কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: পুজো যেমনই হোক, বড় বা ছোট, করোনা রেয়াত করছে না কাউকেই। লক্ষ বা কোটি, বাজেট যাই থাকুক, সেই বাজেটে গুটি গুটি পায়ে অনুপ্রবেশ কোভিড ১৯-এর। প্রায় প্রতিটি পুজো কমিটিকে তাদের নির্দিষ্ট বাজেট থেকে মাস্ক কেনার টাকা বরাদ্দ করতে হচ্ছে এবার। কেউ সাত শতাংশ তো কেউ দুই শতাংশের মতো অর্থ সরিয়ে রাখছে মাস্ক ও স্যানিটাইজার ক্রয় করতে। যাঁরা মাস্ক পরে আসবেন না তাঁদের মণ্ডপে প্রবেশ নিষেধ-এই নির্দেশিকার পর পুজো কমিটিগুলো নিখরচায় মাস্ক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভিড় কমানোর কথা যতই বলা হোক, প্রতিমা দর্শনে এসে যেন কাউকে নিরাশ হতে না হয় তাই এই ব্যবস্থা।
আজন্ম এমন পুজো দেখেনি কলকাতা। ওষ্ঠ যতই হোক রঞ্জিত, গালে যতই আভা ফুটে উঠুক, চিবুক যতই আকর্ষণীয় হোক না কেন, টিকলো নাক হাজারো আবেদন ছড়ালেও, এবার সবই রাখতে হবে মুখবন্ধের অন্তরালে। সৌন্দয প্রদর্শনে আংশিক নাস্তি। নিয়মটা এবছর এমনই তৈরি হয়েছে। মাস্ক ছাড়া এবছর পূজামণ্ডপ চত্বরে পা রাখতে পারবেন না ডাকসাইটে রূপবান-রূপসীরাও। অনেক দর্শনার্থী স্টাইল করে মাস্ক না পড়েই বেরোতে পারেন। কারও আবার পথে হারিয়ে যেতে পারে মুখবন্ধনি। তাঁরা কী করবেন? কলকাতার পুজো উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, নিরাশ হওয়ার কোনও বিষয় নেই। কারও মুখ ঢাকা না থাকলে কমিটির তরফ থেকে তাঁদের মাস্ক দেওয়া হবে। তার জন্য আলাদা করে কোনও পয়সা লাগবে না।
[আরও পড়ুন : পুজোয় বিশেষ নজর কলকাতার হোটেল, রেস্তরাঁয়, খাবার মজুত করলে কড়া ব্যবস্থা নেবে পুরসভা]
যেমন কলেজ স্কোয়ার পুজোর সাধারণ সম্পাদক বিকাশ মজুমদার বলেছেন, “বাজেটের প্রায় পাঁচ শতাংশ মাস্ক ও স্যানিটাইজারের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কেউ যাতে লাইনে দাঁড়িয়ে ফিরে না যান সেটাও দেখতে হবে। যদিও এমনিতেই এবার ভিড় কম হবে।” পুজো কমিটির পক্ষ থেকে দেওয়া তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, পুলিশের দেওয়া হিসেব ধরলে মোটামুটি কোটির অনেকটা উপরে গিয়ে দাঁড়ায় দর্শনার্থীর সংখ্যা। এই হিসেবটা অন্যান্যবারের। এবছর নিশ্চয়ই তা হবে না। তবুও দিনপ্রতি লক্ষাধিক সমাগম হতে পারে ধরে নিয়ে এগোচ্ছে কলেজ স্কোয়ার। আর সেই ভিড়ের অর্ধেক ধরে হিসেব করে মাস্কের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
একই অবস্থা সিংহী পার্কের। তারা মাস্ক ও স্যানিটাইজার উৎপাদক সংস্থাগুলির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে। ব্যানার, হোর্ডিং লাগিয়ে বিজ্ঞাপন করার জন্য কোনও অর্থমূল্য ধার্য না করে তার বদলে মাস্ক ও স্যানিটাইজার দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সংস্থাগুলিকে। তারা জানিয়েছে, ভিড় তাদেরও কোটির কাছাকাছি হয়। তবে এবার তাতে প্রায় ৯০% ঘাটতি হওয়ার সম্ভাবনা। পুজোর সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ মজুমদার জানিয়েছেন, “ভিড় কম হলেও যাঁরা মাস্ক ছাড়া আসবেন, তাঁদের বিনামূল্যে তা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। এর সঙ্গে স্যানিটাইজারের প্যাকেট দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে।”
বাবুবাগান পুজোর সাধারণ সম্পাদক সরোজ ভৌমিক। তিনি জানিয়েছেন, “বাজেটের প্রায় ৭% মাস্ক ও স্যানিটাইজার কেনার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। ঠাকুর দেখার সঙ্গে শারীরিক নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে বেশি টাকা এই খাতে ধার্য করেছি আমরা।”
সল্টলেকের এজে ব্লক পুজোর মিডিয়া কনভেনার মৈনাক দত্ত জানিয়েছেন, “পর্যাপ্ত মাস্কের ব্যবস্থা রাখা থাকছে। পুজো দেখতে এসে কেউ যাতে নিরাশ না হন সেদিকে খেয়াল রেখেছি।” বাগবাজার পুজোর সহ-সভাপতি অভয় ভট্টাচার্য্য বলেছেন, “করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার সব নেওয়া হবে। তার জন্য মোট বাজেটের চার শতাংশ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে”
[আরও পড়ুন : প্রতিমা নয়, করোনা আবহে এবার নমো নমো করে ঘটেই পুজো সারবে বেহালার এই ক্লাব]
যেরকমই হোক, যেমনই হোক। যেকোনও মণ্ডপ থেকে যে কেউ অন্তত একটি মাস্ক উপহার পেতেই পারেন এবার। হয়তো একাধিক মাস্ক একদিনে অর্জন করে ফেললেন কেউ কেউ। এমনও চিত্র দেখা যাবে পুজোর ক’দিন ধরে। অনেক উদ্যোক্তা এই বিষয়টি আঁচ করে হাসতে হাসতে বলেছেন, দেখা যাবে মুখেরটা পকেটে পুরে আমাদের থেকে একটা নতুন মাস্ক চেয়ে নেবে অনেক বাচ্চা-বাচ্চা ছেলেমেয়ে। মাস্ক সংগ্রহের এই খেলা হয়তো নবতম সংযোজন করোনা আবহে হতে চলা এই দুর্গাপুজোর।