বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, ইন্দোর: দেশি ভোট। কিন্তু রমরমিয়ে তার পরদেশি প্রচার। যা দেখে চটে লাল কংগ্রেস (Congress) শিবির সোজা অভিযোগ ঠুকেছে নির্বাচন কমিশনের দরজায়।
ভোট প্রচারে সাবেকিয়ানা থেকে বেরিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই আধুনিক ডিজিটাল মিডিয়ায় জোর দিয়েছে পদ্মশিবির (BJP)। কমিশনের নানা ‘ডুৃ অ্যান্ড ডোন্টস’-এর ফ্যাকড়া এড়াতেই এহেন ডিজিটাল প্রচার কৌশল মোদি-শাহদের। সেই কৌশল মোতাবেকই মধ্যপ্রদেশে (Madhya Pradesh) এবারের বিধানসভা ভোটে ডিজিটালে প্রচারের উপর জোর দিতে নির্দেশ দিয়েছে ৬, দীনদয়াল মার্গের গেরুয়া শিবিরের সদর দপ্তর। সেই নির্দেশ মেনে বিশ্বের ২১টি দেশ থেকে ডিজিটাল মাধ্যমে বিজেপির প্রচার চলছে রাজ্যজুড়ে।
[আরও পড়ুন: ইন্ডিয়া জোটে ফাটল? জাতিগত জনগণনার সমর্থনে রাহুল, ‘বিশ্বাসঘাতক’, পালটা তোপ অখিলেশের]
প্রধান প্রতিপক্ষের এহেন অন্তর্জাল হানাদারিতে কিছুটা হলেও অপ্রস্তুত কমলনাথ-দিগ্বিজয় সিংরা। ভোটারদের ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ-ইনস্টাগ্রামের দেওয়ালে বা মোবাইলের স্ক্রিনে সারাক্ষণ ভেসে উঠছে মোদির মুখ আর ফলাও করে ভাজপার উন্নয়নের কাহিনি। স্বাভাবিকভাবেই চিরাচরিত মিটিং-মিছিল-ব্যানার-হোর্ডিংয়ের সাবেকি ভোটপ্রচারে যার মোকাবিলা করা অতীব দুরূহ কংগ্রেসের পক্ষে। তাই ভাজপার ডিজিটাল প্রচার নিয়ে বিরোধিতা করে কমিশনকে কড়া চিঠি দিয়েছে তারা। কংগ্রেসের প্রশ্ন, ভোটগ্রহণের ৪৮ ঘণ্টা আগে প্রচার শেষ হওয়ার যে নিয়ম, সেই সময়কালে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচার চালানো হলে কমিশন তা নিয়ন্ত্রণ করবে কীভাবে?
মধ্যপ্রদেশে ভোটের বাদ্যি বাজতেই মোদির মুখ থেকে হিন্দুত্বের জিগির তুলে সভা, মিছিল থেকে পোস্টার বা হোর্ডিংয়ের সাবেকি পদ্ধতিতে প্রচার চালাচ্ছিল গেরুয়া শিবির। প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসও প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়ায় বলীয়ান হয়ে পাল্লা দিচ্ছিল সে প্রচারে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ধুরন্ধর গেরুয়া শিবির আচমকা প্রচারের স্ট্র্যাটেজি পালটাতেই রাতারাতি গণ্ডাখানেক গোল খেয়ে যেতে হয়েছে কংগ্রেসকে। ম্যাচের স্লগ ওভারে যে এভাবে ডিজিটাল হানাদারির মুখে পড়তে হবে, তা হাত শিবির ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেনি।
[আরও পড়ুন: প্রয়াত ওবেরয় গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পৃথ্বী রাজ সিং, শোকপ্রকাশ মমতার]
রাজ্য কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘তাও হয়তো আমাদের সর্বভারতীয় সোশাল মিডিয়া এবং আইটি সেল তড়িঘড়ি মাঠে নেমে বিজেপির এই একতরফা ডিজিটাল আক্রমণের মোকাবিলা করতে পারত। কিন্তু ওরা যে বিস্তৃত ওয়ার ফ্রন্ট খুলে হানাদারি শুরু করেছে, তার মোকাবিলা করা রাতারাতি অসম্ভব। এজন্য দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি লাগে।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কংগ্রেস নেতার কথাটা সর্বাংশে সত্য! বিজেপির এই ডিজিটাল প্রচার শুধু তীক্ষ্ণতায় নয়, প্রসারের ব্যাপ্তিতেও ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে। শুধু রাজ্যের মধ্যে থেকে নয়, প্রচার চলছে বাইরের বিভিন্ন দেশ থেকে। রাজ্য বিজেপির বিদেশ সম্পর্কিত ডিজিটাল মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা সুধাংশু গুপ্তার কথা অনুযায়ী, সব মিলিয়ে ২১টি দেশ থেকে ধারাবাহিকভাবে দলের শুভানুধ্যায়ীরা এই প্রচার অভিযানে শামিল হয়েছেন।
[আরও পড়ুন: উত্তরকাশীতে সুড়ঙ্গ বিপর্যয়: আটকে বাংলার ৩ শ্রমিক, নাম-ঠিকানা প্রকাশ শুভেন্দুর]
সুধাংশু জানান, ‘‘মধ্যপ্রদেশের বহু মানুষ কর্মসূত্রে ও উচ্চ শিক্ষার জন্য আমেরিকা, ইংল্যান্ড, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ইতালি ও সৌদি আরবে বাস করেন। এছাড়া রয়েছেন অনাবাসীরা। এঁদের অনেকেই দলের কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে চেয়ে আবেদন করেন। তাঁরাই সোশ্যাল মিডিয়া মারফত পরিচিতদের মধে্য প্রচার চালাচ্ছেন। ২১টি দেশ থেকে ২৫৬ জন প্রবাসী ভারতীয়কে প্রচারের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফোন কল, হোয়াটস অ্যাপ ও মুহিমের মাধ্যমে প্রচার করছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারতের গুরুত্ব কতখানি বৃদ্ধি পেয়েছে সে কথা বলা হচ্ছে তাঁদের প্রচারে।’’
গেরুয়া শিবিরের এহেন ডিজিটাল ভোট প্রচার নিয়ে বিতর্ক দানা বেধেছে। রাজনৈতিক কারবারিদের ব্যাখ্যা, দেশের কোনও নির্বাচনে বিদেশিরা অংশ নিতে পারেন না। সেখানে বিদেশ থেকে কী ভাবে প্রচারে অংশ নেওয়া যায়? এই বিষয়ে কমিশন সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে বিপদ বাড়বে। কারণ, ডিজিটাল প্রচারে নিয়ন্ত্রণ না করলে বুথ পর্যন্ত প্রচার চলবে। ব্যালট বক্স পর্যন্ত ভোটারদের প্রভাবিত করার প্রক্রিয়া চলবে। যা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের শামিল। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে হয়েছে কংগ্রেস। দলের তরফে কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠিও দেওয়া হয়েছে বলে জানান মিডিয়া সেলের দায়িত্বে থাকা অজিত বেবেলে।