ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: অনাথ করে প্রার্থীদের ময়দানে ছেড়ে দেওয়া হবে না। আঘাত রুখতে জেলাভিত্তিক কমিটি করে পঞ্চায়েত ভোটে নামা হবে। প্রতি মুহূর্তে যার সঙ্গে ঢালের মতো যোগাযোগ থাকবে রাজ্য কমিটির। দলে তৈরি থাকবে দলের আইন ও কমিশন সেলও। বেগতিক পরিস্থিতি থাকলে অনলাইনে প্রার্থীর মনোনয়ন দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। তার জন্য রাজ্য প্রশাসনের কাছে এই প্রস্তাব রাখা হবে। প্রাথমিক এই রূপরেখাকে সামনে রেখেই জেলাস্তরে সম্মেলন সেরে মার্চের মধ্যে পঞ্চায়েতি রাজ সম্মেলন করতে চায় কংগ্রেস।
মঙ্গলবার কলকাতায় প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দপ্তর বিধান ভবনে জেলা সভাপতিদের নিয়ে বৈঠকে এই সংক্রান্ত করণীয় যাবতীয় নির্দেশ দিয়ে দিলেন পঞ্চায়েত কমিটির চেয়ারম্যান নেপাল মাহাতো। যদিও দলের ভারত জোড়ো যাত্রার বঙ্গ কর্মসূচিতে থাকার জন্য উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির কোনও সভাপতিই এদিন কলকাতার এই বৈঠকে ছিলেন না।
ভোটে জোট অথবা সমঝোতার দাবিও কয়েকজন জেলা সভাপতির তরফে বৈঠকে ওঠে। নেপাল জানিয়ে দিয়েছেন, যেখানে কংগ্রেস (Congress) শক্তিশালী, সেখানে কোনও সমঝোতা না করে কংগ্রেসই প্রার্থী দেবে। বিশেষ কোনও ক্ষেত্রে তৃণমূল স্তরে জোট বা সমঝোতা হবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নেবে প্রদেশ নেতৃত্ব। সেক্ষেত্রে জোট বা সমঝোতার রাস্তা কিছুটা খোলাই থাকছে বলে মনে করছেন দু’-একজন জেলা সভাপতি। সেখানে তৃণমূল ও বিজেপি-বিরোধী দল হিসাবে যারাই থাকবে তাদের সঙ্গে সমঝোতা করা হতে পারে বলে মনে করছেন ওই জেলা সভাপতিরা। এই সূত্রেই সিপিএমের সঙ্গে আবার সমঝোতার প্রসঙ্গ এসেছে। তবে তৃণমূল স্তর থেকে দু’-একটি রিপোর্ট এসেছে, যাতে কোনওভাবেই আইএসএফের সঙ্গে সমঝোতা করতে রাজি নন কেউই। কারণ হিসাবে তাঁরা সংখ্যালঘু ভোটের কথা জানাচ্ছেন। আইএসএফের সঙ্গে সংখ্যালঘু ভোট ভাগ করতে চায় না কংগ্রেস।
[আরও পড়ুন: চব্বিশের লোকসভা ভোটে বাংলায় ২৫ আসনে জেতার টার্গেট সুকান্তর, ভিন্ন মত দিলীপের]
তবে জোট বা সমঝোতা নিয়ে আলোচনার বদলে বুথস্তরে দলকে শক্তিশালী করার কথা বৈঠকে বারবার বলেছেন নেপাল। তাঁর কথায়, “সবার আগে প্রতি বুথে কর্মী থাকতে হবে। পতাকা আর প্রতীককে সামনে রেখে কংগ্রেসকে শক্তিশালী করতে হবে। সে কথাই বলে দেওয়া হয়েছে জেলা সভাপতিদের।” তাঁদের একইসঙ্গে নেপাল জানিয়েছেন, মুখে বড় বড় কথা নয়, হাতে-কলমে বুথের তথ্য নিয়ে কমিটি করে ভোটে নামতে হবে। জেলা সভাপতিদের প্রাথমিক টাস্কও বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশ, গত পঞ্চায়েত ভোটে কোন বুথে কোন প্রার্থী কত ভোটে জিতেছেন তার রিপোর্ট দিতে হবে। তার ভিত্তিতেই বুথ কমিটি কাজ করবে। এদিনের বৈঠকের নির্যাস নিয়ে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে বসবেন নেপাল। তার পর আরও এক দফায় নিজেদের মধ্যে বসে নিয়ে দলকে ভোটমুখী করার রূপরেখা চূড়ান্ত হবে।
তবে জোট বা সমঝোতা প্রসঙ্গে দলের এক কর্মী জানান, নেপালবাবু কখনওই জোটের পক্ষপাতি নন। তাঁর কথায়, “একুশের বিধানসভা ভোটের আগে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে প্রদেশ নেতৃত্বের ভারচুয়াল বৈঠকের মধ্যে তিনি সে কথা জানিয়েওছিলেন। রাহুল গান্ধীর পছন্দও হয়েছিল সে কথা। কিন্তু বাকি প্রত্যেকেই সিপিএমের হয়ে সওয়াল করেন। তাতে কিছুটা বিরক্ত হয়েই প্রদেশের উপর সিদ্ধান্তের ভার দিয়ে বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান রাহুল।”