‘ব্রিকস’ বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সেই বৈঠকে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা মিলে বিশ্ব-সন্ত্রাসের মোকাবিলায় সর্বসম্মতভাবে একটা রেজলিউশন গ্রহণ করেছেন। অন্যদিকে ভারত ও বাংলাদেশের কাছে সন্ত্রাস নিয়ে নতুন করে একটা শিরঃপীড়া উপস্থিত হয়েছে। এখন পরিস্থিতির মোকাবিলা করা থেকে সরে আসার প্রশ্নই নেই। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষাল
বারাক ওবামা তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে গিয়েছিলাম আমরা। মনমোহন সিং যখন ওবামার সঙ্গে তাঁর ওভাল অফিসে বৈঠক করছিলেন, তখন আমরা ওবামার বাগানে ঘুরছিলাম এবং সেখানে প্রস্ফুটিত বিভিন্ন রকম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম।
বৈঠক শেষ হওয়ার পর সেই ওভাল অফিসে ডাকা হল আমাদের। ওবামা এবং মনমোহন সিং- দু’জনে দু’টি পৃথক সোফায় পাশাপাশি বসে আছেন। আমাদের সাংবাদিক বন্ধুরা নানা রকম প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছিলেন ওবামার দিকে। বেশ যত্নসহকারে আমাদের সেইসব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন তিনি। আর সেই সময় আমি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলাম ওবামাকে। পরনে কালো স্যুট, কালো রঙের সুচালো বেশ চকচকে জুতো এবং তার সঙ্গে কালো মোজা। বলিষ্ঠ চোয়াল এবং বুদ্ধিদীপ্ত চোখ তাঁর। ওবামাকে দেখে আমার বেশ ভাল লেগেছিল। ওঁর সঙ্গে কথা বলে আমাদের মনে হয়েছিল যে, উনি খুব চিন্তাশীল মানুষ।
[আরও পড়ুন: তালিবানের শাসনে কেমন হওয়া উচিত ভারতের আফগানিস্তান নীতি?]
ওবামা সেদিন আফগানিস্তানের কথাও বলেছিলেন। বিশেষ করে, পৃথিবীজোড়া সন্ত্রাসের মোকাবিলা করার জন্য তাঁর যে মানসিক ইচ্ছা- তা সেদিন আন্তরিকভাবে স্পর্শ করেছিল, বলা যায়। তিনি বারবার বলছিলেন, বুশ প্রশাসনের ইরাক নিয়ে অত্যধিক ব্যস্ত থাকা, সেখানে কোটি কোটি ডলার খরচ করা, প্রচুর মার্কিন সেনার নিহত হওয়া- এ সবের ফলে আফগানিস্তানের উপর অগ্রাধিকার কম হয়েছে। এই মুহূর্তে আফগানিস্তান আসলে সন্ত্রাসের এপিসেন্টার।
ওবামা তাঁর আত্মজীবনীতে শুধু বুশ প্রশাসন নিয়ে লেখেননি, লাদেনের আমেরিকা আক্রমণের পরবর্তীকালে লাদেনকে নিহত করার যে অভিযান, আফগানিস্তানের যে যুদ্ধ, মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে সেগুলোকে বাস্তবায়িত করতে কত রকমের ঝড়-ঝঞ্ঝা তাঁকে সহ্য করতে হয়েছিল, সেসব কথাও তিনি নানাভাবে ব্যক্ত করেছেন। এমনকী, যখন সিচুয়েশন রুমে লাদেনকে খতম করার জন্য নীল নকশা তৈরি করা হচ্ছিল, তখন যে কত ঝুঁকি নিয়ে কাজটা করতে হয়েছিল, মার্কিন নৌ-সেনাবাহিনীকে কীভাবে কাজে লাগানো হয়েছিল- সেসব কথাও তিনি বলেছেন তাঁর আত্মজীবনীতে।
সেই আক্রমণের সময় হিলারি বলেছিলেন, তাঁর মনে হয়, এই আক্রমণে সফল হওয়ার সম্ভাবনা ৫১ এবং ৪৯ ভাগ। সেই সময় অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে, একেবারে কাঁটায় কাঁটায় সাফল্য অর্জনের রণকৌশল নিয়েছিল আমেরিকা। যার ফলে লাদেনকে হত্যা করা সম্ভব হয়েছিল। সেই অপারেশনে সফল হয়ে ওবামা যখন হোয়াইট হাউসে ফিরছেন, তখন সাদা মার্বেলের ‘লিনকন মেমোরিয়াল’-টি তিনি দেখছিলেন, যেখানে একটি শ্বেতশুভ্র পাথরের চেয়ারে বসেছিলেন স্বয়ং লিনকন। সেই দৃশ্য দেখতে দেখতে প্রায় বুড়ি-ছোঁয়া দূরত্ব থেকে ওবামার হেলিকপ্টারটি চলে গিয়েছিল। তিনি ওসামা বিন লাদেন-কে নিধনের সাফল্য নিয়ে ফিরছেন। এই বর্ণনার মধ্য দিয়ে ওবামার এক বেদনার উপলব্ধিও কিন্তু তাঁর আত্মজীবনীতে প্রকাশ পেয়েছে।
আফগানিস্তানে ওসামা বিন লাদেনের কোড নাম ছিল ‘Geronimo’। তাকে ধ্বংস করার জন্য মার্কিন নৌ-সেনা ‘Seal’-কে কীভাবে কাজে লাগানো হয়েছিল এবং বিশেষ করে অ্যাবটাবাদে যে রেড হয়েছিল, সেটাও কতটা ভয়ংকর ঝুঁকির কাজ ছিল- তা বারবার বলেছেন ওবামা। ওবামা লিখেছেন, এই কাজটি করতে গিয়ে তাঁর বারবার মনে হচ্ছিল, যদি কোনও কারণে তাঁরা ব্যর্থ হন, তাহলে পাকিস্তানের সঙ্গেও আমেরিকার সম্পর্কটা ভয়ংকর জায়গায় এসে দাঁড়াবে। তার ফলে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যেত যে, পাকিস্তানের সঙ্গেও আমেরিকাকে যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হত। সুতরাং, কাজটা প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ ছিল।
এখন, এত বছর পর, এই উদ্ভূত তালিবান সরকারের প্রেক্ষিতে যখন আমরা আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনা করছি, তখন মনে হচ্ছে, এরা হল রক্তবীজ, যারা কোনওভাবেই নিঃশেষ হয়ে যায় না। প্রায় তিন দশক ধরে এত দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ চালিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কী সাফল্য পেল? একটা সংগঠনকে শায়েস্তা করতে গিয়ে তো আর একটা সংগঠনের জন্ম হল!
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তানে সেনা অভিযান চালানো শুরু করেছিল, তখন তালিবানরা একটা লিফলেট সেখানে ছেড়েছিল। সেই সময় ‘নিউজ উইক’ পত্রিকায় সেই লিফলেট ছাপা হয়েছিল, যেখানে তালিবান বলেছিল, ‘তোমাদের কাছে ঘড়ি আছে, তোমরা ঘড়ি দেখে অভিযান চালাচ্ছ। আমাদের কাছে সময় আছে, আমরা অপেক্ষা করব। ভবিষ্যৎ বলবে, আমরা জিতব না হারব।’ এখন, এত বছর পর সেই লিফলেটটার কথাও মনে পড়ছে, যখন নরেন্দ্র মোদি ‘ব্রিকস’ সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদ দমনে গোটা পৃথিবীর কাছে আবেদন জানাচ্ছেন।
‘ব্রিকস’ বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং সেই বৈঠকে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা মিলে বিশ্ব-সন্ত্রাসের মোকাবিলায় সর্বসম্মতভাবে একটা রেজোলিউশন গ্রহণ করেছেন। কিন্তু যেভাবে তালিবান সরকার গঠন হল, তাতে মূল প্রশ্নটা দাঁড়াচ্ছে, এরপর তালিবান কোন পথে? কাবুল কোন পথে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর জন্য কতটা দায়ী? আগামী দিনে রাশিয়া, চিন, ইরান, তুরস্ক, পাকিস্তান সমবেতভাবে এই ভারত উপমহাদেশকে সত্যি সত্যি কতটা সমস্যায় ফেলতে পারে? আর ভারত সমস্যায় পড়লে, ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ, বিশেষ করে সবচেয়ে বড় বন্ধু বাংলাদেশের ভূমিকা কী হবে?
ওবামার আত্মজীবনীর আরও একটি ছোট্ট ঘটনা বলতে ইচ্ছে করছে। ওবামা যখন আফগানিস্তানে ‘আল-কায়েদা’ বাহিনীকে দমন করার জন্য বৈঠক করছিলেন, তখন তিনি এক কঠোর সন্ত্রাস-বিরোধী লাইন নিতে চাইছিলেন। অবশ্য ওবামা একটা জিনিস বুঝতে পেরেছিলেন- আফগানিস্তানের সরকারে এত দুর্নীতি, হামিদ কারজাইয়ের সরকারে টাকা-পয়সার যেভাবে ‘সাইফরনিং’ হচ্ছিল, তাতে কাবুলের সরকার ধরে রাখা কঠিন। এ কথাও ওবামা তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন।
তিনি সিআইএ-র প্রধান গেটস-কে বলেছিলেন “যেভাবে হোক, আমাদের সিভিলিয়ান এবং সামরিক- এই দু’পক্ষের মধ্যে এবং কারজাইয়ের সরকারের সঙ্গে সমন্বয়সাধন করে অভিযান চালাতে হবে।” তখন গেটস কিন্তু খুব উৎসাহিত বোধ করেননি। জবাবে তিনি বলেছিলেন, তালিবানের সঙ্গে বিরোধিতায় গিয়ে কী লাভ হবে? আসলে এই অভিযান চালিয়ে কতটা লাভ হবে সে ব্যাপারে তিনি সন্দিগ্ধ ছিলেন। একথাও ওবামা জানাচ্ছেন তাঁর আত্মজীবনীতে।
আসলে ওবামা বোঝাতে চেয়েছেন, প্রশাসনের মধ্যেও কত রকমের মত ছিল। ওবামা লিখছেন যে, ১৯৮০ সালে সিআইএ-র ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন গেটস, যিনি সোভিয়েত সেনার বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য আফগান মুজাহিদিনকে অস্ত্র দিয়েছিলেন। তার ফলে মুজাহিদিনের গোষ্ঠীর সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল এই সিআইএ প্রধানের। সিআইএ প্রধান হয়ে যাওয়ার পর ‘আল-কায়েদা’ বিরোধী অভিযানের ব্যাপারে তিনি আসলে কতটা বাস্তববাদী ছিলেন, তা নিয়েও কিন্তু ওবামা প্রশ্ন তুলছিলেন। এখন আমেরিকার প্রশাসন বা সিআইএ বা পেন্টাগন- এরা সবাই যে একই সুরে কথা বলে, একইভাবে কথা বলে, তা নয়। আমাদের দেশে যেমন বহুত্ববাদ আছে, ওদের দেশেও পুঁজিবাদ এবং বহুত্ববাদ আছে। যেজন্য সেখানেও বিভিন্নরকম কণ্ঠস্বর ছিল, যার মোকাবিলা করা ওবামার পক্ষেও বেশ কঠিন ছিল।
এই পরিস্থিতিতে, এখন যে তালিবান সরকার হয়েছে, তা নিয়ে ভারতকে দু’-মুখো রণকৌশল নিতে হচ্ছে। একদিকে যেমন আমাদের দেশের ভিতরে বা বাংলাদেশ, নেপাল-সহ প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে তালিবানিরা আইএসআই এবং চিনের সমর্থন নিয়ে কতটা সক্রিয় হবে, সেটা দেখার বিষয়। আবার এর পাশাপাশি এটাও ভাবতে হবে যে, তালিবান যখন সরকারে এসেছে, তখন তো তারা জঙ্গি নয়। সরকারের সঙ্গে তো আলাপ-আলোচনা করাটাই দস্তুর। আর সেটাই এখন করতে হবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-র কাছে গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছেন যে, তালিবানরা প্রকাশ্যে যতই মিষ্টি মিষ্টি কথা বলুক, তারা যতই বলুক যে, কাশ্মীর দ্বিপাক্ষিক বিষয়, তার মধ্যে নাক গলানোর ব্যাপারে তাদের কোনও উৎসাহ নেই- কিন্তু অন্তরালে থেকে হাক্কানি গোষ্ঠী যে আইএসআই-এর সাহায্য নিয়ে কাশ্মীরে এবং ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ছায়াযুদ্ধ চালাবে না, তার কোনও গ্যারান্টি নেই। এমনকী, পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘ সীমান্ত এবং শিলিগুড়িতে ‘চিকেন নেক’ বলে পরিচিত যে করিডর- সেখানে দীর্ঘদিন ধরে চিনেরও নজর রয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। একবার তো চিনের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দার্জিলিংয়ে গিয়েছিলেন বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে রীতিমতো হইচই পড়ে গিয়েছিল। তিনি কেন গেলেন, কী উদ্দেশ্যে গেলেন- তা নিয়ে সেই সময় অনেক জল্পনাকল্পনা হয়েছিল।
এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে এ-ব্যাপারে আরও তথ্য আসছে যে, অসমে বিভিন্ন জঙ্গি-গোষ্ঠী একত্রিত হচ্ছে। বাংলাদেশের জামাত এবং অন্যান্য যে গোষ্ঠীগুলো আছে, তারা আফগানিস্তানের তালিবানি সরকারের উত্থানে উৎসাহিত হয়ে আবার একজোট হচ্ছে। অসমের কিছু সংগঠন, বাংলাদেশের কিছু উগ্র সংগঠন সমবেতভাবে যদি বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে ঢুকে পড়ে, তাহলে তারাও নতুন করে ভারতের ভিতরে সন্ত্রাস চালানোর চেষ্টা করতে পারে- এমন খবরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে আছে। সেই কারণে এর মোকাবিলা করার জন্য ভারতকে এখন সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
অসমে ‘মজলিশ-ই-সুরা’ সংগঠিত হচ্ছে, ‘জেএমবি’ সংগঠিত হচ্ছে। ‘সুরা’ আরবি শব্দ, এর অর্থ হল আলোচনা। এর সঙ্গে ‘মজলিশ’ যুক্ত হলে শব্দবন্ধে এর অর্থ হয় ‘সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক কাউন্সিল’। জঙ্গি সংগঠন ‘জেএমবি’ এই কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে চলে। খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের আগে এই কমিটির সদস্য ছিল বত্রিশ জন, যাদের মধ্যে চারজন ভারতীয়। এখন আফগানিস্তানে তালিবান-রাজ কায়েমে এরা উচ্ছ্বসিত। কাবুলের পতনের পর ‘আল-কায়েদা’, ‘লশকর-ই তইবা’, ‘জইশ-ই-মহম্মদ’- এই জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো ‘জেএমবি’-কে সঙ্গে নিয়ে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ- এই দুই জায়গায় জঙ্গিরা তাদের সাংগঠনিক নেটওয়ার্ক বাড়ানোর চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের একজন জঙ্গি এবং ভারতের একজন জঙ্গির মধ্যে কিছু কথোপকথনকে ভারতীয় গোয়েন্দারা ডিকোড করেছে। নিম্ন-অসমের বরপেটা বা ধুবড়ি-র একটা গোপন আস্তানায় সেই বৈঠক হতে পারে বলে মনে করছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। ভারতীয় সংবাদপত্রে গোয়েন্দাদের এই খবরও সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এখন ভারত মনে করছে যে, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার তথা ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে একটা যৌথ রণকৌশল নেওয়া প্রয়োজন। দেশের ভিতরে যাতে কোনওরকমভাবেই এই উগ্র তালিবানি শক্তি বা হাক্কানি গোষ্ঠী মাথাচাড়া দিতে না পারে, সেই চেষ্টা করছে ভারত। তবে ভারত সরকার কতটা সমন্বয়সাধন করতে পারবে- সেটাও দেখার বিষয়।
আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক হাক্কানি গোষ্ঠীর হাতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাক্কানি গোষ্ঠীর প্রধান। তার বিরুদ্ধে রীতিমতো মৃত্যু পরোয়ানা আছে। এমন একজন আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? বিদেশ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রক যে হাক্কানি গোষ্ঠীর হাতে যায়নি, তাতে অন্তত একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে ভারত। তাহলেও, সব মিলিয়ে পাকিস্তান-বিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠীর তালিবান কোয়ালিশনে যতটা না দাপট, তার চেয়ে অনেক বেশি দাপট কিন্তু হাক্কানি গোষ্ঠীর।
[আরও পড়ুন: অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে ভারতে থাকা আফগান শরণার্থীরা]
পাকিস্তানের সঙ্গেও আমেরিকা কথা বলছে। ঠিক যেমন ভারত রাশিয়া এবং অন্যান্য সমস্ত দেশের সঙ্গে কথা বলছে। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল রাশিয়ার নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছেন। সুতরাং, আলাপ-আলোচনা চলছে। তার মধ্যে নরেন্দ্র মোদি ‘ব্রিকস’ সম্মেলনে সমস্ত দেশগুলোকে একজোট করে রাশিয়া, চিন, পাকিস্তান, ইরান এবং তুরস্ক যাতে ভারত-বিরোধী, বাংলাদেশ-বিরোধী কার্যকলাপে সক্রিয় না হয়- সেই চেষ্টা করছেন।
এক কথায় বলা যেতে পারে যে, একদিকে যে রকম আফগানিস্তানের ভিতরে একটা গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে, আবার অন্যদিকে ভারত ও বাংলাদেশের কাছেও কিন্তু সন্ত্রাস নিয়ে নতুন করে একটা শিরঃপীড়া উপস্থিত হয়েছে। এখন পরিস্থিতির মোকাবিলা করাটাই হল সভ্যতা। পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও তার মোকাবিলা করা থেকে সরে আসার কোনও প্রশ্ন থাকতে পারে না।