক্ষেত্রে আরও গুরুত্ব, রাজ্যে ‘খেলা হবে’ দিবস ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর]
আর মঙ্গলবার ভোরে তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়েই মুখ্যমন্ত্রী কর্তব্য ঠিক করে ফেলেছিলেন। দুপুরের পর বিধানসভা থেকে বেরিয়ে চলে যান সল্টলেকে (Salt Lake), মুকুল রায়ের বাড়ি। ঘরে গিয়ে কথা বলেন সতীর্থের সঙ্গে। বেরনোর সময় তিনি জানান, ”মুকুল দীর্ঘদিনের পরিচিত, ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ওঁর স্ত্রীর সঙ্গেও আমার ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল ছিল। এখন ওদের দুঃসময়। এসে দেখা করে গেলাম। আমরা সবসময়ে পাশে আছি। সব সামলে নিতে সময় লাগবে।” মমতাই জানান যে এখনও চেন্নাই থেকে কৃষ্ণাদেবীর দেহ কলকাতায় আসেনি। শুভ্রাংশু ব্যবস্থা করছেন। বুধবার দেহ এসে পৌঁছনোর কথা। কৃষ্ণাদেবীর দেহ নিয়ে যাওয়া হবে কাঁচড়াপাড়ায়, মুকুল রায়ের পৈতৃক বাড়িতে। তারপরই হবে শেষকৃত্য।